কক্সবাজার প্রতিনিধি
রামুতে কলেজ ছাত্রকে ইয়াবা দিয়ে ফাঁসালেন এসআই জয়নাল
কক্সবাজারের কুতুবদিয়া থানা থেকে বদলি হয়ে আসা রামু থানার এসআই জয়নালের বিরুদ্ধে এক কলেজ ছাত্রকে বাড়ি থেকে ধরে নিয়ে ৯৫ পিস ইয়াবা দিয়ে ফাঁসানোর অভিযোগ উঠেছে। শুধু ফাঁসানো নয়, বাড়ির মালামাল ভাংচুর ছাড়াও ছাত্রকে ছেড়ে দিতে ৫০ হাজার টাকাও নিয়েছে।
রামুর চাকমারকুল ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ডের ওমর আলী সওদাগরপাড়ার বাসিন্দা সাবেক ইউপি সদস্য আরেফা বেগমের বাড়িতে গত ২৯ জুলাই রাত ২টায় এ হামলা ও ভাংচুরের ঘটনা ঘটে।
এ ঘটনার প্রতিবাদে ৩১ জুলাই দুপুরে মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ করেন এলাকাবাসী। ক্ষুব্দ এলাকাবাসী অবিলম্বে এ ঘটনায় জড়িত পুলিশ সদস্যদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি এবং মিথ্যা মামলার শিকার কলেজ ছাত্রের মুক্তির দাবি জানিয়েছেন।
এ ব্যাপারে ন্যায় বিচার চেয়ে পুলিশ প্রধানসহ সরকারের বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ ছাড়াও ভুক্তভোগী পরিবার মামলার প্রস্তুতি নিচ্ছেন বলে জানা গেছে।
সাবেক ইউপি সদস্য আরেফা বেগম জানিয়েছেন, ওইদিন রাতে হঠাৎ ভাংচুরের শব্দ শুনে বাড়ির সদস্যরা দেখতে পান মুখে মাস্ক ও সাদা পোষাক পরিহিত একদল লোক বাড়ির গ্রিল ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করে। তারা প্রথমে ডাকাত ভেবেছিলেন। পেছনে স্থানীয় পরিষদের চৌকিদার শামসুকে দেখে বুঝতে পারেন ভাংচুরকারীরা পুলিশের সদস্য।
এ সময় হামলাকারী রামু থানার এসআই জয়নাল আবেদিন, এসআই মংছাই মার্মা ও এএসআই একরামসহ কয়েকজন তার কাছ থেকে এক লাখ টাকা দাবি করেন। টাকা না দিলে ছেলেকে ইয়াবা মামলায় ফাঁসানোর হুমকি দেন। তিনি তার ছেলে ইয়াবা ব্যবসায় জড়িত নয় মর্মে জানিয়ে টাকা দিতে অপারগতা জানান। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে ওই পুলিশ কর্মকর্তা জয়নাল ও সদস্যরা ফের বাড়িতে ভাংচুর ও লুটপাট শুরু করে। ভাংচুর চলাকালে বাড়িতে বেড়াতে আসা তার মেয়ে ও ছোট শিশুরা (নাতি) আতংকিত হয়ে পড়ে। পুলিশ সদস্যরা তাদের সাথে অশ্লীল আচরণ করে পুরো বাড়ির মালামাল ভাংচুর করে। লুটপাট করে গুরুত্বপূর্ণ মালামাল।
তিনি আরও জানান, পুলিশ সদস্যরা দীর্ঘ আধঘণ্টা ধরে বিভিন্ন সরঞ্জাম দিয়ে ভাংচুরের কারণে পুরো বাড়িটি একটি ধ্বংস স্তুপে পরিণত করা হয়।
আরেফা বেগমের স্বামী হাবিবুর রহমান জানান, পুলিশ সদস্যরা এমন নজিরবিহীন ভাংচুর-লুটপাটের পর কক্সবাজার সরকারি কলেজে ডিগ্রি ২ বর্ষে অধ্যয়নরত আমার ছেলে আশিকুর রহমান রনিকে থানায় নিয়ে যায়। এরপর তাকে ছেড়ে দেওয়ার আশ্বাসে আমার কাছ থেকে টাকা দাবি করলে আমি পরদিন (৩০ জুলাই) এসআই জয়নাল ও এসআই মংছাই মার্মাকে ৫০ হাজার টাকা দেই। কিন্তু টাকা নেওয়ার পরও আমার ছেলেকে থানা থেকে ছেড়ে না দিয়ে উল্টো ৯৫ পিস ইয়াবা পেয়েছে মর্মে সাজানো মামলায় জড়িয়ে কোর্টে পাঠায়।
মামলার এজাহারে ঘটনাস্থল দেখানো হয়েছে চাকমারকুলে। অথচ আমার ছেলেকে কোনো মাদক ছাড়াই রাতে বাড়ি থেকে তুলে নেওয়ার সময় আশপাশের শত শত মানুষ দেখেছে। এছাড়া মামলার এজাহারে আমার ছেলের লুঙ্গী কোছা থেকে ইয়াবা উদ্ধারের কথা বলা হলেও কোর্টে চালান দেওয়ার সময় তদন্তকারী কর্মকর্তা লিখেছেন তার প্যান্টের ডান পকেট থেকে এসব ইয়াবা পেয়েছেন। মূলত মিথ্যা মামলা সাজাতে গিয়ে পুলিশও বেসামাল হয়ে গেছে।
এদিকে বর্বরোচিত এ হামলা-লুটপাটের ঘটনায় প্রধানমন্ত্রী, আইজিপি, ডিআইজি, পুলিশ সুপার সংশ্লিষ্ট সরকারি দপ্তরে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন গৃহকর্তা হাবিবুর রহমান ও তার স্ত্রী আরেফা বেগম। তারা সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে এ ঘটনার যথাযথ বিচার দাবি করেছেন। এছাড়া কক্সবাজার জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারকে ঘটনাস্থল সরেজমিন পরিদর্শনেরও অনুরোধ জানিয়েছেন তারা।
পিডিএসও/হেলাল