reporterঅনলাইন ডেস্ক
  ২৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২২

বাংলাদেশের চীন নীতিতে ‘উদ্বিগ্ন’ ভারত

ফাইল ছবিতে বাংলাদেশ ও ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী

বাংলাদেশ কি চীনের দিকে ঝুঁকছে? এমন পর্যবেক্ষণে কি উদ্বিগ্ন ভারত? বিদেশের মাটিতে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেনের প্রশ্নের জবাবে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জয়শঙ্করের মন্তব্যে কি সেরকম ইঙ্গিত ছিল?

তবে জার্মানির মিউনিখে ওই বাঁকা কথার পর ফ্রান্সে আবার দুই পররাষ্ট্রমন্ত্রী বৈঠক করেছেন। আর সর্বশেষ খবর হলো, সেই বৈঠকেই বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে দিল্লি সফরের আমন্ত্রণ জানিয়েছেন ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী। জুনের মধ্যে ভারত সফর করবেন আব্দুল মোমেন৷

এদিকে বুধবার (২৩ ফেব্রুয়ারি) পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন দুদিনের সফরে ভারত যাচ্ছেন। তার এই সফরের উদ্দেশ্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফর নিয়ে আলোচনা৷ তিনি ভারতের পররাষ্ট্র সচিব হর্ষ বর্ধন শ্রিংলার সাথে বৈঠক করবেন৷ বাংলাদেশ-ভারতের কূটনৈতিক সম্পর্কের ৫০ বছর উদযাপনে শেখ হাসিনার চলতি বছরের দ্বিতীয়ার্ধে দিল্লি সফরের কথা রয়েছে৷ গত বছরের মার্চে বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বাংলাদেশে আসেন৷ তখন তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ভারত সফরের আমন্ত্রণ জানান।

মিউনিখ থেকে প্যারিস

জার্মানির মিউনিখে গত শনিবার মিউনিখ সিকিউরিটি কনফারেন্সে আলোচনা চলাকালে চীন যেভাবে আর্থিক সহায়তা দেয়, যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন কোয়াড জোটগুলো তেমনটা দিতে পারবে কিনা—বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেনের এমন প্রশ্নের জবাব ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জয়শঙ্কর বেশ কড়াভাবেই দেন৷ তিনি বলেন, বাণিজ্যিকভাবে লাভজনক নয় এমন অবকাঠামো প্রকল্প নির্মাণে ঋণ নেয়ার আগে সংশ্লিষ্ট দেশগুলোকে ভাবতে হবে৷ এ নিয়ে উদ্বেগ না থাকলে ভঙ্গুর অবকাঠামোই তৈরি হবে৷

তিনি শ্রীলঙ্কায় চীনের কিছু বিনিয়োগের দিকে ইঙ্গিত করে বলেন, সেখানে চীনা অর্থায়নে প্রকল্পগুলো তারা চালাতে না পেরে চীনকেই আবার ভাড়া দিয়েছে৷ তিনি বলেন, আমাদের এই অঞ্চলের অনেক দেশের ওপর আমরা এখন দেনার বোঝা চাপিয়ে দিতে দেখছি৷ যে এয়ারপোর্টে একটি বিমানও অবতরণ করবে না, বা যে বন্দরে একটি জাহাজও আসবে না—বাণিজ্যিকভাবেও টেকসই নয় এমন সব প্রকল্প নেওয়া হচ্ছে৷

তবে মোমেন বলেন, বাংলাদেশে উন্নয়ন চলছে, এই বাস্তবতায় কী করা উচিত সে সিদ্ধান্ত নেওয়া কঠিন৷ জনগণও আরও অবকাঠামো চায়৷

তবে এরপর প্যারিসে ভারত ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় সহযোগিতাবিষয়ক মন্ত্রী পর্যায়ের আলোচনায় গিয়ে বাংলাদেশ ও ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর মধ্যে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক হয়৷ সোমবার সন্ধ্যার সেই বৈঠকের পর ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর এক টুইট বার্তায় বলেন, ২০২২ সালে ভারত-বাংলাদেশের সম্পর্ক এক অনন্য উচ্চতায় পৌঁছবে বলে আমরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ৷

এদিকে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে তিস্তা নদীর পানি বণ্টন চুক্তি নিষ্পন্ন করার বিষয়ে পুনরায় জোর দিয়ে আব্দুল মোমেন ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে রোহিঙ্গা ইস্যুতে সম্পৃক্ত হওয়ার বিষয়ে আলাপ করেন৷ এছাড়া কুশিয়ারা নদীর পানি বণ্টন নিয়ে আলোচনা অব্যাহত রাখার বিষয়ে দুই পক্ষ একমত হয়৷

বাংলাদেশের কূটনীতিকরা যা মনে করেন

সাবেক পররাষ্ট্র সচিব মো. তৌহিদ হোসেন বলেন, বাংলাদেশ চীনের কাছে পাকিস্তানের মতোই বন্ধক হয়ে যায় কিনা এটা নিয়ে ভারতের উদ্বিগ্নতা আছে৷ বাংলাদেশে চীনা বিনিয়োগ নিয়ে তাই তারা কিছুটা হলেও অস্বস্তিতে আছে৷ কিন্তু ভারত তো কোনো বিকল্প দিতে পারছে না৷ তাদের বিনিয়োগ এখানে ১০ বিলিয়ন ডলার৷ জয়শঙ্কর যে বলেছেন অবাস্তব প্রকল্প, ভারতীরাও তো অবাস্তব প্রকল্প দেয়৷ তারা এমনভাবে প্রকল্প দেয় যে, বালু সিমেন্টও তাদের কাছ থেকে নিতে হয়৷ এর চেয়ে তো অবাস্তব কিছু হতে পারে না৷ আমাদের চীনারা সেগুলোই দেয় যেগুলো আমাদের এখানে নেই৷ ভারত তো আমাদের এমনিতে দিচ্ছে না৷ আমাদের তো ফেরত দিতে হবে৷

তিনি আরও বলেন, চীনের ওপর নির্ভরশীলতা ভালো৷ ভারতকে আমাদের যা দেয়ার দিয়েছি, এখন তাদের উচিত প্রতিশ্রুতি পূরণ করা৷

সাবেক রাষ্ট্রদূত মেজর জেনারেল (অব.) শহীদুল হকও একই ধরনের কথা বলেন৷ তার কথা, ভারত ১০ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগের কথা বলছে৷ কিন্তু বাস্তবে বিনিয়োগ করেছে কত? এক বিলিয়ন ডলারের বেশি তারা এখনো দেয়নি৷ আর ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী শ্রীলঙ্কার যে পোর্টের কথা বলেছেন সেখানে কিন্তু জাহাজ ভিড়ছে৷ তিনি আসলে এটা বলার জন্য বলেছেন৷ কোনো এয়ারপোর্টে একটিও বিমান নামে না—তিনি কি তা দেখাতে পারবেন? আর বাংলাদেশে যে চীনা বিনিয়োগ তা কি অবাস্তব?

তার কথা, ভারত এখন বাংলাদেশকে একটু চাপে ফেলতে চাইছে, যাতে চীনের সাথে দূরত্ব বজায় রাখে৷ যেহেতু র‌্যাব-পুলিশের সাত সদস্যের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা বাংলাদেশকে একটু চাপে ফেলেছে, সেই সুযোগে তারা একটু সুবিধা নিতে চায়৷

ভারতে মৈত্রী সম্মেলন

ভারতের সিমলায় ইন্ডিয়া-বাংলাদেশ ফ্রেন্ডশিপ ডায়ালগে এবার আরএসএসও যোগ দিয়েছে৷ বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী শাহরিয়ার আলমও যোগ দেন৷ আওয়ামী লীগের শীর্ষ পর্যায়ের নেতারা সেখানে যান৷ এটা ভারতের বিজেপি ও বাংলাদেশের আওয়ামী লীগের মতবিনিময় মঞ্চ হিসেবেই কাজ করে আসছে৷ এবারকার এই ডায়ালগের নতুন কোনো গুরুত্ব আছে বলে মনে করেন না তৌহিদ হোসেন৷ তিনি বলেন, ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক সর্বোচ্চ পর্যায়েই আছে৷ এখন ভারতের দায়িত্ব হলো এটা ধরে রাখা৷ তাদের বাস্তবতা বুঝতে হবে৷

শহীদুল হক বলেন, এটা প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফরের আগে আওয়ামী লীগ ও বিজেপির একটা ডায়ালগ ছাড়া আর কিছু না৷ সূত্র : ডয়ছে ভেলে

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
বাংলাদেশ,চীন,ভারত,বিনিয়োগ,প্রকল্প,কূটনৈতিক সম্পর্ক
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close