সেই আসহাবুল ইয়ামিন হত্যাকাণ্ডের মামলা হলো সাভার থানায়
সাভারে স্বৈরাচারী হাসিনা সরকারের নির্দেশে ছাত্র-জনতার আন্দোলন চলাকালে পুলিশের সাঁজোয়া যান থেকে গুলিবিদ্ধ এক যুবকের নিথর দেহ টেনে নিচে ফেলা হয়। গাড়ি টান দেওয়ার সময় চাকার নিচে পড়বে বলে দেহটি টেনে দূরে সরানো হয়। তখনও সেই দেহটি নড়তে দেখা যায়। এমন একটি লোমহর্ষক ভিডিও ভাইরাল হয়ে পড়ে নেট দুনিয়ায়। সেই ঘটনায় অবশেষে সাভার থানায় মামলা হয়েছে।
নিহত ওই ছাত্রের নাম আসহাবুল ইয়ামিন। রাজধানীর মিলিটারি ইনস্টিটিউট অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজির (এমআইএসটি) এই শিক্ষার্থী গত ১৮ জুলাই দুপুরে সাভারে গুলিবিদ্ধ হওয়ার পরও জীবিত ছিলেন বলে জানান প্রত্যক্ষদর্শীরা। পুলিশ গুলিবিদ্ধ অবস্থায় তাকে সাঁজোয়া যানের ওপরে ‘শুইয়ে’ মহড়া দেয়।
মর্মস্পর্শী সেই ভিডিওতে দেখা যায়, আহত অবস্থায় সাঁজোয়া যানের ওপর থেকে তাকে সড়কে ফেলে দেয় পোশাক পরিহিত এক পুলিশ সদস্য। তখনও জোরে শ্বাস নিচ্ছেন ইয়ামিন। তার একটি পা লেগে ছিল সাঁজোয়া যানের চাকার সঙ্গে। এতে বিরক্ত পুলিশ সদস্য গাড়ি থেকে নেমে আহত ইয়ামিনকে পিচঢালা সড়কের ওপর টেনেহিঁচড়ে সরিয়ে দেন। তখনও নড়ছিল এই তরুণের শরীর। কিন্তু পুলিশ তাকে হাসপাতালে না নিয়ে প্রায় চার ফুট উঁচু বিভাজকের ওপর দিয়ে বস্তার মতো সড়কের সার্ভিস লেনে ফেলে দেয়। তখনও বিক্ষোভকারীদের ওপর গুলি করছিল পুলিশ সদস্যরা। ভিডিওতে ইয়ামিনকে বর্বরতম উপায়ে হত্যার দৃশ্য সারা দুনিয়ায় ছড়িয়ে পড়ে। কিন্তু তারপরও মামলা হয়নি। শেখ হাসিনার পতনের পর তাকে এবং ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাসহ সেই সময়ে সাভারে দায়িত্বে থাকা পুলিশ সদস্যদের আসামি করে গত ২৫ আগস্ট ঢাকার আদালতে মামলা করেন ইয়ামিনের মামা আবদুল্লাহ আল মুনকাদির রোকন। আদালত এজাহার গ্রহণে নির্দেশ দেন সাভার থানাকে।
এর ৮ দিন পর পুলিশ মামলাটি নথিভুক্ত করেছে। ইয়ামিনের পরিবার জানিয়েছে, স্থানীয় পুলিশ সদস্যরা বাসায় এসে ‘অনুরোধ’ করেছিল, তাদের আসামির তালিকা থেকে বাদ দিতে। শেখ হাসিনাসহ স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীকে আসামি করতে অুনরোধ করেন তারা।
এ বিষয়ে ইয়ামিনের বাবা মো. মহিউদ্দিন বলেন, ‘গত সপ্তাহে আমার বাসায় পুলিশ এসেছিল কয়েকজন। তারা বলে, তারা সহযোগিতা করতে চায়। কীভাবে এজাহার করতে হবে বলল। ওরা একটা এজাহারের খসড়া দিতে চেয়েছিল। তাতে দেখা গেল, সব (আসামি) রাজনৈতিক নেতার নাম। পুলিশের কারও নাম নাই।’
মামলার বাদী রোকন বলেন, ‘পুলিশ যে খসড়া দিয়েছিল, তা আমাদের পছন্দ হয়নি। কারণ, তারা খসড়া এজাহার থেকে তাদের অফিসারের নাম বাদ দিয়েছিল।’
গত ১৮ জুলাই কোটা সংস্কারের দাবিতে বেলা ১১টার দিকে সাভারের এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালসহ আশপাশের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ শুরু করেন। পরে পুলিশের মুহুর্মুহু টিয়ার শেল ও রাবার বুলেটে আন্দোলনকারীরা ছত্রভঙ্গ হয়ে যান।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, পুলিশ ও বিজিবির সঙ্গে হেলমেট পরে অস্ত্রসহ অবস্থান নেন আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গসংগঠনের কয়েকশ নেতাকর্মী। কয়েকজনের হাতে ছিল পিস্তল ও শটগান। উপজেলা চেয়ারম্যান মঞ্জুরুল আলম রাজীব, ছাত্রলীগ সভাপতি আতিকুর রহমান আতিককে দেখা যায় অস্ত্র হাতে।
এমআইএসটির কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী ইয়ামিনের বুকের বাঁ পাশ ও গলায় অসংখ্য ছররা গুলির চিহ্ন ছিল। তার মামার মামলায় রাজনৈতিক নেতা ছাড়াও ঢাকা জেলার তৎকালীন পুলিশ সুপার মো. আসাদুজ্জামান, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আব্দুল্লাহহিল কাফি, সাভার সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শাহিদুল ইসলাম, সাভার মডেল থানার সাবেক ওসি শাহ জামান, উপপরিদর্শক (এসআই) সুদীপ কুমার গোপ, আমিনবাজার পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ এসআই হারুন অর রশিদ ও এসআই সাব্বির আহাম্মেদকে আসামি করা হয়েছে।
এ মামলার বিষয়ে ঢাকার পুলিশ সুপার, সাভারের ওসি এবং পরিদর্শকের (তদন্ত) বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি। তবে থানা থেকে মামলাটি নথিভুক্ত করার তথ্য সূত্র মারফত নিশ্চিত হওয়া গেছে।
পিডিএস/এমএইউ