নিজস্ব প্রতিবেদক

  ১৪ আগস্ট, ২০২০

শোকাবহ আগস্ট

বঙ্গবন্ধু নিপীড়িতদের মুখে প্রতিবাদের ভাষা জুগিয়েছিলেন

বাঙালির হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ সন্তান, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ছিলেন এক জ্যোর্তিময় নক্ষত্র যার আলোকচ্ছটায় আলোকিত হয়েছিল বাঙালি ও বাংলা। উদ্দীপ্ত হয়েছিল অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে। তিনিই হাজার বছরের বঞ্চিত বাঙালির মুখে প্রতিবাদের ভাষা জুগিয়েছিলেন। ঘুমিয়ে পড়া বাঙালিকে রাজপথে আন্দোলন-সংগ্রামে টেনে নিয়ে এসেছিলেন। নেতৃত্বগুণে সব বাঙালিকে যুদ্ধবিধ্বস্ত স্বাধীন দেশ গড়ার কাজে নিয়োজিত করেছিলেন। দেশজুড়ে শুরু হয়েছিল বিশাল কর্মযজ্ঞ। ফলে সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশ বিশে^র দরবারে মাথা তুলে দাঁড়াতে শুরু করেছিল। কিন্তু হায়! ওই কর্মযজ্ঞ থেমে গিয়েছিল ভয়াল ১৫ আগস্টে। সেদিন ভোরে পুরো ধরত্রীই থমকে গিয়েছিল, বেদনায় মুষড়ে পড়েছিল বিষম। বাতাস ফুঁপিয়ে কেঁদেছিল, আকাশ হয়ে গিয়েছিল অধিক শোকে পাথর।

সৃষ্টির পর থেকে এমন শোকের ঘটনা বিশ্ব প্রকৃতি আর কখনই বোধহয় প্রত্যক্ষ করেনি। এমন বিশ্বাসঘাতকতাও বোধহয় আর কখনই দেখেনি। তাই পুরো বিশ্ব প্রকৃতিই হয়ে গিয়েছিল নিস্তব্ধ, শোকে মুহ্যমান পাষাণ। যে মহান ব্যক্তি একটি স্বাধীন দেশ উপহার দিলেন, তাকে তারই দেশের মানুষের হাতে সপরিবারে নির্মমভাবে প্রাণ দিতে হয়েছে। এর চেয়ে শোকের, বিস্ময়ের আর কী থাকতে পারে। শুধু তাই নয়, যাদের জন্য তিনি আজীবন মরণপণ লড়াই করে গিয়েছিলেন, যাদের সুখের জন্য, যাদের মুখে হাসি ফোটানোর জন্য নিজের জীবনের সব আরাম-আয়েশ ত্যাগ করেছিলেন, জেলজুলুম-অত্যাচার-নির্যাতন সহ্য করেছিলেন—তারাই তার নির্মম মৃত্যুতে উচ্চৈঃস্বরে কাঁদতে পারেনি। ঘাতকের উদ্ধত সঙ্গিন তাদের কাঁদতে দেয়নি, পিতা হারানোর শোকগাথা তৈরি করতে দেয়নি।

১৫ আগস্টের ওই ভোররাতটি ছিল বাঙালি জাতির ইতিহাসে সবচেয়ে কলঙ্কময়, অশ্রুভেজা এক ভোররাত। ওই রাতের কথা ৫৬ হাজার বর্গমাইল জনপদের প্রতিটি ধূলিকণা কখনো ভুলতে পারবে না। পারা সম্ভবও নয়। রক্তের কালিতে লেখা ওই রাতের শোকগাথা বীণার করুণ সুর হয়ে বাঙালির হৃদয়ে বেজে চলে অনবরত।

বঙ্গবন্ধুর নির্মম ওই হত্যাকাণ্ডের খবরে পৃথিবীবাসী শোকে মুহ্যমান হয়ে গিয়েছিল। পত্রিকার পাতাজুড়ে ছিল ওই শোকের সংবাদ। নোবেলজয়ী পশ্চিম জার্মানির নেতা উইলি ব্রানডিট তখন বলেছিলেন, ‘মুজিবকে হত্যার পর বাঙালিদের আর বিশ্বাস করা যায় না। যে বাঙালি শেখ মুজিবকে হত্যা করতে পারে, তারা যেকোনো জঘন্য কাজ করতে পারে।’ ভারতীয় বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ নাগরিক ও বিশিষ্ট সাহিত্যিক নীরদ শ্রী চৌধুরী বাঙালিদের ‘বিশ্বাসঘাতক’ হিসেবে বর্ণনা করে বলেছেন, ‘বাঙালি জাতির স্বপ্নদ্রষ্টা শেখ মুজিবকে হত্যার মধ্য দিয়ে বাঙালি জাতি বিশ্বের মানুষের কাছে নিজেদের আত্মঘাতী চরিত্রই তুলে ধরেছে। টাইমস অব লন্ডন পত্রিকার ১৬ আগস্টের সংখ্যায় বলা হয়, ‘সবকিছু সত্ত্বেও বঙ্গবন্ধুকে সব সময় স্মরণ করা হবে। কারণ তাকে ছাড়া বাংলাদেশের বাস্তব কোনো অস্তিত্ব নেই।’ ওইদিন লন্ডন থেকে প্রকাশিত ডেইলি টেলিগ্রাফ পত্রিকায় বলা হয়েছে, ‘বাংলাদেশের লাখ লাখ লোক শেখ মুজিবের জঘন্য হত্যাকাণ্ডকে অপূরণীয় ক্ষতি হিসেবে বিবেচনা করে যাবে আজীবন।’ কিউবার বিপ্লবী নেতা ফিদেল ক্যাস্ত্রো বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে বলেছিলেন, ‘আমি হিমালয় দেখিনি। কিন্তু শেখ মুজিবকে দেখেছি। ব্যক্তিত্বে, সাহসিকতাই এ মানবই হিমালয়। আর এভাবেই আমি হিমালয় দেখার অভিজ্ঞতা লাভ করেছি।’ ভারতের সাবেক রাষ্ট্রপতি এপিজে আবদুল কালামের ভাষায়—বঙ্গবন্ধু নিজেই ছিলেন ‘ঐশ্বরিক আগুন’ এবং তিনি নিজেই ওই আগুনে ডানা যুক্ত করতে পেরেছিলেন। ব্রিটিশ হাউস অব লর্ডসের সদস্য ও সাম্রাজ্যবাদবিরোধী শীর্ষস্থানীয় যোদ্ধা ফেনার ব্রকওয়ে বলেন, ‘সংগ্রামের ইতিহাসে লেনিন, রোজালিনবার্গ, গান্ধী, নকুমা, লুমুম্বা, ক্যাস্ত্রো ও আলেন্দের সঙ্গে মুজিবের নামও উচ্চারিত হবে। শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যা করা ছিল মানব হত্যার চেয়ে অনেক বড় অপরাধ। শেখ মুজিব শুধু তার জনগণের রাজনৈতিক স্বাধীনতার জন্যই সংগ্রাম করেননি। তিনি তাদের সামাজিক ও অর্থনৈতিক মুক্তির জন্যও সংগ্রাম করেছিলেন।’

বঙ্গবন্ধু আমাদের মাঝে নেই। কিন্তু আছে তার আদর্শ। বঙ্গবন্ধুর চিন্তা ও দর্শন তথা আদর্শ বাঙালি জাতির পথ চলার পাথেয়। এর মধ্যে দিয়েই তিনি বাঙালির কাছে চিরঞ্জীব হয়ে থাকবেন। তিনি অনশ্বর প্রতিভাস হয়ে বাংলার মানুষকে তার আদর্শে বলীয়ান করে যাবেন, অনুপ্রাণিত করে যাবেন। আর মানুষ তাকে স্মরণ করে যাবে পরম শ্রদ্ধাভরে। এজন্যই কবি সুফিয়া কামাল বলেছিলেন, ‘এই বাংলার আকাশ-বাতাস, সাগর-গিরি ও নদী/ডাকিছে তোমারে বঙ্গবন্ধু, ফিরিয়া আসিতে যদি/হেরিতে এখনও মানবহৃদয়ে তোমার আসন পাতা/এখনও মানুষ স্মরিছে তোমারে, মাতা-পিতা-বোন-ভ্রাতা।’

বঙ্গবন্ধুর আদর্শ বুকে ধারণ করে তার কন্যা শেখ হাসিনা দেশকে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে গেছেন। মধ্যম আয়ের দেশের কাতারে পৌঁছে দিয়েছেন বাংলাদেশকে। উন্নয়নের মহাসড়কে দেশকে নিয়ে গেছেন। যুদ্ধাপরাধী ও বঙ্গবন্ধুর খুনিদের বিচারের মাধ্যমে দেশকে কলঙ্কমুক্ত করেছেন। দিগভ্রান্ত প্রজন্মের মধ্যে ছড়িয়ে দিয়েছেন মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও বঙ্গবন্ধুর আদর্শ।

পিডিএসও/হেলাল

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
প্রতিবাদের ভাষা,বঙ্গবন্ধু,নিপীড়িত,শোকাবহ আগস্ট,শেখ মুজিবুর রহমান
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MySQL server version for the right syntax to use near 'WHERE news_id=228771' at line 3
Error!: SQLSTATE[23000]: Integrity constraint violation: 1062 Duplicate entry '228771' for key 'news_hits_counter.news_id'