নিজস্ব প্রতিবেদক

  ২৫ মে, ২০২৩

জাতীয় কবির জন্মদিন আজ

জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের জন্মবার্ষিকী আজ। এ উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাণী দিয়েছেন। জাতীয় পর্যায়ে কবির জন্মবার্ষিকী উদযাপন উপলক্ষে ব্যাপক কর্মসূচি গ্রহণ করেছে সরকার। এছাড়া রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলো নানা কর্মসূচি নিয়েছে।

বাংলা একাডেমির পক্ষ থেকে এদিন সকাল ৮টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় মসজিদসংলগ্ন জাতীয় কবির সমাধিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হবে। এছাড়া বাংলা একাডেমির নজরুল মঞ্চে স্থাপিত নজরুল প্রতিকৃতিতেও শ্রদ্ধা জানানো হবে।

এ উপলক্ষে সকাল ৬টা ১৫ মিনিটে অপরাজেয় বাংলার পাদদেশে সমবেত হয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামানের নেতৃত্বে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও কর্মকর্তা-কর্মচারীরা শোভাযাত্রা নিয়ে সকাল সাড়ে ৬টায় কবির সমাধিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ ও ফাতেহা পাঠ করবেন। পরে উপাচাযের্র সভাপতিত্বে কবির সমাধি প্রাঙ্গণে এক আলোচনা সভা ও সংগীতানুষ্ঠানের আয়োজন করা হবে। কেন্দ্রীয় নজরুল একাডেমি জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের জন্মবার্ষিকী উদযাপনে নজরুল একাডেমি ভবনে কাজী নজরুল ইসলাম মিলনায়তনে (মগবাজার মোড় বেলালাবাদ কলোনী, ঢাকা) তিন দিনব্যাপি কর্মসূচির আয়োজন করেছে।

১৯৭২ সালের ২৪ মে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের উদ্যোগে কবি সপরিবারে বাংলাদেশে আসেন। বাংলাদেশ সরকার কাজী নজরুল ইসলামকে বাংলাদেশের নাগরিকত্ব প্রদান করে এবং জাতীয় কবি হিসেবে ঘোষণা দেন। মৃত্যুর আগপর্যন্ত তিনি বাংলাদেশেই ছিলেন। তার জীবনকাল ৭৭ বছর হলেও ১৯৪২ সালের জুলাইয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েন। এরপর দীর্ঘ ৩৪ বছর ১৯৭৬ সালের ২৯ আগস্ট মৃত্যুর আগপর্যন্ত তিনি অসহনীয় নির্বাক জীবন কাটিয়েছেন।

নজরুল ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনে তার লেখনী ধূমকেতুর মতো আঘাত হেনে জাগিয়ে দিয়েছিল ভারতবাসীকে। তার কবিতা, গান, উপন্যাসসহ অন্যান্য লেখনী ছিল পরাধীন ভারতে বিশেষ করে অবিভক্ত বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িকতা, সামন্তবাদ, সাম্রাজ্যবাদ ও উপনিবেশবাদের বিরুদ্ধে সবচেয়ে বলিষ্ঠ ও সোচ্চার কণ্ঠ। সে কারণে ইংরেজ সরকারের রোষানলে পড়তে হয়। তার গ্রন্থ ও রচনা বাজেয়াপ্ত করেছে এবং কারাদণ্ড দেয় ব্রিটিশ সরকার। কারাগারেও বিদ্রোহী নজরুল টানা ৪০ দিন অনশন করে বিদেশি সরকারের জেলজুলুমের প্রতিবাদ করেছিলেন।

তার কবিতা ‘চল্ চল্ চল্’ বাংলাদেশের রণসংগীত। কবির এমন অজস্র রচনা শুধু ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনেই নয়, আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধে বীর বাঙালিদের দিয়েছে শক্তি ও জুগিয়েছে প্রেরণা। এখনো সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে, শোষণ-বঞ্চনার বিরুদ্ধে, সব গণতান্ত্রিক আন্দোলন ও সংগ্রামে তার রচনা আমাদের গভীরভাবে উদ্দীপ্ত করে।

রবীন্দ্রসৃষ্ট বিশাল জগতের পাশে কবি নজরুল গড়ে তোলেন নিজস্ব জগৎ। সেখানে ফুটিয়ে তোলেন স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য। স্বয়ং রবীন্দ্রনাথ নজরুলের সদম্ভ অভ্যুদয়কে এ বলে স্বাগত জানিয়েছিলেন, ‘আয় চলে আয়রে ধূমকেতু, আঁধারে বাধ অগ্নিসেতু’।

সংগীতে নজরুলের অবদান বাঙালিকে চিরদিন স্মরণ রাখতে হবে। সংগীত বিশিষ্টজনদের মতে, রবীন্দ্রনাথ-পরবর্তী নজরুলের গান অনেকটাই ভিন্ন ধরনের নির্মাণ। অধিকাংশ গান সুর প্রধান। বৈচিত্র্যপূর্ণ সুরের লহরী কাব্যকথাকে তরঙ্গায়িত করে এগিয়ে নিয়ে যায়। সুরের বিন্যাসের ওপরে কথা ঢলে পড়ে। তার গানে বহু গায়ক সুর-স্বাধীনতা ভোগ করেন।

বেঁচেছিলেন ৭৭ বছর। জন্মের পর থেকে ৪৩ বছর পর্যন্ত স্বাভাবিক জীবন কাটিয়েছেন। এর মধ্যে সাহিত্য রচনার কাল ছিল মাত্র ২৪ বছর। এত স্বল্পসময়ে বাঙালির জীবনে নজরুলের দিগন্তবিস্তারি প্রভাব! কেন? গবেষকরা বলছেন, সাহিত্য রচনার সময়ের ব্যাপ্তি যাই হোক না কেন, নজরুলের প্রভাব শতাব্দী পেরিয়ে আজও সমানভাবে প্রাসঙ্গিক।

কাজী নজরুল ইসলামের জন্ম বাংলা ১১ জ্যৈষ্ঠ ১৩০৬/১৮৯৯ ইং। পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান জেলার চুরুলিয়া গ্রামে। দরিদ্র পরিবারে জন্মগ্রহণ করায় দুঃখ-দারিদ্র্য ছিল তার নিত্যসঙ্গী। ডাকনাম ছিল দুখু মিয়া। বাবার মৃত্যুতে পরিবারের ভরণপোষণের জন্য তিনি শিশু বয়সেই মক্তবে শিক্ষকতা, মাজারের খাদেম এবং মসজিদের মুয়াজ্জিনের কাজ করেছেন।

জন্মদিনে যত আয়োজন : ঢাকাসহ জাতীয় কবির স্মৃতিবিজড়িত ময়মনসিংহের ত্রিশাল, কুমিল্লার দৌলতপুর, মানিকগঞ্জের তেওতা, চুয়াডাঙ্গার কার্পাসডাঙ্গা এবং চট্টগ্রামে সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের পৃষ্ঠপোষকতায় ও স্থানীয় প্রশাসনের ব্যবস্থাপনায় যথাযোগ্য মর্যাদায় জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ১২৪তম জন্মবার্ষিকী উদযাপন করা হবে। এ উপলক্ষে নজরুল মালা, নজরুলবিষয়ক আলোচনা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজন করবে স্থানীয় প্রশাসন।

জাতীয় পর্যায়ের উদ্বোধন অনুষ্ঠান সরাসরি সম্প্রচারসহ অন্যান্য অনুষ্ঠানমালা বাংলাদেশ টেলিভিশন, বাংলাদেশ বেতার, বেসরকারি বেতার ও টেলিভিশন চ্যানেলগুলো ব্যাপকভাবে সম্প্রচার করবে।

জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ১২৪তম জন্মবার্ষিকীতে ময়মনসিংহ ও কুমিল্লায় নানা আয়োজন রয়েছে। প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর—

ময়মনসিংহ : জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের স্মৃতিধন্য ময়মনসিংহ জেলার ত্রিশালের দরিরামপুরে কবির জন্মবার্ষিকী উদযাপনের প্রতিপাদ্য হচ্ছে ‘অগ্নিবীণার শতবর্ষ : বঙ্গবন্ধুর চেতনায় শানিতরূপ।’ সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয় ও জেলা প্রশাসনের আয়োজনে তিন দিনব্যাপী (২৫-২৭ মে) অনুষ্ঠানের উদ্বোধনী দিনে প্রধান অতিথি থাকবেন জাতীয় সংসদ উপনেতা বেগম মতিয়া চৌধুরী।

বিশেষ অতিথি থাকবেন গৃহায়ণ ও গণপূত প্রতিমন্ত্রী শরীফ আহম্মেদ, গাজীপুর-৫ আসনের সংসদ সদস্য সিমিন হোসেন রিমি, ময়মনসিংহ-৭ আসনের সংসদ সদস্য ও ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয়সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সভাপতি মো. হাফেজ রুহুল আমিন মাদানী, ময়মনসিংহ-৩ আসনের সংসদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা নাজিম উদ্দিন আহম্মেদ, ময়মনসিংহের বিভাগীয় কমিশনার মো. শফিকুর রেজা বিশ্বাস, ময়মনসিংহ রেঞ্জের ডিআইজি দেবদাস ভট্টাচার্য্য বিপিএম, ময়মনসিংহের জেলা প্রশাসক মো. মোস্তাফিজার রহমান।

এছাড়া বক্তব্য দেবেন জাতীয় কবির দৌহিত্রী খিলখিল কাজী, ড. সৌমিত্র শেখর দে, উপাচার্য, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়, খলিল আহম্মেদ, সচিব, সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়। সভাপত্বিত করবেন কে এম খালিদ এমপি, প্রতিমন্ত্রী সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়।

কুমিল্লা : জাতীয় কবির স্মৃতিবিজড়িত কুমিল্লায় জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে ব্যাপক অনুষ্ঠানমালার প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে। অনুষ্ঠানমালার মধ্যে রয়েছে- সকাল ১০টায় কবি নজরুল ইন্সটিটিউট কেন্দ্রে শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণে সংগীত, রচনা আবৃত্তি ও নৃত্য প্রতিযোগিতা, সকাল সাড়ে ৯টায় জেলা শিল্পকলা একাডেমি প্রাঙ্গণে ‘চেতনায় নজরুল ম্যুরালে’ পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ। শিল্পকলা একাডেমিতে নজরুল জীবনভিত্তিক আলোকচিত্র ও বই প্রদর্শনী, ‘অগ্নিবীণায় শতবর্ষ, বঙ্গবন্ধুর চেতনায় শানিতরূপ’ শীর্ষক প্রবন্ধ উপস্থাপন, আলোচনা ও মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।

জাতীয় কবির জন্মবার্ষিকীর অনুষ্ঠানমালার উদ্বোধন করবেন প্রধান অতিথি সংসদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহার। প্রধান আলোচক থাকবেন শেখ হাসিনা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাকালীন উপাচার্য অধ্যাপক ড. রফিক উল্লাহ খান। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করবেন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শামীম আলম।

পিডিএস/মীর

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
জাতীয় কবি,জন্মদিন,কাজী নজরুল ইসলাম
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close