মো. আশিকুর রহমান শুভ, ঢাবি প্রতিনিধি
ছুটির দিনে মুখরিত বইমেলা
এ বছর দুই সপ্তাহ পিছিয়ে শুরু হওয়া অমর একুশে বইমেলার প্রথম ছুটির দিন শুক্রবার। আর ছুটির দিন মানেই করোনাকালের সব শঙ্কা কাটিয়ে মানুষ মনের আনন্দে ঘর থেকে বেরিয়ে আসছেন। গুমোট এই অবস্থা থেকে তারা স্বস্তি ফিরে পেতে ছুটে আসছেন বইমেলায়। শুধু নিজে নন, পরিবার-পরিজন, ছোট্ট শিশুদের নিয়েও সবাই বইমেলায় আসছেন। বই কেনার পাশাপাশি চলছে আড্ডা, ঘুরে বেড়ানো।
সাধারণ দিনগুলোতে দুপুর ২টায় মেলা শুরু হলেও শুক্রবার সকাল ১১টাতেই খুলে যায় বইমেলার দ্বার। এদিনও সকাল ১১টা বাজতে না বাজতেই বইমেলায় প্রবেশ গেটে দেখা যায় পাঠক-দর্শনার্থীদের চোখে পড়ার মতো উপস্থিতি।
ছুটির দিন হওয়ায় লেখক, প্রকাশক ও পাঠকের আনাগোনায় মুখর ছিল মেলা প্রাঙ্গণ। সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, পাঠক-দর্শনার্থীরা বইমেলাতে প্রবেশ করেই ভিড় জমাচ্ছে বইয়ের স্টলগুলোতে। স্টল থেকে স্টলে বইপত্র নেড়েচেড়ে দেখছে। কেউ কিনছে, কেউ আরও কিছুটা সময় মেলায় কাটিয়ে ফেরার পথে কিনবে বলে বই বাছাই করে রাখছে। কেউ কেউ আবার পরদিন আসবে বলেও বই বাছাই করে রাখছে।
করোনা সংক্রমণ পরিস্থিতি মাথায় রেখে এবারে মেলায় নেই শিশু প্রহর। তবে মা-বাবার সঙ্গে শিশু-কিশোরদের উপস্থিতিতে যে আবহ মেলায়, তাতে শিশু প্রহরের ঘাটতিটুকুও বোঝা যাচ্ছে না। উত্তরা থেকে এবছরই বাবার হাত ধরে প্রথম বইমেলায় আসেন রাইসা। এবার আসতে পেরে সে-ও খুশি। খুঁজছে তার পছন্দের বই।
মেলা প্রাঙ্গন ঘুরে দেখা যায়, অন্যপ্রকাশ, অনন্যা, ঐতিহ্য, বাতিঘর, অ্যাডর্ন, বেঙ্গল পাবলিশার্স, মাওলা ব্রাদার্স, প্রথমা, জিনিয়াস পাবলিকেশন্স সহ বিভিন্ন স্টল- প্যাভিলিয়ন গুলোতে মানুষের আনাগোনা ছিল বেশি।
ছুটির দিনে আজিমপুর থেকে পুরো পরিবার নিয়ে ঘুরতে এসেছেন ইউসুফ আহমেদ জয়। তিনি বলেন, ছুটির দিন হওয়ায় পুরো পরিবার নিয়ে এলাম বই মেলায় ঘুরতে। বিভিন্ন স্টল ঘুরে ঘুরে আজ বই দেখছি। পছন্দের বইগুলো লিস্ট করে রাখছি, আগামীতে কিনবো।
বিভিন্ন স্টল ঘুরে প্রকাশকদের সঙ্গে কথা হলে তারা জানান, অন্যবারের তুলনায় মেলায় এবার জনসমাগম বেশ ভালো। আর ছুটির দিন হওয়ার সকালের তুলনায় বিকেলে বইপ্রেমীদের ভিড় বেশি। বইপ্রেমীরা আসছেন, বই দেখছেন। সংখ্যায় কম হলেও বই কিনছেন অনেকেই।
জিনিয়াস পাবলিকেশন্সের প্রকাশক হাবিবুর রহমান বলেন, গত কয়েক বছরের তুলনায় এবার বইপ্রেমীদের সমাগম বেশি।
আর আজকে ছুটির দিন হওয়ায় মেলায় পাঠকদের ভিড় সামাল দিতে আমাদের ঘাম ছুটছে। কিন্তু বেচাবিক্রি বাড়ায় আমরা খুশি। তবে সামনের দিনগুলোতে বিক্রি আরও বাড়বে বলেও প্রত্যাশা করি।
মেলায় বই কিনছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আরিফ হোসেন শুভ। তিনি প্রতিদিনের সংবাদকে বলেন, বইমেলা বাঙালির প্রাণের মেলা। ভালোবাসা আর প্রাণের টানে আমরা প্রতিবছরই বইমেলায় ছুটে আসি পছন্দসই বই কিনতে। আমি মূলত হুমায়ুন স্যারের ভক্ত। তার বই-ই বেশি পড়ি। তবে নতুন লেখকদের অনেক বই এসেছে, সেগুলো দেখছি। ভালো লাগলে কিনব।
মেলায় ভিড় ও নিরাপত্তার বিষয়ে তিনি বলেন, মেলায় ভিড় বেশি তবু ভালো লাগছে আসতে পেরে। আর পর্যাপ্ত পুলিশ নিরাপত্তা দিচ্ছে। সব মিলিয়ে নিশ্চিতে ঘুরে বেড়ানো যায় বইমেলায়।
মেলা ঘুরে আরও দেখা যায়, মেলার সার্বিক নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করছেন পুলিশ, র্যাব, আনসার, বিজিবি ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর নিরাপত্তাকর্মীরা। তবে স্বাস্থ্যবিধি ও সামাজিক দূরত্ব মানা হচ্ছে না সেভাবে। অনেকের মাস্ক আছে তবে ঝুলিয়ে রাখছে থুতনিতে বা রাখছে পকেটে।