reporterঅনলাইন ডেস্ক
  ১৭ মার্চ, ২০২৩

বঙ্গবন্ধুর জীবনাদর্শ হোক বাঙালির প্রেরণা 

ছবি : সংগৃহীত

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ১০৩তম জন্মবার্ষিকী আজ। পুরো জাতির জন্য এ এক আনন্দঘন দিন। জাতি আজ শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করবে বঙ্গবন্ধুকে। বাঙালি জাতির হাজার বছরের ইতিহাস ছিল পরাধীনতার। সেই গ্লানি থেকে এ জাতি মুক্ত হয়েছে যার নেতৃত্বে, তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তাই তো তিনি হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি ও বাংলাদেশ রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠাতা। জাতির পিতার প্রতি রইল আমাদের পরম শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা।

১৯২০ সালের এই দিনে গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ার এক নিভৃত পল্লীতে জন্মেছিলেন বঙ্গবন্ধু। সেদিন তার আশপাশের কেউ ঘুণাক্ষরেও বুঝতে পারেননি, সেই নবজাতকই এক দিন হবেন বাঙালির ভাগ্যনিয়ন্তা, তাদের জন্য গড়ে তুলবেন একটি স্বাধীন-সার্বভৌম রাষ্ট্র। বঙ্গবন্ধুর স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি হওয়া কোনো আকস্মিক ঘটনা নয়। এমন নয় যে, বাঙালি হঠাৎ করেই পেয়ে গেছে তাদের স্বাধীন ভূমি। প্রকৃতপক্ষে বাঙালির জন্য একটি স্বাধীন রাষ্ট্র নির্মাণের স্বপ্ন দেখেছিলেন বঙ্গবন্ধু। ছাত্রাবস্থাতেই তিনি জড়িয়ে পড়েছিলেন রাজনীতিতে। অতঃপর ভাষা আন্দোলন পেরিয়ে ১৯৬৬ সালে তিনি প্রণয়ন করেছিলেন বাঙালির মুক্তিসনদ ছয় দফা। বস্তুত এই ছয় দফার ভিত্তিতেই বাঙালি জাতি তাদের স্বাধিকার আন্দোলন, অতঃপর ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল। ১৯৪৭-এর ভারত বিভাগের পর থেকে ১৯৭১ সাল পর্যন্ত রাজনীতির বিভিন্ন বাঁকে তিনি বাঙালিকে উদ্বুদ্ধ করেছিলেন স্বনিয়ন্ত্রিত শাসনের পক্ষে। তারই অক্লান্ত পরিশ্রম, রাজনৈতিক দূরদর্শিতা ও প্রজ্ঞার ফসল আজকের স্বাধীন বাংলাদেশ। দীর্ঘ ৯ মাস রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের পর ১৯৭১-এর ১৬ ডিসেম্বর দেশ স্বাধীন হলে ৭২-এর ১০ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু পাকিস্তানের কারাগার থেকে ফিরে এসে রাষ্ট্র পরিচালনার গুরুদায়িত্ব কাঁধে তুলে নিয়েছিলেন। একটি যুদ্ধবিধ্বস্ত নতুন রাষ্ট্রে সেটা ছিল তার জন্য এক বড় চ্যালেঞ্জ। সেই চ্যালেঞ্জ তিনি গ্রহণ করেছিলেন ইতিহাসেরই দায় থেকে। সফলও হয়েছিলেন। রাষ্ট্রের অবকাঠামো নির্মাণ থেকে শুরু করে বিদেশি রাষ্ট্রগুলোর স্বীকৃতি আদায় প্রতিটি ক্ষেত্রেই তিনি কৃতিত্বের সঙ্গে নেতৃত্ব দিয়েছেন। কিন্তু পরিতাপের বিষয়, তিনি যখন জাতিকে সফল নেতৃত্ব দিয়ে যাচ্ছিলেন, ঠিক তখনই ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট, একদল বিপথগামী সেনা সদস্য তাকে সপরিবারে নির্মমভাবে হত্যা করে। তার মৃত্যুর মধ্য দিয়ে জাতি হারায় তাদের মুক্তিদাতা এক মহান নেতাকে। বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারীরা চেয়েছিল ইতিহাসের চাকাকে পেছন দিকে ঘুরিয়ে এই রাষ্ট্রকে আবারও পাকিস্তানি আদলে গড়ে তুলতে। তাদের সেই অপচেষ্টা সফল হয়নি। বাঙালি জাতি তার হত্যাকাণ্ডকে জানিয়েছে চরম ঘৃণা, বিচার করা হয়েছে হত্যাকারীদের। এ বিচারের মধ্য দিয়ে জাতি কলঙ্কমুক্ত হয়েছে বলা যায়।

বলা বাহুল্য, একবিংশ শতাব্দীর এ পর্যায়ে এসে আজও বঙ্গবন্ধুর আদর্শ প্রাসঙ্গিক আমাদের জন্য। তিনি চেয়েছিলেন একটি শোষণহীন, বৈষম্যহীন উন্নত সমাজ গড়তে। একই সঙ্গে তিনি লালন করতেন উন্নত গণতান্ত্রিক চেতনা। তার এই আদর্শের আলোকেই গড়ে তুলতে হবে আমাদের প্রিয় মাতৃভূমিকে। বঙ্গবন্ধু ছিলেন অসাম্প্রদায়িক চেতনার অধিকারী। তার জীবনাদর্শকে ধারণ করেই এগিয়ে যেতে হবে আমাদের। দেশে রাজনৈতিক বিভাজন রয়েছে, সেটা থাকতেই পারে। একটি গণতান্ত্রিক সমাজের সৌন্দর্যই হলো চিন্তার বৈচিত্র্য। কিন্তু জাতির পিতা হিসেবে বঙ্গবন্ধুকে আমাদের সর্বসম্মতভাবে তুলে ধরতে হবে সব বিতর্কের ঊর্ধ্বে। তিনি সর্বকালের শ্রেষ্ঠ বাঙালি, এই সত্য মানতে হবে সবাইকেই আর এটাই আমাদের প্রত্যাশা।

পিডিএসও/এমএ

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
বঙ্গবন্ধুর জীবনাদর্শ,বঙ্গবন্ধু,বাঙালির প্রেরণা
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close