নিজস্ব প্রতিবেদক

  ২৫ নভেম্বর, ২০২২

এবার হাত গেল জামালের

বাসের রেষারেষি কমছেই না

প্রতীকী ছবি।

২০১৮ সালে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে সার্ক ফোয়ারার কাছে দুই বাসের রেষারেষিতে হাত হারানো রাজীবের কথা এখনো মনে আছে অনেকের। ওই ঘটনার চার বছর না যেতেই আবার দুই বাসের প্রতিযোগিতায় হাত হারিয়েছেন আরেকজন। তার নাম জামাল উদ্দিন। দুর্ঘটনায় হাত হারানোর ১৩ দিন পর মারা যান রাজীব। তবে জামাল বেঁচে গেলেও পঙ্গু হয়েছেন তিনি; বন্ধ হয়েছে আয়ের পথ।

রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতালের ইআর (ইমার্জেন্সি রিকভারি) ওয়ার্ডের জি-৩৬ নম্বর শয্যায় কাতরাচ্ছেন জামাল। ৬২ বছর বয়সী জামালের বাড়ি গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার রাজেন্দ্রপুরে। সোমবার (২১ নভেম্বর) তিনি দুর্ঘটনার শিকার হন।

হাসপাতালে চিকিৎসাধীন জামাল, পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সোমবার সাভার পরিবহনের দুটি বাস সদরঘাট থেকে ছাড়ার পর প্রতিযোগিতা শুরু করে। সকাল ১০টার দিকে জিরোপয়েন্টে (জিপিও) এসে একটি বাস থামে। তার আরোহী জামাল নামার জন্য যেই না দরজার বাইরে হাতল ধরেছেন, অমনি পেছনের বাসটি থেমে থাকা বাসটির বাম পাশ ঘেঁষে এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। এতে জামালের বাম হাতের কবজি বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। পথচারী এক নারী ও এক ব্যক্তি তাকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নেন। পরে জামালের মোবাইল ফোন থেকে স্বজনদের খবর দেন তারা।

জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতালে কথা হয় জামালের সঙ্গে। তার দুর্ঘটনার খবর স্ত্রীকে তখনো জানানো হয়নি। হৃদরোগ ও ডায়াবেটিসের রোগী তিনি। কয়েকদিন আগে বিয়ে হওয়া মেয়ে ও তরুণ ছেলে বাবার বিছানার পাশে নীরবে চোখের জল ফেলছেন। অশ্রুসিক্ত চোখে জামাল বলেন, ‘এই হাত দিয়ে কত কিছুই না করেছি! এখন এ হাতটি কোনো কাজে লাগবে না। সংসার কীভাবে চলবে? বসতবাড়ি ছাড়া সম্বল আর কিছু নেই। ওষুধপত্র জোগাড় করাই অসম্ভব হয়ে পড়েছে।’

জামাল বলেন, খবর পেয়ে শ্বশুরবাড়ি থেকে একমাত্র মেয়ে এসেছে। একমাত্র ছেলে এক বন্ধুর সঙ্গে পোশাক কারখার সুইং থ্রেডের (সুতা) ব্যবসা করত। করোনার শুরুতেই ব্যবসাটা বন্ধ রয়েছে।

জামাল উদ্দিন জানান, তিনি পুরান ঢাকার লক্ষ্মীবাজার পাতলা খান লেনে দুঃসম্পর্কের এক আত্মীয়ের বাসায় থাকেন। এক বন্ধুর সঙ্গে কুরিয়ার সার্ভিসের এজেন্টের ব্যবসা করেন। মাসে আয় ২০-২৫ হাজার টাকা। তা দিয়েই কোনো রকমে নিজের ও সংসারের খরচ মেটাতেন। হাত হারানোয় ওই ব্যবসাও আর করতে পারবেন না। হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেয়ে কী করবেন, তা ভেবেই কূল পাচ্ছেন না।

ছেলে আবদুুল আল মামুন বলেন, বুধবার রাতে মামলা করেছি। বাস ও এক চালককে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। মামলায় যা-ই হোক, আমার বাবার হাত তো আর ফিরে পাব না। আমার ব্যবসা বন্ধ, বাবার আয়ে সংসার চলত। এখানে ড্রেসিং থেকে শুরু করে ওষুধপত্র, সবই কিনতে হয় বাইরে থেকে। কিছু টাকা নিয়ে এসেছিলাম, তা প্রথম দিনেই শেষ। এখন আত্মীয়স্বজনের কাছ থেকে ধার করে চলছি।

শাহবাগ থানার উপসহকারী পরিদর্শক (এসআই) আবুল কালাম আজাদ বলেন, মামলা হয়েছে। দুর্ঘটনা ঘটানো সাভার পরিবহনের ওই বাসের চালক আব্দুর রাজ্জাককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাকে বৃহস্পতিবার (২৪ নভেম্বর) আদালতে পাঠানো হয়েছে।

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
বাস,রাজধানী,শেরেবাংলা নগর
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close