কান্তা আরিফিন

  ১২ জানুয়ারি, ২০২৩

বাংলা আমার : শুদ্ধ সংস্কৃতির জয় হোক

বাংলা সংস্কৃতির ইতিহাস হাজার বছরের। সময়ের পালাবদলে ক্রমশই হারিয়ে যাচ্ছে বাংলা সংস্কৃতির ঐতিহ্য। বৈদেশিক অপসংস্কৃতির প্রভাব পড়ছে নতুন প্রজন্মের উপরে। এর থেকে উত্তরণের জন্য প্রয়োজন শুদ্ধ বাংলা সংস্কৃতি চর্চা বেগবান করা। নতুন প্রজন্মের কাছে বাংলা সংস্কৃতিকে পৌঁছে দেওয়ার জন্য প্রতিজ্ঞাবদ্ধ একটি প্রতিষ্ঠানের নাম ‘বাংলা আমার’।

সংস্কৃতি চর্চা কেন্দ্র বাংলা আমার-এর যাত্রা শুরু হয় ২০১৭ সালের ২৩ ডিসেম্বর। বাংলা ভাষা, সংস্কৃতি, ইতিহাস ও মুক্তিযুদ্ধকে হৃদয়ে ধারণ করে ২০১৭ সাল থেকে বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতি সবার মাঝে ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে প্রতিষ্ঠানটি। রাজধানীর রমনা এবং মিরপুরে বাংলা আমার-এর দুটি সাংস্কৃতিক পাঠশালা রয়েছে, যেখানে কবিতা আবৃত্তি, নৃত্য, সংগীত, প্রমিত উচ্চারণ, বাদ্যযন্ত্র, উপস্থাপনাসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়। এছাড়া ইন্টারনেটের মাধ্যমে বাংলা আমার অনলাইনভিত্তিক দেশ ও দেশের বাইরে বাংলা ভাষাভাষী মানুষকে প্রশিক্ষণ প্রদান করে আসছে। বাংলা সংস্কৃতি বিকাশের জন্য বাংলা আমার বিভিন্ন শিরোনামে নিয়মিত অনুষ্ঠান আয়োজন করে থাকে এবং প্রতিবছর প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে একটি বর্ণিল উৎসব আয়োজন করে।


সংস্কৃতিবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী বলেন, গত চার বছরে কমপক্ষে ৪০০ অনুষ্ঠানে গিয়েছি। আজকের অয়োজনটি আমার কাছে মনে হচ্ছে শ্রেষ্ঠ আয়োজন


বাংলা আমার-এর ৫ম বর্ষপূর্তি উপলক্ষে ‘আবৃত্তি হউক গণমানুষের জন্য’ এই প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে গেল ৬ জানুয়ারি বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় সংগীত, নৃত্য ও আবৃত্তি মিলনায়তনে উদযাপন করে দিনব্যাপী বর্ণিল আয়োজন ‘বাংলা আমার আবৃত্তি উৎসব-২০২৩’। বরেণ্য আবৃত্তিশিল্পী, সংগঠক ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব হাসান আরিফের স্মৃতির প্রতি উৎসবটি উৎসর্গ করা হয়। রাজধানী ঢাকার এ উৎসবটি দেশের বিভিন্ন প্রান্তের সংস্কৃতিপ্রেমীর মিলনমেলায় পরিণত হয়। উৎসবে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আগত স্বনামধন্য ও জনপ্রিয় অর্ধশতাধিক আবৃত্তিশিল্পীর একক আবৃত্তি পরিবেশনা করেন। এছাড়া উৎসবে বাংলা আমার-এর শিল্পীরা একক আবৃত্তি, বৃন্দ আবৃত্তি, চিত্রাঙ্কন প্রদর্শনী, নৃত্য ও সংগীত পরিবেশন করেন। উৎসবে বাংলা আমার-এর প্রায় ৯০ জন শিক্ষার্থী ‘নমঃ বাংলাদেশ মম’ শিরোনামে একটি আবৃত্তি প্রযোজনায় অংশগ্রহণ করেন। প্রযোজনার মূল বিষয় ছিল মুক্তিযুদ্ধ ও দেশপ্রেম এবং এ পরিবেশনার দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে আগত ৪ বছরের শিশু থেকে শুরু করে বিভিন্ন বয়সী শিক্ষার্থী অংশগ্রহণ করেন। একটি আবৃত্তি পরিবেশনায় এতজন মানষের একত্রে অংশগ্রহণ একটি বিরল ঘটনা।

প্রতিবছর বাংলা আমার একজন গুণিজনকে সম্মাননা এবং একজন তরুণ প্রতিশ্রুতিশীল শিল্পীকে প্রণোদনা প্রদান করে থাকে। এবারের উৎসবে বরেণ্য আবৃত্তিশিল্পী ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব সৈয়দ হাসান ইমামকে ‘বাংলা আমার সম্মাননা-২০২৩’ এবং প্রতিশ্রুতিশীল আবৃত্তিশিল্পী ও সংগঠক মো. মুজাহিদুল ইসলামকে ‘বাংলা আমার প্রণোদনা-২০২৩’ প্রদান করা হয়। বাংলা আমার বর্ষসেরা সদস্যের স্মারক তুলে দেওয়া হয় আরিফা বেগম এবং তানিয়া আফসারকে। সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ এ উৎসবে প্রধান অতিথির আসন অলংকৃত করেন। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক ও বরেণ্য কবি মুহম্মদ নূরুল হুদা এবং বাংলাদেশ আবৃত্তিশিল্পী সংসদের আহ্বায়ক ও বরেণ্য আবৃত্তিশিল্পী জয়ন্ত চট্টোপাধ্যায়। আলোচনা পর্ব স্বাগত বক্তব্য রাখেন বাংলা আমার-এর সভাপতি মেহেদী হাসান আকাশ। সংস্কৃতিবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী তার বক্তব্যে বলেন, ‘গত চার বছরে আমি কমপক্ষে ৪০০ অনুষ্ঠানে গিয়েছি, আজকের অয়োজনটি আমার কাছে মনে হচ্ছে শ্রেষ্ঠ আয়োজন। জাতির ভবিষ্যৎ কাণ্ডারী শিশুসহ সকল বয়সী মানুষ নিয়ে ‘বাংলা আমার’ আবৃত্তি সংগঠন একটি অসাধারণ অনুষ্ঠান উপহার দিয়েছে, যা দেখে আমি সত্যিই মুগ্ধ ও অভিভূত হয়েছি। সংস্কৃতিকর্মীদের কাছে আমরা এ ধরনের পরিপাটি ও গোছানো অনুষ্ঠানই প্রত্যাশা করি।’

উৎসব বাস্তবায়নের জন্য নিরলসভাবে কাজ করে বাংলা আমার-এর নির্বাহী কমিটির সদস্যরা। উৎসব সমন্বয়কারী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন জয় আহমেদ, মমিনুর রহমান, জয়ানন্দ সেন, আরিফা বেগম এবং তানিয়া আফসার। সার্বিক তত্ত্বাবধানে ছিলেন জ্যোতির্ময় সাহা, কান্তা আরিফিন এবং মেহেদী হাসান আকাশ। উৎসবে সার্বিকভাবে সহযোগিতা করেন নিলুফার সুলতানা উর্মী, শামসুন নাহার, স্বর্ণলতা ঘোষ, সোমা সাহা, লুৎফুন্নাহার সোনিয়া, উমা ব্যানার্জী, জয়া কর্মকার, রঞ্জু নাহার মণি, মাহমুদা বিনতে আবেদীন, রাজিব গুহ, শাওলিন সূচি, মিতু আক্তার সীমা, মাহবুবা বেগম, লিন সরকার, নন্দিনী বর্মন, ফাল্গুনী মজুমদার, রিপন চৌধুরী, শাহনাজ দিপ্তি, মৌ ইসলাম, ফাহিম প্রমুখ। এছাড়া বাংলা আমার-এর উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য আল্লাদিত্তা মোহাম্মদ আলাউদ্দিন, আলী আকবর, দেওয়ান সাঈদুল হাসান, মাসকুর-এ-সাত্তার কল্লোল, ড. শাহাদাৎ হোসেন নিপু, মাসুম আজিজুল বাসার, ফজিলাতুন্নেছা এবং মজুমদার বিপ্লব উৎসবে সার্বিকভাবে সহযোগিতা করেন।

সংস্কৃতি চর্চা কেন্দ্র ‘বাংলা আমার’ বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে এগিয়ে চলেছে তার সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যে। বাংলা আমার শুদ্ধ সংস্কৃতিকে ছড়িয়ে দিতে চায় সবার মাঝে। গণমানুষের কাছে পৌঁছে দিতে চায় বাংলা সংস্কৃতির প্রতিটি বিষয়কে। একজন সংস্কৃতিপ্রেমী যেন যেকোনো শিল্পকে জীবিকা হিসেবে নিতে পারে, তা নিয়ে কাজ করে যাচ্ছে বাংলা আমার। অদূর ভবিষ্যতে দেশের প্রতিটি জেলায় সক্রিয় সাংস্কৃতিক পাঠশালা তৈরি করার স্বপ্ন দেখে বাংলা আমার। বাংলা আমার এগিয়ে যাক তার লক্ষ্যে, শুদ্ধ সংস্কৃতি চর্চার জয় হোক।

পিডিএস/মীর হেলাল

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
বাংলা আমার,সংস্কৃতি,আবৃত্তি
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close