অনিল সেনের কবিতা ও কবিতাভাবনা
কবিতা কেন লিখি—এমন প্রশ্নের উত্তর দেওয়া কঠিন। কবিতা লিখি এটাও জোর দিয়ে বলতে পারি না। কোনটা কবিতা কোনটা কবিতা না, সেটাও বলা মুশকিল। তাই বলার জন্য নাম দিয়েছি ‘অ-কবিতা’। দেশ-বিদেশের কবির কবিতা পড়ে বরাবরই মনে হয়েছে—কবিতা লেখা সহজ নয়। রুমি, রবীন্দ্রনাথ, নজরুল, সুকান্ত, হেরমান হেসসহ অনেকের কবিতা আমার বোধকে জাগিয়ে তোলে। তাদের পড়ে মনে হয়েছে—কবিতায় ভাবনা, ভাবের গভীরতা ও সরলতার সঙ্গে বার্তা থাকা জরুরি।
বঞ্চিত অধিকার
স্বার্থের চশমায় ডুবে আছে দুনিয়ানগর
মেঘের জলটুকুও শুষে নেয় উদরভর্তি
দিনের তারার মতো অসহায়ত্ব নিয়ে বাঁচে
বঞ্চিত অধিকার।নিদারুণ কষ্টে দাঁত কেলিয়ে হাসে লুটেরা,
সময়টা বড্ড বেশি তাদের
জীর্ণ কুটিরে ভাবলেশহীন পড়ে থাকে সর্বহারা
কী হওয়ার কথা ছিল আর কি সব হচ্ছে!অতঃপর,
ডুবে থাকার সময় নয়, চশমা খোলাও
মানুষেরা এভাবে হেরে যেতে পারে না!
নতুন প্রভাত সমাগত; জেগে ওঠো
অপেক্ষার প্রহর গুনছে অধিকার।
আমিও জ্বলছি দাউদাউ
মাঠে সূর্য জ্বলে
শিশুরা আলো ধরে আর পকেটে ভরে!
বললাম, আলো ভরো কেন?
ওরা বলল, না! আমরা আলো ভরি না, খেলি।
এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে ধরি
আমরা শক্তি পাই, আমরা আকাশে উঠি।তাই তো বলি সূর্য কেন পোড়ে!
আসমানে তাকিয়ে দেখি আমিও জ্বলছি দাউদাউ।
অমন করে তাকালে বহুদিন পর
তুমি অমন করে তাকালে বহুদিন পর
ভাবিনি কখনো!
জানতে, টিপ আমার ভীষণ পছন্দের
নয়নযুগলে দেখিলাম,
পরেছো একদম ঠিকঠাক।তোমার টিপের হাসিতে রক্তজবা ফোটে
বৈশাখ সরিয়ে বসন্ত আনে,
খসে পড়ে রাতের তাঁরা।মলিন অঙ্গ গলে অমাবস্যার অন্ধকার তুমি অমন করে তাকালে বহুদিন পর।
দেখেছি তোমাকে
কেবল সূর্য উঠল
তাই নিয়ে আনন্দ কেন করো?
সাতসকালে সন্ধ্যা আরতির মতো হইচই কেন এত!
অন্যায় করেছি
মৃগয়া করতে বনে ছিলাম।
হিংস্রতার তাড়া খেয়ে মন্দিরে গিয়েছি
সেখানেও সূর্যের ছায়া ঘটে পড়েছিল
ব্যাঘ্ররূপে।
অন্যায় করেছি
দেখেছি হিংস্রতায় কম্পিত আসমান জমিন
আমি সূর্য দেখিনি, তোমাকে দেখেছি
কেবল সূর্য উঠল
তাই নিয়ে আনন্দ কেন করো?লেখক পরিচিতি : অনিল সেন। প্রাবন্ধিক, কবি ও সমাজচিন্তক। জন্ম কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরী উপজেলায়। থাকেন ঢাকায়। পেশা সাংবাদিকতা। প্রকাশিত বই ৩টি। সম্পাদনা করেন মাসিক ম্যাগাজিন ‘শেকড়’
পিডিএস/মীর