ঢাকায় বেড়েছে ছিনতাই
৩ মাসে ছিনতাইকারীর ছুরিকাঘাতে আহত ১০
রাজধানীতে ছিনতাইয়ের ঘটনা বেড়েছে। ছিনতাইকারীদের হাতে প্রাণও হারাচ্ছে মানুষ। পুলিশের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, গেল এক বছরে নগরে ছিনতাই হয়েছে ১৭৬টি। সবশেষ শনিবার রাতে হাইকোর্টের সামনে ছিনতাইকারীর ছুরিকাঘাতে প্রাণ গেছে সেগুনবাগিচার ডিশ ব্যবসায়ী হামিদুল ইসলামের। আর গেল ৩ মাসে রাজধানীতে ছিনতাইকারীর ছুরিকাঘাতের আহত হয়েছে অন্তত ১০ জন।
শাহাদাৎ হোসেন নামের এক ব্যক্তি গেল সপ্তাহে ডেমরা থেকে যাচ্ছিলেন মিরপুরে। বাসেই যাত্রীবেশী ছিনতাইকারীদের কবলে পড়ে হারিয়েছেন সব। বাসে ও সড়কে এমন ভুক্তভোগীর সংখ্যা অনেক।
ঢাকার সিএমএম আদালতের জিআর খাতার তথ্য পর্যালোচনায় দেখা গেছে, গত ১০ বছরে শাহবাগ, রমনা, মতিঝিল, বাড্ডা, যাত্রাবাড়ী, ডেমরাসহ ১৫টি থানা এলাকায় ছিনতাই হয়েছে অপেক্ষাকৃত বেশি। তবে এসব এলাকায় নজরদারি জোরদারের কথা জানিয়েছে পুলিশ।
ডিএমপির মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) ওয়ালিদ হোসেন জানান, রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় ডিবি পুলিশের অভিযানে ৩৮ জন ডাকাত, ছিনতাইকারী ও চোরকে আটক করা হয়েছে। এ সময় তাদের কাছ থেকে বিভিন্ন মালামাল ও সরঞ্জামাদি উদ্ধার করা হয়েছে।
এদিকে, গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে মিডিয়া সেন্টারে হামিদুল হত্যার সঙ্গে জড়িত পাঁচ ছিনতাইকারীকে গ্রেপ্তারের কথা জানান ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার এ কে এম হাফিজ আক্তার।
হাফিজ আক্তার বলেন, গ্রেপ্তাররা হামিদুলকে হত্যার কথা স্বীকার করেছেন। এদের মধ্যে শাকিল একজন রিকশাচালক। অ্যারাবিয়ান সোহেল হচ্ছে হোতা। তার সঙ্গে জাহিদ ও শুক্কুর আলী সহযোগী। আর সোহেল মিয়া ছিনতাইয়ের মালামাল ক্রয়কারী। হামিদুলের ছিনতাই হওয়া মোবাইলও সোহেল মিয়াই কিনেছিলেন। তাদের সবার বাসা কামরাঙ্গীরচর এলাকায়।’
ডিবি কর্মকর্তা বলেন, ব্যাটারিচালিত রিকশা চালানো শাকিলের ছদ্মবেশ। সে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় রিকশা চালাত এবং টার্গেট ব্যক্তিকে নির্জন জায়গায় নিয়ে ছিনতাই করত। প্রতিবন্ধী হওয়ায় মানুষের সহানুভূতিও কাজ করত তার প্রতি। পুলিশও সহজে তাকে কিছু বলত না। যার ফলে ব্যাটারিচালিত রিকশা নিয়ে সব সড়কে চলাচল করতে পারত।
এদের বিরুদ্ধে ১০টি করে ছিনতাই মামলা রয়েছে উল্লেখ করে ডিবির অতিরিক্ত কমিশনার বলেন, প্রত্যেক মামলাতেই তারা জামিনে রয়েছেন। অ্যারাবিয়ান সোহেল গত সাত মাস আগে জেল থেকে বের হয়েছেন আর হাতকাটা শাকিল এক বছর আগে বেরিয়েছিলেন। বের হয়ে পুনরায় তারা ছিনতাইয়ে নামে। হামিদুল হত্যার সঙ্গে এরা সবাই জড়িত। ঘটনায় ব্যবহৃত একটি চাকু ও রিকশা জব্দ করা হয়েছে। আর হামিদুলের ব্যবহৃত মোবাইল ফোন ও মানিব্যাগ উদ্ধার করা হয়েছে।
এক প্রশ্নের জবাবে এই গোয়েন্দা পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, বিভিন্ন কারণে ঢাকা শহরে ছিনতাই কিছুটা বেড়েছে। এর কারণে রাজধানীতে পুলিশের টহল বাড়ানো হয়েছে। ডিবি পুলিশের ৩৩টি টিম কাজ করছে। ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটলে অনেকে পুলিশের কাছে আসতে চান। তিনি ভুক্তভোগীদের অনুরোধ করেন যাতে থানায় গিয়ে মামলা করা হয়। কারণ ডিবি পুলিশ মামলা নিয়ে কাজ করে। গুরুত্ব দিয়ে প্রত্যেকটি মামলা ধরে ধরে কাজ করা হচ্ছে। ছিনতাই কিছুটা বাড়ার ফলে ডিবি পুলিশ গত ১৬ জানুয়ারি থেকে রাজধানীতে বিশেষ অভিযান শুরু করেছে বলেও জানান তিনি।
অপর এক প্রশ্নের জবাবে হাফিজ আক্তার বলেন, ‘রাজধানীতে কতগুলো ছিনতাই স্পট আর কতগুলো ছিনতাইকারী গ্রুপ আছে তা বলা যাচ্ছে না। তবে ছোট ছোট কিছু গ্রুপ নতুন করে তৈরি হয়েছে তা নিয়ে কাজ করা হচ্ছে। আবার রাস্তার ধারে যারা নেশা করত তারাও ছিনতাইয়ের সঙ্গে জড়িত হচ্ছে। সেদিকেও নজর দেওয়া হচ্ছে।’
পিডিএসও/হেলাল