মিয়াজান কবীর

  ১১ নভেম্বর, ২০২৩

একজন চিত্রশিল্পীর কথা

চিত্রশিল্পী এস.এম.শামসুদ্দিন ছবি : প্রতিদিনের সংবাদ

এস.এম.শামসুদ্দিন আমার অনেক দিনের বন্ধু। দৈনিক দেশ পত্রিকায় আমার সঙ্গে তার পরিচয় হয়। আমি রিপোর্টিংয়ে কাজ করি। আর শামসুদ্দিন ভাই চিত্রশিল্পী হিসেবে কাজ শুরু করেছিলেন। দৈনিক দেশ পত্রিকায় ‘কমলকলি’ নামে ছোটদের পাতা বের হতো। আমি মাঝে মাঝে কমলকলিতেও লিখতাম। শামসুদ্দিন ভাই সুচারুভাবে কমলকলির অঙ্গসজ্জা করতেন। লেখকের লেখার সঙ্গে তার হাতে আঁকা চিত্রগুলো সাদৃশ্যপূর্ণ হয়ে ওঠতো। দৈনিক দেশ বন্ধ হওয়ার পর তার সঙ্গে আমার যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। কোন এক সময় জানতে পারলাম যে শামসুদ্দিন ভাই বিসিকে চিত্রশিল্পী হিসেবে যোগদান করেছেন। এ কথা জানতে পেয়ে তার অফিসে গিয়ে দেখা করি। তিনি একজন বন্ধুবৎসল মানুষ। দীর্ঘদিন পর আমাকে পেয়ে খুশিতে আত্মহারা হয়ে পড়েন।এভাবে তার সঙ্গে আবার নতুন করে যোগাযোগ হয়।

শামসুদ্দিন ভাই একজন সহজ-সরল-শান্ত প্রকৃতির মানুষ। যখনই তার সঙ্গে দেখা হয় তখনই ভালোবাসায় জড়িয়ে ধরেন। তিনি আমার অনেক বইয়ের প্রচ্ছদ এবং ভেতরের অলংকরণ করে দিয়েছেন। তিনি এক অনন্য গুণের অধিকারী।

আমি সময়-সুযোগ পেলে শামসুদ্দিন ভাইয়ের কাছে যেতাম। যেদিন সুস্থির চিন্তুমুক্ত দেখতেন সেদিন আমাকে বসিয়ে আমার প্রতিকৃতি আঁকতেন। তার আঁকা প্রতিকৃতি আমার প্রচ্ছদের ফ্ল্যাপে ছেপেছি। পাঠক মহলে তা নন্দিত হয়েছে। আমার ‘চিরল চিরল এলাচি’ ছড়া বইটি তার আঁকা ছবি দিয়ে প্রকাশিত হয়। এই বইটিও তার শিল্পগুণে ছোটদের কাছে সমাদৃত হয়। তার চিত্রশিল্পের মাঝে রয়েছে আধুনিকতার ছাপ।

আমি সুদীর্ঘ দিন ধরে বাংলাদেশ ফায়ার সার্ভিস সিভিল ডিফেন্সের মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক কাজ করছি। মুক্তিযুদ্ধে ফায়ার সার্ভিসের বিভিন্ন স্টেশনে কর্মরত অবস্থায় অনেকে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনির হাতে নির্মমভাবে শহিদ হন। সেইসব শহিদদের রক্তকরোজ্জ্বল ইতিহাসের আলোকে জীবনগাথা লেখার প্রয়াস গ্রহণ করেছি। দু:খের বিষয় শহিদদের অনেকের ছবি খুঁজে পাওয়া যায়নি। সে কারণে শহিদদের মুখয়বের সঙ্গে যেসব স্বজনদের অবয়বের সাদৃশ্য রয়েছে, সেসব স্বজনদের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে শহিদদের মুখচ্ছবি স্কেচ করছেন প্রখ্যাত এই চিত্রশিল্পী এস.এম শামসুদ্দিন। স্বজনদের ছবি দেখে, বর্ণনা শুনে অত্যান্ত ধৈরযের সঙ্গে সুনিপুন হাতে রঙ তুলিতে ফুটিয়ে তুলেছেন শহিদদের মুখশ্রী। শহিদদের মুখচ্ছবি অঙ্কনের পর হোয়াটসঅ্যাপে তাদের পরিবারের কাছে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। এই প্রতিকৃতি শহিদদের সঙ্গে সাদৃশ হয়ে ওঠেছে কিনা তা জানার জন্য। ছবির প্রতিকৃতি শহিদদের মুখায়বের সঙ্গে সাদৃশ্য রয়েছে বলে স্বজনরা জানান।

স্বজনদের ছবি দেখে এবং বর্ণনা শুনে প্রতিকৃতি আঁকা খুবই দুরূহ কাজ। এই দুরূহ কাজটি এস.এম. শামসুদ্দিন তার অভিজ্ঞতার আলোকে নিঁখুতভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন। তার শিল্পকর্মের মধ্যে এই কাজটি অনন্য হয়ে থাকবে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে। সেই সাথে তিনিও মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে স্মরণীয়-বরণীয় হয়ে থাকবেন।

লেখক ও গবেষক

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
চিত্রশিল্পী,এস.এম.শামসুদ্দিন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close