শাহজাহান সাজু

  ২৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২১

স্বল্পোন্নত ৩৬ দেশের নেতৃত্বে বাংলাদেশ

এবার সদস্য দেশগুলোর পক্ষ থেকে আরও বৃহৎ পরিসরে কাজ করতে বাংলাদেশকে অনুরোধ জানানো হয়েছে

বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থায় স্বল্পোন্নত ৩৬ দেশের নেতৃত্ব দেওয়ার সুযোগ পেয়েছে বাংলাদেশ। সম্প্রতি স্বল্পোন্নত দেশগুলোর (এলডিসি) গ্রুপের এক সভায় বাংলাদেশকে সমন্বয়কের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক ফোরামে দরকষাকষি এবং যেকোনো সিদ্ধান্ত নেওয়ার দায়িত্ব দেওয়া হয়। এরই মধ্যে বাংলাদেশ এলডিসি গ্রুপের প্রধান সমন্বয়কের দায়িত্ব পালন করছে। এবার সদস্য দেশগুলোর পক্ষ থেকে আরো বৃহৎ পরিসরে কাজ করতে বাংলাদেশকে অনুরোধ জানানো হয়েছে। এ সুযোগ দেশের জন্য বিশাল প্রাপ্তি ও সম্মানের বলে মনে করছে সরকার।

এ বিষয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে ডব্লিউটিও সেলের মহাপরিচালক মো. হাফিজুর রহমান প্রতিদিনের সংবাদকে বলেন, এলডিসি গ্রুপের ৩৬টি দেশের নেতৃত্ব এখন বাংলাদেশের হাতে। এলডিসি গ্রুপের সভায় বাংলাদেশকে সমন্বয়কের পাশাপাশি দরকষাকষি ও যেকোনো সিদ্ধান্ত নেওয়ার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। এটি আমাদের দেশের জন্য অনেক বড় সম্মানের। তিনি জানান, এলডিসির উন্নয়নে বিশ^ বাণিজ্য সংস্থা ডব্লিউটিওতে এমন কিছু গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক (গ্রিনরুম মিটিং) অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে যেগুলোতে শুধু সমন্বয়ক দেশের প্রতিনিধিই উপস্থিত থাকতে পারেন।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, বিশ্বে বাংলাদেশ উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে সমাদৃত। এলডিসি গ্রুপের ৩৬টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অবস্থাও সবচেয়ে ভালো অবস্থানে রয়েছে।

জাতিসংঘের হিসেবে বর্তমানে বিশ্বে ৪৭টি দেশ হলো স্বল্পোন্নত দেশ বা এলডিসি। এর মধ্যে ৩৬টি দেশ ডব্লিউটিওর সদস্য। বাংলাদেশ এখন সদস্য দেশগুলোর নেতৃত্ব দিচ্ছে। এর আগেও বাংলাদেশ বেশ কয়েকবার দায়িত্ব পালন করেছে। কিন্তু এবারের বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ বাংলাদেশ চূড়ান্তভাবে এলডিসি থেকে বেরিয়ে যাওয়ার পথে রয়েছে। চলতি ফেব্রুয়ারিতেই বাংলাদেশসহ ৬টি দেশ এলডিসি থেকে বেরিয়ে উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদায় উত্তরণের সুপারিশপ্রাপ্ত হবে। আরো ১২টি দেশ এলডিসি থেকে বেরিয়ে যাওয়ার প্রক্রিয়ায় রয়েছে।

জাতিসংঘের অর্থনৈতিক এবং সামাজিক কাউন্সিলের উন্নয়ন নীতিমালাবিষয়ক ‘কমিটি ফর ডেভেলপমেন্ট পলিসি’ (সিডিপি) তিনটি সূচকের ভিত্তিতে তিন বছর পরপর উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের বিষয় পর্যালোচনা করে থাকে। এই কমিটির সুপারিশ অনুযায়ী স্বল্পোন্নত দেশ থেকে বেরিয়ে আসার সূচকগুলো হচ্ছে, মাথাপিছু আয় (যা বিগত তিন বছরের গড় মাথাপিছু জাতীয় আয় হতে নির্ধারণ করা হয়), মানবসম্পদ সূচক (যা পুষ্টি, স্বাস্থ্য, মৃত্যুহার, স্কুলে ভর্তি ও শিক্ষার হারের সমন্বয়ে তৈরি হয়), অর্থনৈতিক ভঙ্গুরতা সূচক (যা প্রাকৃতিক দুর্যোগ, বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক আঘাত, জনসংখ্যার পরিমাণ এবং বিশ্ববাজার থেকে একটি দেশের দূরত্বসহ আটটি বিষয়ের ওপর ভিত্তি করে তৈরি)। এর যেকোনো দুটি সূচকের মান অর্জন করতে পারলেই একটি দেশ স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে উত্তরণ ঘটানোর যোগ্যতা অর্জন করে। কোন দেশ পরপর দুটি ত্রিবার্ষিক পর্যালোচনায় (৬ বছর) তিনটি সূচকের যেকোনো দুটিতে উত্তীর্ণ হলে অথবা জাতীয় মাথাপিছু আয় নির্ধারিত মানের দ্বিগুণ অর্জন করতে পারলে তাকে জাতিসংঘ উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে ঘোষণা দেয়। সিপিডির পর্যালোচনায় একটি দেশের আয় হতে হবে কমপক্ষে ১,২৩০ মার্কিন ডলার। মানবসম্পদ সূচকে একটি দেশের স্কোর থাকতে হবে ৬৬ বা তার বেশি। অর্থনৈতিক ভঙ্গুরতার সূচকে একটি দেশের স্কোর হতে হবে ৩২ বা তার কম।

স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা দেওয়ার সুপারিশ করতে বাংলাদেশসহ ছয়টি দেশকে বাছাই তালিকায় রেখেছে সিডিপি। আগামী ২২-২৬ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠেয় ত্রিবার্ষিক সভায় বিষয়টি মূল্যায়ন করবে সিডিপি। অন্য পাঁচটি দেশ হলো নেপাল, মিয়ানমার, লাওস ও তিমুর লেসেথো। সিডিপি ফেব্রুয়ারিতে সুপারিশ করলেও বাংলাদেশকে আরো তিন বছর অপেক্ষা করতে হবে। কারণ বাংলাদেশকে উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে চূড়ান্ত স্বীকৃতি দেওয়া হবে জাতিসংঘের ২০২৪ সালের সাধারণ অধিবেশনে।

সিডিপির নিয়ম অনুসারে, একটি দেশ গ্র্যাজুয়েশন প্রাপ্তির জন্য প্রস্তাবিত হওয়ার পরে ৩-৫ বছরের প্রস্তুতিকালীন উপভোগ করতে পারে। এ সময়ে একটি দেশ এলডিসি দেশের জন্য সংরক্ষিত সব আন্তর্জাতিক সহায়তা ব্যবস্থা উপভোগ করতে পারে। সিডিপির সুপারিশের পর বাংলাদেশ যদি পাঁচ বছরের প্রস্তুতিকালীন মেয়াদ পায় তবে ২০২৬ সালে বাংলাদেশের উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে আনুষ্ঠানিক উত্তরণ ঘটবে।

পিডিএসও/হেলাল

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
বাংলাদেশ,স্বল্পোন্নত দেশ,এলডিসি
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close