reporterঅনলাইন ডেস্ক
  ০৭ অক্টোবর, ২০২১

সেই ৩ কলেজছাত্রী নিখোঁজের পেছনে আসল রহস্য কী!

প্রতীকী ছবি

উদ্ধার হওয়া সেই তিন কলেজছাত্রী উচ্চাভিলাষী জীবন-যাপন, অতিরিক্ত পারিবারিক বিধিনিষেধ, উচ্চশিক্ষার জন্য জাপান যাওয়ার উদ্দেশে ঘর ছেড়েছিলেন; এমনটাই বুধবার (৬ অক্টোবর) তাদের উদ্ধারের পর বলা হয়েছিল। কিন্তু এর পেছনে অন্য কারণও খতিয়ে দেখছে র‌্যাব। দ্বাদশ শ্রেণিতে পড়ুয়া সেই তিন শিক্ষার্থী ভয়ঙ্কর একটি মানবপাচারকারী চক্রের খপ্পরে পড়েছিলেন; সময় মতো তাদের উদ্ধার করা না গেলে আরও বড় বিপদে পড়তে হতো বলে মনে করছেন র‌্যাব সদস্যরা।

৩০ সেপ্টেম্বর নিখোঁজ হওয়ার ৫ দিন পর বুধবার (৬ অক্টোবর) রাজধানীর আব্দুল্লাহপুর বেড়িবাঁধ এলাকা থেকে ওই তিন ছাত্রীকে উদ্ধার করে র‌্যাব। ওই তিন শিক্ষার্থী মিরপুর-পল্লবী এলাকার তিনটি কলেজের দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী। তাদের উদ্ধারের পর র‌্যাব জানায়, অতিরিক্ত পারিবারিক বিধিনিষেধে বিরক্ত হয়ে এবং উচ্চাভিলাষী জীবন-যাপনের উদ্দেশ্যে জাপান চলে যাওয়ার পরিকল্পনা করে ঘর ছেড়েছিলেন তারা।

এ তিন শিক্ষার্থীর ঘর ছাড়ার সঙ্গে হাফসা চৌধুরী নামে চক্রের একজনের সংশ্লিষ্টতার তথ্য পাওয়া গেলেও র‌্যাব মনে করছে এ নামটি ভুয়া। চক্রের কোনো সদস্যকে আটকও করা যায়নি।

সব মিলিয়ে এ তিন শিক্ষার্থীদের উদ্ধারের পর র্যাব এখন ধারণা করছে, এখানে আসলে একটা মানবপাচারকারী চক্র কাজ করছে। র‌্যাব-৪ এর সন্দেহ, চক্রটির সদস্যরা শুধুমাত্র ওই তিন শিক্ষার্থীই নয়, তাদের মতো আরও অনেক অল্পবয়সী তরুণীকে নানা প্রলোভন দেখিয়ে ঘর থেকে বের করে নিয়ে থাকতে পারে। চক্রটি নারীপাচার, মুক্তিপণ আদায়, টাকা-পয়সা লুট ও ক্ষেত্রে বিশেষে হত্যার মতো ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকতে পারে বলে সন্দেহ করা হচ্ছে।

র‌্যাবের মতে, চক্রটি প্রযুক্তিগত দিক দিয়ে এতোই পারদর্শী যে তাদের ট্রেস করা যায় এমন কোনো আলামত তারা তাদের পেছনে রাখে না। সুকৌশলে ভুক্তভোগীদের ঘর থেকে বের করে নিয়ে গিয়ে নিজেদের উদ্দেশ্য হাসিল করে চক্রটি। এদের বিষয়ে বেশ কিছু তথ্য র‌্যাব-৪ এর হাতে এসেছে।

ওই তিন শিক্ষার্থী সম্পর্কে র‌্যাব-৪ এর একাধিক কর্মকর্তা সূত্রে জানা যায়, নিখোঁজের দুই মাস আগে ওই তিন শিক্ষার্থী রাজধানীর দিয়াবাড়ি এলাকায় তাদের বন্ধু তরিকুলের মাধ্যমে হাফসা চৌধুরী নামে যে নারীর সঙ্গে দেখা করেছিলেন সে আসলে ওই চক্রের একজন সক্রিয় সদস্য। সে মূলত ভুয়া নাম ব্যবহার করে ওই তিন শিক্ষার্থীকে জাপানে পাঠানোর প্রলোভন দেখিয়ে ঘর থেকে বের করে নিয়ে যায়। তবে তার আসল নাম এখনও জানতে পারেনি র‌্যাব।

নতুন এই চক্রটিকে শনাক্ত করতে বেশ বেগ পেতে হচ্ছে তদন্তকারীদের। ধারণা করা হচ্ছে, চক্রটি এক সঙ্গে বিভিন্ন পরিবারের তরুণীদের টার্গেট করে তাদের কার্যক্রম চালায়। দরিদ্র ও নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারের তরুণীদের ভালো কাজের প্রলোভন দেখিয়ে পার্শ্ববর্তী বিভিন্ন দেশে নিয়ে গিয়ে অসামাজিক কার্যকলাপ হয় এমন জায়গায় বিক্রি করে দেয়।

অন্যদিকে মধ্যবিত্ত ও উচ্চবিত্ত পরিবারের তরুণীদের জাপানসহ বিভিন্ন উন্নত দেশে পাঠানোর কথা বলে মোটা অঙ্কের টাকাসহ ঘর থেকে বের করে নিয়ে আসে। পরে দেশের বিভিন্ন জায়গায় আটকে রেখে তাদের টাকা-পয়সা লুট করে এবং পরিবারের কাছ থেকে মুক্তিপণ আদায় করে অজ্ঞাত স্থানে ফেলে রেখে যায়। ওই তিন শিক্ষার্থীর টাকা এবং স্বর্ণালংকারও চক্রটির সদস্যরা কক্সবাজার থেকে নিয়ে যায়। আবার কোনো ভিকটিমকে ঝুঁকিপূর্ণ মনে হলে হত্যা করার মতো ঘটনাও চক্রটি ঘটাতে পারে।

র‌্যাব সূত্রে জানা গেছে, ভুক্তভোগীদের সঙ্গে যোগাযোগের ক্ষেত্রে চক্রটির সদস্যরা একপাক্ষিক যোগাযোগ ব্যবস্থা করে। ভুক্তভোগীরা নিজেরা চাইলেই চক্রের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারে না, চক্রটি যখন চায় তখনই শুধুমাত্র যোগাযোগ হয়। এ তিন শিক্ষার্থীর সঙ্গেও তেমনটাই হয়েছিল। এখানেও ‘ট্রেসলেস’ একটা সম্পর্ক তৈরি করা হয়। চক্রটি কোনো সিম ব্যবহার করে যোগাযোগ করে না। মেসেঞ্জারের মাধ্যমে যোগাযোগ হয়। পরে আইডির আর কোনো খোঁজ থাকে না। ভুক্তভোগীদের দিয়ে তাদের পাঠানো মেসেজগুলোও ডিলিটি করিয়ে দেওয়া হয়। পারতপক্ষে তারা সামনাসামনি দেখা করে না।

র‌্যাব-৪ এর এক কর্মকর্তা বলেন, চক্রটির খুঁজে বের করার জন্য আমরা তিন শিক্ষার্থী নিখোঁজের ঘটনায় হওয়া মামলার তদন্তভার চেয়েছি। আমাদের কাছে সুনির্দিষ্ট কিছু ক্লু আছে। তদন্তের দায়িত্ব পেলে চক্রটিকে এক্সপোজ করা যাবে বলে আশা করি।

এদিকে মামলার তদন্তের বিষয়ে তদন্ত কর্মকর্তা পল্লবী থানার উপ-পরিদর্শক সজিব খান বলেন, এই মামলায় মো. তরিকুল্লাহ (১৯) ওরফে তরিকুলের সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেছে এখন পর্যন্ত। আমাদের তদন্ত চলছে। ওই তিন শিক্ষার্থীকে পরিবারে কাছে হস্তান্তর করেছে র‌্যাব। মামলার তদন্তের স্বার্থে তাদের আমরা জিজ্ঞাসাবাদ করবো।

এই তিন শিক্ষার্থী নিখোঁজ হওয়ার পর তাদের একজনের বড় বোন ২ অক্টোবর পল্লবী থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন একটি মামলা করেন। এই মামলায় আসামি করা হয়- মো. তরিকুল্লাহ (১৯), মো. রকিবুল্লাহ (২০), জিনিয়া ওরফে টিকটক জিনিয়া রোজ (১৮) ও শরফুদ্দিন আহম্মেদ অয়নকে (১৮)। এছাড়া অজ্ঞাত চারজনকেও আসামি করা হয়েছে। এদের মধ্যে তরিকুল্লাহ, রকিবুল্লাহ, জিনিয়া ও অয়ন গ্রেপ্তার আছেন।

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
তিন কলেজছাত্রী,র‌্যাব,পল্লবী
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close