আরমান ভূঁইয়া
অনলাইন জুয়া-মাল্টিলেভেল মার্কেটিং
এক বছরে তিন কোটি টাকা পাচার
অনলাইনে জুয়া ও গ্রাহক সংগ্রহে মাল্টিলেভেল মার্কেটিংয়ের (এমএলএম) মাধ্যমে গত এক বছরে তিন কোটি টাকা বিদেশে পাচার করেছে একটি চক্র। অনলাইন বেটিং সাইট ও মোবাইল অ্যাপে জুয়া কার্যক্রম পরিচালনায় জোন ভিত্তিক এডমিন, ম্যানেজার, ভিআইপি এজেন্ট নিয়েগ দিত চক্রটি। গ্রাহক সংগ্রহের উপর অধিক মুনাফার প্রলোভনে দেখিয়ে জুয়ার খেলার নতুন অ্যাকাউন্ট খুলে অর্থ আত্মসাৎ করেছে চক্রটি।
শুক্রবার( ১০ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর খিলক্ষেত এলাকা থেকে অনলাইন জুয়া ও অবৈধ্য এমএলএম পরিচালনাকারী চক্রের তিন সদস্য করেছে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মহাগনর গোয়েন্দা পুলিশের গোয়েন্দা সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম বিভাগ। তাদের জিজ্ঞাসাবাদ এসব তথ্য জানায় ডিবি-সাইবার। গ্রেপ্তারকৃতরা হলো সাদ্দাম হোসেন মিজি, সহিদুল ইসলাম আলমগীর ও আলমগীর খান।
গোয়েন্দা-সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম বিভাগের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার নাজমুল হক বলেন, গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা ওয়েবসাইট ভিত্তিক ও মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে অনলাইনে জুয়া ও অবৈধ মাল্টিলেভেল মার্কেটিং কার্যক্রম পরিচালনা করতো। বেটিং সাইট ও মোবাইল অ্যাপ পর্যালোচনায় দেখা যায়, তারা এলাকা ভিত্তিক সুপার এডমিন, ম্যানেজার, ভিআইপি এজেন্টের মাধ্যমে ইউজার সংগ্রহ করতো।
এ চক্রটি মূলত ‘পিএসজি১১১ডটকম’ এবং ‘পিএসজি ফুটবল’ নামে দুটি সাইট পরিচালনা করে অথ্য আত্মসাৎ করছে। মূলত সুপার এডমিন ফ্রান্স থেকে ওয়েবসাইট ও অ্যাপ নিয়ন্ত্রণ করছে। বিভিন্ন দেশে দেখভালের জন্য তারা ম্যানেজার নিয়োগ করে। সংশ্লিষ্ট ম্যানেজাররা কোনও একটি নির্দিষ্ট এলাকা টার্গেট করে সেখানে একজন এজেন্টকে অধিক কমিশনের প্রলোভন দেখিয়ে আগ্রহ সংগ্রহে কাজ করে।
এজেন্টরা মূলত ইউজার সংগ্রহে সহায়তা ও বিভিন্ন সমস্যা হলে সরাসরি ম্যানেজারের সঙ্গে যোগাযোগ করে সমাধানের কাজ করে। এজেন্টরা সদস্য সংগ্রহ করে তাদের প্রত্যেকের নিকট থেকে মাল্টিলেভেল মার্কেটিং বা পিরামিড সিস্টেমে কমিশন পেয়ে থাকে।
অনলাইন বেটিং সাইট ‘পিএসজি১১১ডটকম’ এবং ‘পিএসজি ফুটবল’র নামে অনলাইনে জুয়া খেলার জন্য অ্যাকাউন্ট খুলতে নেওয়া হতো ৩ হাজার দুই’শ টাকা। বরবর্তীতে চক্রটি নতুন অ্যাকাউন্ট খুলে দেওয়ার জন্য রেফারেলকারীকে অধিক মুনাফা আয়ের প্রলোভন দেখিয়ে গ্রাহক সংগ্রহ করতো।
গ্রাহকদের নতুন নতুন অ্যাকাউন্ট খোলার জন্য বিভিন্ন রকম প্রলোভন দেখানো হতো। ৩০টি অ্যাকাউন্টের জন্য প্রতি মাসে ৩৬০০ টাকা, ৫০টি অ্যাকাউন্টের জন্য প্রতি মাসে সাড়ে ৭ হাজার, ১০০টি অ্যাকাউন্টের জন্য প্রতি মাসে ১৮ হাজার টাকা। এভাবে ৮০০টি অ্যাকাউন্টের জন্য প্রতি মাসে দুই লাখ টাকা পর্যন্ত মাসিক আয়ের অফার প্রলোভন দেখাতো চক্রটি। এভাবে গত এক বছরে তিন কোটি টাকা আত্মসাৎ ও বিদেশে পাচার করেছে চক্রের তিন সদস্য।
ডিবি-সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম (উত্তর) বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার মোহাম্মদ তারেক বিন রশিদ জানান, অনলাইনে জুয়া ও অবৈধ মাল্টিলেভেল মার্কেটিংয়ের মাধ্যমে সাধারণ মানুষের সরলতাকে পুঁজি করে বেশি মুনাফার প্রলোভন দেখিয়ে কোটি কোটি টাকা করেছে আসছিল চক্রটি।
‘পিএসজি১১১ডটকম’ এবং ‘পিএসজি ফুটবল’র নামে ওয়েবসাইট ও মোবাইল অ্যাপস ফ্যান্স থেকে নিয়ন্ত্রণ হচ্ছে। বিভিন্ন দেশে দেখভালের জন্য কান্ট্রি ম্যানেজার নিয়োগ করে চক্রটি। ম্যানেজাররা নির্দিষ্ট এলাকা টার্গেট করে অধিক কমিশনের প্রলোভনে এজেন্টকে নিয়োগ ক রে। এজেন্টরা মূলত ইউজার সংগ্রহ করতো।
মোহাম্মদ তারেক বিন রশিদ বলেন, গ্রেপ্তাররা নিজেরা অভ্যন্তরীণ কথা বার্তা ও যোগাযোগের জন্য “পি.এস.জি. এমডি সাদ্দাম মিজি” নামে প্রাইভেট টেলিগ্রাম গ্রুপ ব্যবহার করত। গ্রেপ্তার সাদ্দাম হোসেন মিজি ‘পিএসজি১১১ডটকম’ এবং ‘পিএসজি ফুটবল’ সাইটের একজন এজেন্ট এবং সহিদুল ইসলাম আলমগীর (৩৭) ও আলমগীর খান (৩৫) তার সহযোগী হিসেবে কাজ করত। তারা গ্রাহক সংগ্রহ ও অ্যাকাউন্ট তৈরি ও তাতে ডিপোজিট করতে সহায়তা করত। বিনিময়ে তিনি মোটা অংকের একটি কমিশন পেতেন। ডিপোজিট করা টাকা ডিজিটাল হুন্ডির সহায়তায় দেশের বাইরে পাচার হয়ে যেত। গ্রেপ্তারদের অ্যাকাউন্ট ও মোবাইল ব্যাংকিং পর্যালোচনা করে গত এব বছরে তিন কোটি টাকা পাচারের তথ্য পাওয়া গেছে। যার প্রভাব পড়ে দেশের সামগ্রিক রেমিট্যান্স খাতের ওপর। এ ধরনের প্রলোভনের ফাঁদে পা না দিতে দুটি পরামর্শ দিয়েছে ডিবি-সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম বিভাগ।- অধিক মুনাফার আশায় অনলাইন জুয়া বা বেটিংয়ে না জড়ানো। নাম সর্বস্ব সফটওয়্যার বা ওয়েবসাইটে বিনিয়োগ না করা।