বুধবার শুরু বইমেলা, উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী
করোনাভাইরাস মহামারির পর প্রথমবারের মতো যথাসময়ে হচ্ছে অমর একুশে বইমেলা। আঙ্গিক ও বিন্যাসে বেশ কিছু পরিবর্তন আনা হয়েছে এবারের মেলায়। বুধবার (১ ফেব্রুয়ারি) মেলার মঞ্চে উপস্থিত থেকে উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপরই সাধারণ দর্শনার্থীর জন্য খুলে যাবে বাঙালির প্রাণের মেলার দুয়ার।
বইমেলা অনুষ্ঠিত হবে বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণ এবং ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের প্রায় সাড়ে ১১ লাখ বর্গফুট এলাকাজুড়ে। মেলায় ৬০১টি প্রতিষ্ঠানকে ৯০১টি ইউনিট বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। থাকছে ৩৮টি প্যাভিলিয়ন।
বইমেলার আঙ্গিক ও বিন্যাসে বেশ কিছু পরিবর্তন এনেছে কর্তৃপক্ষ। বিশেষ করে মেট্রোরেল স্টেশনের অবস্থানগত কারণে গতবারের মূল প্রবেশপথ এবার একটু সরিয়ে বাংলা একাডেমির মূল প্রবেশপথের উল্টো দিকে নেওয়া হয়েছে। ফলে এবার মন্দির-গেটটি মূল প্রবেশপথ হিসেবে ব্যবহৃত হবে। গতবারের প্রবেশপথটি বাহির-পথ হিসেবে চিহ্নিত থাকবে। এ ছাড়া টিএসসি, দোয়েল চত্বর এবং ইঞ্জিনিয়ারিং ইনস্টিটিউশন অংশে আরো ৩টি প্রবেশ ও বাহির-পথ থাকবে। গতবার ইঞ্জিনিয়ারিং ইনস্টিটিউশন অংশে ১৮২টি স্টল এবং ১১টি প্যাভিলিয়ন ছিল, সেখানে এ বছর নামাজের স্থান, ওয়াশরুমসহ অন্য পরিষেবা থাকবে। খাবারের স্টলগুলোকে এবার সুবিন্যস্ত করা হয়েছে।
শিশুচত্বরটি এবার মন্দির-গেটে প্রবেশের ঠিক ডান দিকে বড় পরিসরে রাখা হয়েছে। লিটল ম্যাগাজিন চত্বর স্থানান্তরিত হয়েছে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের গ্রন্থ-উন্মোচন অংশের কাছাকাছি। সেখানে ১৫৩টিসহ ৫টি উন্মুক্ত স্থানে লিটলম্যাগকে স্টল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।
বইমেলায় বাংলা একাডেমি এবং মেলায় অংশগ্রহণকারী অন্য প্রতিষ্ঠান ২৫ শতাংশ কমিশনে বই বিক্রি করবে। প্রতিদিন বিকাল ৪টায় বইমেলার মূল মঞ্চে সেমিনার এবং সন্ধ্যায় থাকবে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। প্রতি শুক্র ও শনিবার মেলায় সকাল ১১টা থেকে বেলা ১টা পর্যন্ত ‘শিশুপ্রহর’ থাকবে। অমর একুশে উদযাপনের অংশ হিসেবে শিশুকিশোর চিত্রাঙ্কন, আবৃত্তি এবং সংগীত প্রতিযোগিতার আয়োজন থাকবে। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে নতুন বইয়ের মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা থাকবে। প্রচার কাজের জন্য একাডেমিতে বর্ধমান ভবনের পশ্চিম বেদিতে ১টি ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ২টি তথ্যকেন্দ্র থাকবে। সরকারের ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ ধারণার অংশ হিসেবে ডিজিটাল ডিসপ্লেতে জমা করা নতুন বইয়ের প্রচ্ছদ, তথ্য এবং বইমেলার মানচিত্র পর্যায়ক্রমে প্রদর্শিত হবে।
মেলায় ওয়াইফাই সুবিধা থাকবে। বইমেলার প্রবেশ ও বাহির-পথে পর্যাপ্ত সংখ্যক আর্চওয়ের ব্যবস্থা করা হয়েছে। মেলার সার্বিক নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করবে বাংলাদেশ পুলিশ, র্যাব, আনসার, বিজিবি ও গোয়েন্দা সংস্থাসমূহ। মেলা এলাকাজুড়ে তিন শতাধিক ক্লোজসার্কিট ক্যামেরার ব্যবস্থা করা হয়েছে। বইমেলা থাকবে পলিথিন ও ধূমপানমুক্ত। পরিচ্ছন্নতা এবং নিয়মিত ধুলা নিবারণের জন্য পানি ছিটানো এবং প্রতিদিন মশক নিধনের সার্বিক ব্যবস্থা থাকবে। এ ছাড়া আশপাশের এলাকাতেও পর্যাপ্ত আলোর ব্যবস্থা রাখা হবে। মেলায় গুণগত মান বিচারে সেরা বইয়ের জন্য প্রকাশককে ‘চিত্তরঞ্জন সাহা স্মৃতি পুরস্কার’ এবং শৈল্পিক বিচারে সেরা বইয়ের জন্য ৩টি প্রতিষ্ঠানকে ‘মুনীর চৌধুরী স্মৃতি পুরস্কার’ দেওয়া হবে। শিশুতোষ গ্রন্থের জন্য ১টি প্রতিষ্ঠানকে ‘রোকনুজ্জামান খান দাদাভাই স্মৃতি পুরস্কার’ এবং স্টলের নান্দনিক সাজসজ্জায় শ্রেষ্ঠ বিবেচিত প্রতিষ্ঠানকে ‘কাইয়ুম চৌধুরী স্মৃতি পুরস্কার’ প্রদান করা হবে।
বইমেলার সূচি : বইমেলা ১ ফেব্রুয়ারি থেকে ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ছুটির দিন ছাড়া প্রতিদিন বেলা ৩টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত খোলা থাকবে। রাত সাড়ে ৮টার পর নতুন করে কেউ মেলা প্রাঙ্গণে প্রবেশ করতে পারবেন না। ছুটির দিন বইমেলা চলবে সকাল ১১টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত। ২১ ফেব্রুয়ারি শহীদ দিবস এবং আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে মেলা শুরু হবে সকাল ৮টা এবং চলবে রাত ৯টা পর্যন্ত।
পিডিএস/মীর