এম এ মাসুদ
বউয়ের ভয়ে কোমরে চাবি!
অনেকদিন আগের কথা। এক গ্রামে বাস করতো এক হারকিপটে। পেশায় ছিলেন কেরানি। সেই সুবাদে নিচের শ্রেণিতে ক্লাসও নিতে হতো তাকে। পাঠদানে ভালো হওয়ায় একসময় প্রেমে পড়ে যান ছাত্রীর। শুরু হয় চিঠির মাধ্যমে মন দেওয়া-নেওয়ার পালা। এভাবে চলে বেশ কিছু দিন। শুধু চিঠির ভাষায় কি মন ভরে! ভরে না। তাই দুজনেই সিদ্ধান্ত নেন বিয়ের। মন দেওয়া-নেওয়ার সময় টের না পেলেও বিয়ের পর কিছু দিন যেতে না যেতেই বউ স্বপ্না বুঝতে পারে স্বামী সোহেলের কিপটেমি।
স্ত্রীর প্রতি ভালোবাসার কমতি না থাকলেও কমতি ছিল বিশ্বাসে। চুপি চুপি ধান, চাল, গম বিক্রি করে যাতে বেশি খরচ করতে না পারে সেজন্য ধান, চাল, গম, পেঁয়াজ, রসুন রাখা মাচার চাবি কোমরে বেঁধে রাখতো স্বামী। বেঁধে রাখা বাদ পড়তো না টাকা-পয়সা রাখার ড্রয়ারের চাবিও। কোনো চাবিই ধরতে দিত না স্বপ্নাকে। গোসল করতে গেলেও কোমর থেকে খুলে রাখতো না সেই চাবির গোছা। ভয়, বউ যদি আবার খুলে নেয় কোনো চাবি! তবে যে সর্বনাশ হয়ে যাবে তার। কোমরে ছোট, বড়, মাঝারি কয়েক ধরনের চাবি থাকায় চলার পথে ঝনঝন করে বেজে ওঠে তা।
যা হোক, বছর ঘুরতে না ঘুরতেই স্বপ্নার কোলজুড়ে আসে একটি ফুটফুটে পুত্র সন্তান। ভাবে, এবার বুঝি কিপটেমি দূর হবে সোহেলের। আদর করে নাম দেয় বন্ধন। মায়ের মমতায় বেড়ে উঠতে থাকে সে। সন্তানের আবদার পূরণ করতে গিয়ে হাত খরচ বেড়ে যায় স্বপ্নার। কিন্তু উপায় তো নেই, সংসারের চাবি যে স্বামীর কাছে। স্কুলে গেলেও সাথে নিয়ে যায় তা। ঘটঘটি বাজিয়ে দোকানদার এলে পাড়ার অন্য ছেলে-মেয়েদের সাথে দৌড় দেয় বন্ধনও তার মায়ের কাছে। বাদাম, বুট, তিলে খাজা, খুরমা কিনবে বলে। মা টাকা দাও, নইলে ধান, চাল দাও। মা নিজের অসহায়ত্ব বুঝাতে পারে না অবুঝ সন্তানকে। সান্ত্বনা দেয় মিছেমিছি, আর বলে বাবা, এগুলো খোলা খাবার। খাওয়া যাবে না। পেটে যে পীড়া হবে! সব থাকা সত্ত্বেও সন্তানের বায়না মেটাতে না পেরে মনটা বিষিয়ে ওঠে স্বামীর ওপর। ভাবে, ছেলে বড় হোক আগে। তারপর...। সময়ের সাথে সাথে বেড়ে উঠে বন্ধনও।
একদিনের ঘটনা। ব্যাংক থেকে বেতন তুলে ১০ হাজার টাকা (১০০টি একশ টাকার নোট) রাবার দিয়ে বেঁধে ড্রয়ারে রেখে দেয় সোহেল। মাস খানেক পরে ওই টাকা বের করে না গুণেই অন্য ব্যাংকে জমা রাখতে যায় সে। ক্যাশিয়ার টাকা গুণে দেখেন এক হাজার কম। ক্যাশিয়ারের গণনা বিশ্বাস করে না সে। বিশ্বাস করবেই বা কীভাবে! নিজেই গুনে গুনে পুরো ১০ হাজার টাকার বান্ডিল ড্রয়ারে তালাবদ্ধ করে রেখেছিল যে সে! চাবিও তো সব সময় কোমরেই বাধা। টাকা কম হয় ক্যামনে! ক্যাশ থেকে ফেরত নিয়ে বারবার গুনে দেখে সে। না, হিসেব মিলছে না কিছুতেই। সত্যিই তো একটি দুটি নয়, ১০-১০টি নোট হাওয়া! ভাবনায় পড়ে যায় সোহেল। তবে কি স্বপ্না...! কিন্তু চাবি তো আমার কাছে! বাড়িতে ফেরে সে। খুঁজতে থাকে রহস্য। পেয়েও যায় বিছানার নিচে একটি চাবি। কিন্তু একি! চাবিটা যে তৈরি করা! সন্দেহ আরও ঘনীভূত হয় তার মনে। ওই চাবি দিয়ে ড্রয়ারের তালা খুলে দেখার চেষ্টা করে। চাবি দিতেই মুহূর্তেই খুলে যায় তালা। সর্বনাশ হয়েছে তার। এভাবে যে আরও কত কী...! সেই থেকে প্রতিটি চাবি আলাদা আলাদাভাবে শক্ত সুতোয় বেঁধে কোমরে ঝুলিয়ে রাখতো সে। স্বল্প মাইনে পাওয়া একজন মানুষের পক্ষে কী বা করার ছিল আর!
লেখক : গণমাধ্যমকর্মী