সাতক্ষীরা প্রতিনিধি

  ২৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২১

স্কুলে হারিয়ে গেছে টাকা, ‘চালপড়া’ খাইয়ে শিক্ষিকাকে চোর শনাক্ত

সাতক্ষীরার আশাশুনি উপজেলার সরাপপুর ইউনাইটেড মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক আবু তাহেরের ১৫-১৮ হাজার টাকা হারিয়ে যায়। ওই টাকা খুঁজতে চালপড়া খাওয়ানো হয় বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের। তবে টাকার হদিস মেলেনি। শিক্ষিকা চঞ্চলা রানী দাস চালপড়া খেতে না পারায় অবশেষে তাকেই চোর হিসেবে শনাক্ত করা হয়। এ ঘটনায় থানায় সাধারণ ডায়েরি করেছেন ওই শিক্ষিকা।

কথিত রয়েছে, প্রকৃত চোর চালপড়া খেতে পারবে না গলায় আটকে যাবে। মূলত এই কথিত প্রবাদকে ঘিরে শনাক্ত করা হয়েছে চোর। তবে এটি মানতে নারাজ প্রশাসন। প্রশাসন বলছে, চালপড়া প্রক্রিয়া আইনসম্মত নয়। অভিযুক্ত বলছেন, আমি জড়িত নই।

সরাপপুর ইউনাইটেড মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক গোলাম কিবরিয়া জানান, গত ১৭ ফেব্রুয়ারি (বুধবার) বিদ্যালয় চলাকালীন শিক্ষক আবু তাহেরের কাছে থাকা ১৫-১৮ হাজার টাকা হারিয়ে যায়। আবু তাহের জানিয়েছেন, ওই টাকা বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের কক্ষেই হারিয়ে গেছে। তবে বিদ্যালয়ের ১৫ শিক্ষক-কর্মচারীর কেউই টাকার বিষয়ে কিছু বলতে পারছেন না।

তিনি বলেন, পরবর্তীতে ওই টাকা খুঁজে পেতে শিক্ষকরা মিলে পার্শ্ববর্তী মসজিদের ইমামের কাছ থেকে চালপড়া এনে সবাইকে খাওয়ানোর প্রস্তাব দেন। এরপর চালপড়া এনে সবাইকে খাওয়ানো হয়। এ সময় চঞ্চলা রানী দাস চালপড়া খেতে পারছিলেন না, কষ্ট পাচ্ছিলেন। এই থেকে সবাই ধারণা করেন, টাকাটি চুরির জন্য তিনি দায়ী।


আরও পড়ুন : চালু হচ্ছে কোভিড ট্রাভেল পাস


চঞ্চলা রানী দাস জানান, ঘটনার দিন স্কুলে ছিলাম না। টাকা চুরির সঙ্গে আমি জড়িত নই। ঘটনার দিন শিক্ষক আবু তাহের স্কুলে থাকা অবস্থায় আমিসহ কয়েকজন শিক্ষক বাড়ি চলে যান। পরদিন জানতে পারি টাকা হারিয়ে গেছে। হারানো টাকা চুরির দায় আমার ওপর চাপানোয় মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছি। ঘটনাটি জেলা প্রশাসক স্যারকে জানিয়েছি। তার পরামর্শে আশাশুনি থানায় সাধারণ ডায়েরি করেছি। আমি সামাজিকভাবে অপমানিত হয়েছি। চুরির অপবাদ নিয়ে শিক্ষকতা করার মানসিকতা হারিয়ে ফেলেছি। এ ঘটনায় বিচার দাবি করছি।

আশাশুনি থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) গোলাম কবির জানান, শিক্ষিকা চঞ্চলা রানী দাসকে ২১ ফেব্রুয়ারি (রোববার) চালপড়া খাইয়ে টাকা চোর হিসেবে শনাক্ত করা হয়। তবে তিনি জানিয়েছেন, আমি এ ঘটনায় জড়িত নই। ২২ ফেব্রুয়ারির (সোমবার) এ ঘটনায় তিনি থানায় সাধারণ ডায়েরি করেছেন। সাধারণ ডায়েরি নথিভুক্ত করে আদালতে পাঠানো হয়েছে। আদালতের সিদ্ধান্ত অনুয়ায়ী পরবর্তী ব্যবস্থা নেয়া হবে।

সাতক্ষীরা জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা আবদুল্লাহ্ আল মামুন বলেন, ঘটনাটি জেনেছি। আমি তাদেরকে জানিয়েছি, চালপড়া খাইয়ে চোর শনাক্ত করা এটি বাস্তব সম্মত নয়। এটি নিয়ে বাড়াবাড়ি না করতে। শিক্ষিকার যেন মানহানি না ঘটে সেদিকে খেয়াল রাখতে নির্দেশনা দিয়েছি।

এ ঘটনায় সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক এস এম মোস্তফা কামাল জানান, ঘটনাটি জানার পর বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের সঙ্গে কথা বলে বিস্তারিত শুনেছি। এ ব্যাপারে আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে। মান্ধাতার আমলের এই চালপড়া প্রক্রিয়ায় কাউকে দোষী সাব্যস্ত করা বাস্তব ও আইনসম্মত নয়।

পিডিএসও/হেলাল

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
চালপড়া,শিক্ষিকা,সাতক্ষীরা,টাকা চুরি,অপবাদ
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close