কবীর হোসেন
হৃদয়ে যার বঙ্গবন্ধু, বাংলাদেশ এবং বাংলা কবিতা

গত শতাব্দীর সাত দশ থেকে চলতি দশক পর্যন্ত সমান তালে নিজেকে সক্রিয় রাখাদের মধ্যে কবি সাইফুল্লাহ মাহমুদ দুলাল একজন। তার সময়ের বা তার পরের আশির বা তার পরের নব্বইয়ের বেশির ভাগ কবিই যখন নিষ্প্রভ, তখন সাইফুল্লাহ মাহমুদ দুলাল আরো বেশি সক্রিয়। জীবনের নানা বাঁকবদলেও তিনি কবিতাকে হাতছাড়া করেননি। প্রতিনিয়ত লিখছেন বাংলাদেশের কবিতা।
কবি সাইফুল্লাহ মাহমুদ দুলালের কবিতা নানা কারণে আমার পছন্দ। কারণ তিনি যেকোনো বিষয় নিয়ে যখন-তখন লিখতে পারেন। এ স্বতঃস্ফূর্তা আমার মতে একজন কবির জন্য আবশ্যিক। তা ছাড়া তার অনেক লাইন আছে, যা মন থেকে মুছে ফেলা কঠিন। যেমন বিশ-কুড়ি বছর আগে তার লেখা দৈনিকে প্রকাশিত একটি লাইন এখনো মনে পড়ে। তার একটি কবিতা পড়ে বাসে যেতে যেতে হেসেছিলাম—‘বাস তেল নিচ্ছে, শিশু তার মাকে প্রশ্ন করছে : মা, বাস কী ফিডার খায়?’ এ রকম স্মরণীয় লাইন না থাকলে তাকে কবি বলা যায় না।
দুলালের প্রথম কবিতার বই ‘তৃষ্ণার্ত জলপরী’, দ্বিতীয় কাব্যগ্রন্থ ‘শহরের শেষ বাড়ি’ এতই প্রিয় ছিল, বাসাভাড়া নিতে গেলে শহরের শেষ বাড়ি খুঁজতাম, তার কবিতাগ্রন্থের নামকরণ অনুসরণে। গলির শেষ মাথার বাড়িটিই ভাড়া নিতাম প্রায়ই।
এখন তিনি দেশে থাকেন না, থাকেন কানাডায়। কিন্তু তা সত্ত্বেও তার লেখায় দেশের প্রতিটি মুহূর্ত সমানতালে গ্রন্থিত হয়। যারা না জানেন তিনি কানাডা থাকেন, তাদের কাছে মনে হবে—তিনি এখনো মিরপুরই থাকেন বা শাহবাগে গেলেই তার সঙ্গে দেখা হয়ে যাবে। এর কারণ কবিতায় তার নিত্যকার উপস্থিতি এবং এ কথা নিসংকোচেই বলা যায়, তার প্রতিটি বাক্যই মানসম্পন্ন।
২.
সমসাময়িকই শুধু নয়, আগে-পরেও বঙ্গবন্ধুর প্রতি তার মতো এমন নিবেদন খুব কমই চোখে পড়ে। একমাত্র নির্মলেন্দু গুণ ছাড়া। সরকারি চাকরি অবস্থাতেও তিনি বঙ্গবন্ধুকে গুঁজে দিতেন কবিতায় কিংবা যেকোনো লেখায়। ফলে সরকারি চাকরিও হারাতে হয়েছে তাকে। কিন্তু তা বলে দমে থাকেননি। সত্যিকার প্রেমিক কখনো প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করেন না।
সত্তর দশকের এ কবির শুধু বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে লেখা মৌলিক গ্রন্থের সংখ্যাই নয়টি। সম্পাদিত আরো চারটি। এখনো দুটি যন্ত্রস্থ।
একজন শক্তিমান কবির হাতে বইগুলো প্রকাশিত হওয়ায় মানের দিক থেকেও নিশ্চিত হওয়া যায়। বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে নানা দৃষ্টিকোণ ও লোভ থেকে এখন বহু রংচঙা বই বের হলেও, দুঃসময়ে বঙ্গবন্ধুর ওপর গ্রন্থ প্রকাশ করা ও মানরক্ষা করে গ্রন্থ প্রকাশের গুরুত্ব সব সময়ই আলাদা, যা সাইফুল্লাহ মাহমুদ দুলাল চার দশক ধরে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন।
পিডিএস/মীর