নিজস্ব প্রতিবেদক

  ২৯ জুন, ২০২০

বেতন নেই, ছাঁটাইয়ের শঙ্কা

সিনেমা হলকর্মীদের কষ্টের জীবন

মণিহার সিনেমা হল। ফাইল ছবি

করোনাভাইরাস সংকটে দেশের সব সিনেমা হল এখন বন্ধ থাকায় বেতন পাচ্ছেন না হলের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা; বেতন নিয়ে অনিশ্চয়তার মধ্যেই চাকরি হারানোর শঙ্কায় দিন কাটছে তাদের। করোনার সংক্রমণ রোধে গত ১৮ মার্চ থেকে সব সিনেমা হল বন্ধ রাখার ঘোষণা দেয় হল মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ চলচ্চিত্র প্রদর্শক সমিতি; প্রায় সাড়ে তিন মাস ধরে হলগুলো বন্ধ রয়েছে। সংকটের মধ্যে মাসের পর মাস বেতন না পেয়ে দেশের অর্ধশতাধিক সিনেমা হলের ব্যবস্থাপক, বুকিং এজেন্ট, কাউন্টারম্যান, গেটম্যান, টিকিটম্যান, ইলেকট্রিক মিস্ত্রি, অফিস সহকারী, নাইটগার্ড, ঝাড়ুদার, সুইপারসহ হাজারো কর্মী বড় কষ্টের মধ্যে আছেন বলে জানা গেছে।

সিলেটের ‘নন্দিতা’ সিনেমা হলের একজন নাইটগার্ড জানান, তিনি চার মাস ধরে বেতন পাচ্ছেন না। তার বেতনের ওপরই পুরো সংসার নির্ভর করে। বাড়িভাড়া, বিদ্যুৎ বিল, সংসারের খরচ দিতে পারছে না। সিনেমা হল নন্দিতার মালিক আবদুল আজিজ পাপ্পু জানান, সিনেমা হল বন্ধ থাকায় আর্থিক সংকটের মুখে ফেব্রুয়ারির পর চার মাস ধরে তিনি কর্মীদের বেতন দিতে পারেননি।

তিনি বলেন, ‘সিনেমা হল বন্ধ থাকায় খুব সংকটের মধ্যে আছি। এখন এক টাকা আয় না হলেও হল ভাড়া, বিদ্যুৎ বিল বাবদ প্রতি মাসেই অনেক টাকা খরচ হয়ে যাচ্ছে। দুই ঈদের আয়ের টাকায় আমরা পুরো বছর চলি। রোজার ঈদে হল বন্ধ ছিল, কোরবানির ঈদে হল না খুললে হল আর চালাতে পারব না। আমি হল ছেড়ে দিলে মালিক হলটা ভেঙে ফেলবে।’ এই সিনেমা হলের দুই মালিক বাদশা মিয়া ও ডন মিয়ার কাছ থেকে ভাড়া নিয়ে আট বছর ধরে সিনেমা হলটি চালাচ্ছেন আবদুল আজিজ পাপ্পু; তিনি বাংলাদেশ চলচ্চিত্র প্রযোজক পরিবেশক সমিতির কার্যনির্বাহী পরিষদের সদস্যও।

নন্দিতা হলে বর্তমানে একজন ম্যানেজার, দুজন কাউন্টারম্যান, ছয়জন গেটম্যান, একজন অফিস সহকারী, একজন নাইটগার্ড, চারজন সুইপারসহ ২১ জন কর্মী আছেন। কয়েক বছর আগেও এখানে ২৮ জনের মতো কর্মী থাকলেও হলের আয় কমার সঙ্গে সঙ্গে কর্মীর সংখ্যাও কমিয়ে আনা হয়েছে।

হল মালিক সমিতির নেতারা বলছেন, আর্থিক সংকটের মধ্যে বেশিরভাগ হলের কর্মীদেরই বেতন পরিশোধ করতে পারেনি। ব্যয় সংকোচনে অনেকে ছাঁটাইয়ের পরিকল্পনাও করেছেন। অনেকে আবার সিনেমা হল আর না খোলারও সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। ব্যবসায়িকভাবে সফল সিনেমা হলগুলোর মধ্যে শীর্ষে থাকা রাজধানীর বলাকা ও যশোরের মণিহার সিনেমা হলের অবস্থাও এখন নাজুক। কোরবানির ঈদের আগে মণিহারের ৩৮ কর্মীর বেতন দেওয়ার ইচ্ছা আছে মালিকদের। সামনে কবে নাগাদ বাকি বেতন দিতে পারবেন তা নিয়ে সংশয়ের কথা জানালেন হলটির বুকিং এজেন্ট আলী আকবর সোহাগ।

১৯৮৩ সালে যাত্রা শুরু করা ঐতিহ্যবাহী সিনেমা হলটির মালিক জিয়াউল ইসলাম মিঠু; মালিকের পাশাপাশি হলটির দেখভালের দায়িত্বে আছেন সোহাগ। তিনি বলেন, কবে বেতন দিতে পারব সেটা নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না। কোরবানি ঈদে সিনেমা হল খুললে কিছু বেতন হয়তো দিতে পারব। ১৪৬২ সিটের এ হলকে দেশের বৃহত্তম সিনেমা হল হিসেবে দাবি করে সোহাগ জানান, তিন মাস বন্ধ থাকায় হলের প্রায় ১ কোটি টাকা ক্ষতি হয়েছে। আগে মাসে ৩০ লাখ টাকা টিকিট বিক্রি হলেও এখন তা শূন্য। দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ থাকায় হলের যন্ত্রাংশও অকেজো হচ্ছে।

এ সংকটে চলচ্চিত্র শিল্পকে বাঁচাতে সরকারি প্রণোদনা ছাড়া কোনো উপায় দেখছেন না বলে জানান তিনি। মণিহার সিনেমা হলের একজন কর্মী জানান, বেতন না নিয়ে শঙ্কার মধ্যে চাকরি হারানোর শঙ্কায়ও দিন কাটছে তার। ছাঁটাইয়ের বিষয়ে এক জিজ্ঞাসায় সোহাগ বলেন, ‘আমাদের এখানে ছাঁটাইয়ের বিষয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। কোরবানির ঈদ যাওয়ার পরে বিষয়টি নিয়ে বলা যাবে।’

রাজধানীর বলাকা সিনেমা হলের ৫৯ কর্মীদের মধ্যে বেশিরভাগই ছুটিতে রয়েছেন; অল্প কয়েকজন হলের রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে আছেন বলে জানান হলটির ব্যবস্থাপক এস এম শাহীন। মার্চ পর্যন্ত সব কর্মীদের বেতন দেওয়া হলেও এরপর অল্প কয়েকজন কর্মীর বেতন পরিশোধ করা হয়েছে বলে জানান তিনি। শাহীন বলেন, ‘যারা কাজ করছেন তাদের দেওয়া হয়েছে। যারা বাসায় আছেন তাদের হয়তো দেওয়া হয়নি। হল খুললেই সবার বেতন পরিশোধ করা হবে। আমরা সেই অপেক্ষায় আছি।’

পিডিএসও/হেলাল

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
চলচ্চিত্র শিল্প,সিনেমা হল,করোনা,আর্থিক সংকট
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close