কালাই (জয়পুরহাট) সংবাদদাতা
এবার এক মণ আলুর দামে এক কেজি পেঁয়াজ!
চাল ও পেঁয়াজের দামে বাজার এখন গরম। এ নিয়ে বিস্তর আলোচনা-সমালোচনা চলছে। এক কেজি চালের দামে একটা আস্ত মুরগি পাওয়ার খবরের পর এবার আরেক সংবাদ এসেছে জয়পুরহাটের কালাই উপজেলা থেকে। সেখানে এক কেজি পেঁয়াজের দামে পাওয়া যাচ্ছে এক মণ আলু। জয়পুরহাটের কালাই উপজেলায় গত বছরের চেয়ে এবার চাল ও সবজির উৎপাদন বেশি হয়েছে। উপজেলার বিভিন্ন হাটবাজারে সব ধরনের সবজির দাম সাধারণ মানুষের হাতের নাগালে থাকলেও ভরা মৌসুমে পেঁয়াজ ও চালের দাম আকাশছোঁয়া।
প্রকারভেদে চালের মূল্য দফায় দফায় বৃদ্ধি পাওয়ায় দিশাহারা হয়ে পড়েছে উপজেলার সব শ্রেণির মানুষ। প্রতিকেজি চাল ৬০-৬২ টাকা এবং প্রতিকেজি বিদেশি পেঁয়াজ ৭৮-৮০ আর দেশি পেঁয়াজ ৯২-৯৫ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। অন্যদিকে আলুর বাজারে চরম ধস নেমেছে। হিমাগারে আলু রেখে লোকসানের মুখে পড়েছেন প্রান্তিক কৃষক ও ব্যবসায়ীরা। বর্তমানে উপজেলার বিভিন্ন হাটবাজারে প্রতিমণ আলু ৫০-৫৫ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
জানা গেছে, পৌরসভাসহ উপজেলার পাঁচ ইউনিয়নে আমন মৌসুমে ১৩ হাজার ৬০০ হেক্টর জমিতে চাল উৎপাদন হয় ৭১ হাজার ৯১ টন। গত মৌসুমে ১২ হেক্টর জমিতে পেঁয়াজ উৎপাদন হয় এক হাজার ২০ টন ও চলতি মৌসুমে ১৫ হেক্টর জমিতে পেঁয়াজ চাষ হচ্ছে এবং গত মৌসুমে ১২ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে আলু উৎপাদন হয় তিন লাখ ১০ হাজার ৮৮৪ টন। চলতি মৌসুমে উপজেলায় ১২ হাজার হেক্টর জমিতে আলু লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে, এর মধ্যে গ্যানোলা, ডায়মন্ড, মিউজিকা, রোমানা, পাকড়ি, অ্যাস্টোরিক, কার্ডিনাল, কারেজ ও লরা জাতের আলু আবাদ হচ্ছে। তবে বর্তমান উপজেলার বিভিন্ন হাটবাজারে পুরোনো জাতের বিভিন্ন আলু প্রতিমণ গ্র্যানুলা আলু ৫০-৫৫ টাকা, মিউজিকা ১৫০-১৫৫, অ্যাসটোরিক ৯০-১০০ ও কারেজ আলু ১২০-১২৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আলুর দাম নিম্নমুখী হওয়ায় কৃষক ও ব্যবসায়ীরা হতাশ হয়েছেন।
আলুর দাম কম হওয়ায় অনেক গরু খামারিরা গরুকে খাওয়াচ্ছেন আলু। অন্যদিকে উপজেলার বিভিন্ন হাটবাজার প্রকারভেদে চাল বিক্রি হচ্ছে প্রতিকেজি ৪৯ জাতের চাল ৪৮-৫০ টাকা, কাঠারীভোগ ৫৬-৫৮, নাজিরশাইল ৫৭-৫৯, মিনিকেট ৬০-৬২ টাকা দরে আর প্রতিকেজি বিদেশি পেঁয়াজ ৭৮-৮০ টাকা এবং দেশি পেঁয়াজ ৯২-৯৫ টাকা। প্রতিদিন উপজেলার বিভিন্ন হাটবাজারে লাগামহীনভাবে ও অস্বাভাবিক হাওে পেঁয়াজ ও চালের দাম বৃদ্ধি পাচ্ছে। প্রকারভেদে পেঁয়াজ ও চালের দাম দফায় দফায় ও লাফিয়ে লাফিয়ে ঊর্ধ্বগতিতে নাভিশ্বাস হয়ে উঠেছেন উপজেলার কৃষকসহ নিম্ন আয়ের ও খেটে খাওয়া মানুষরা।
কালাই পৌরসভার থুপসাড়া মহল্লার আলু ব্যবসায়ী হারুনুর রশীদ বলেন, ‘হিমাগারে আমার ১০০ বস্তা অ্যাস্টোরিক জাতের আলু আছে। ১০০ বস্তা আলুর পেছনে সব মিলে আমার খরচ হয়েছে প্রায় এক লাখ টাকা। বর্তমান আলুর বাজারে যে অবস্থা তাতে করে ওইসব আলু বিক্রি করলে মাত্র ১৫ হাজার টাকা হবে। সেই কারণে আমি এখন এক বস্তাও আলু বিক্রি করেনি।’
কালাই উপজেলার মাত্রাই গ্রামের ভ্যানচালক জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, ‘সারা দিন ভ্যান চালিয়ে আয় করি ৩০০ টাকা। আমার পরিবারে চারজন সদস্যের প্রতিদিন চাল ও পেঁয়াজ কিনতে আয়ের বেশির ভাগ খরচ হয়। অবশিষ্ট টাকা দিয়ে অন্যান্য নিত্যপণ্য কেনা সাধ্যের বাইরে চলে যাচ্ছে।’ চালের মূল্যবৃদ্ধির বিষয়ে কালাই উপজেলার খাদ্য নিয়ন্ত্রক কর্মকর্তা আবদুল হান্নান বলেন, ‘সারা দেশে অসময়ে বন্যার কারণে ইরি-বোরো ও আমন ধানের উৎপাদন কম হওয়ার কারণে বর্তমান বাজারে চালের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। আগামীতে এ সমস্যা থাকবে না।’
কালাই উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ রেজাউর করিম বলেন, গত মৌসুমে উপজেলায় আলু উৎপাদন অনেক বেশি হয়েছিল। বর্তমান খুচরা বাজারে আলুর দাম অনেক বেশি আর পাইকারি বাজারেই দাম কম। এ দুই বাজারের মধ্যে কোনো মিল নেই। চলতি মৌসুমে ১৫ হেক্টর জমিতে পেঁয়াজ চাষ হয়েছে। পেঁয়াজের দাম বেশি হলেও পাতাওয়ালা বা মুড়িকাটা নতুন পেঁয়াজ পাওয়া যাচ্ছে।
পিডিএসও/তাজ