গাজীপুর প্রতিনিধি
গাজীপুরে উদ্ধার হওয়া সেই নবজাতকটি মারা গেছে
গাজীপুরে ডাস্টবিন থেকে কুড়িয়ে পাওয়া শিশুটি মারা গেছে। রোববার দিবাগত রাত দেড়টার দিকে শিশুটি বিনা চিকিৎসায় পোশাক শ্রমিক রেখা আক্তারের ঘরে মারা যায়। সোমবার দুপুরে জানাজার নামাজ শেষে গাজীপুরের লক্ষীপুরা এলাকায় গোরস্থানে দাফন করা হয়েছে। পোশাক শ্রমিক রেখা আক্তার জানান, রোববার দুপুরে শিশুটিকে ডাস্টবিনে বাজারের ময়লার ব্যাগের মধ্য থেকে পাওয়ার পর পরই তিনি গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরী বিভাগে নিয়ে যান। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক শিশুটিকে ঘন্টাখানেক অক্সিজেন দেন। তিনি জানান, হাসপাতালের ডাক্তারকে তিনি জানিয়েছেন যে শিশুটিকে কুড়িয়ে পাওয়া গেছে। তারপরও কুড়িয়ে পাওয়া শিশুটির জন্য হাসপাতাল থেকে কোন ঔষধের ব্যবস্থা করা হয়নি। তিনি নিজে থেকে ২৩০ টাকা দিয়ে ঔষধ কিনে আনেন শিশুটির চিকিৎসার জন্য।
রেখা আক্তার আরো জানান, শিশুটিকে অক্সিজেন দেয়ার পর তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়। শিশুটিকে ঢাকায় নিয়ে যাওয়ার মতো তার কোন লোকজন নেই এবং তিনি সামান্য বেতনে গার্মেন্টে চাকরি করেন জেনেও শিশুটিকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানোর কোন ব্যবস্থা নেয়নি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। রেখা আক্তারের কাছে কোন টাকা পয়সা না থাকায় তিনি শিশুটিকে ঢাকায় না নিয়ে শহরের লক্ষীপুরা এলাকায় কাজিমুদ্দিনের বাড়িতে তার ভাড়া বাসায় নিয়ে যান। বাসায় নিয়ে তিনি নবজাতকটিকে দুধ খাওয়ান। নবজাতকটি রাতে প্রশ্রাব ও পায়খানাও করেছে। তিনি নবজাতকটির পরিচর্যা করেছেন, যেসব স্থানে ক্ষত ও ফুলা ছিল তাতে তিনি রাতে গরম ছ্যাক দিলে ফুলা কমে যায়। সারারাত তিনি না ঘুমিয়ে নবজাতকটিকে কোলের মধ্যে রাখেন। পরে নবজাতকটিকে বিছানায় শোয়ানো হলে রাত দেড়টার দিকে শিশুটি কোন নিঃশ্বাস না নিলে বাড়িওয়ালীকে ডেকে আনেন। বাসার অন্য লোকজন এসে নবজাতকটিকে মৃত অবস্থায় দেখতে পান।
নবজাতকটি মারা যাওয়ার খবর পেয়ে এলাকার শতশত লোক ওই বাড়িতে ভিড় জমায়। পরে স্থানীয়দের সহায়তায় নবজাতকটিকে জানাজা শেষে স্থানীয় কবরস্থানে দাফন করা হয়।
রেখা আক্তার জানান, ডাস্টবিনে কুড়িয়ে পাওয়া শিশুটির লালন পালন করার জন্য গার্মেন্ট কারখানা কর্তৃপক্ষ তাকে দুই মাসের ছুটিও দিতে চেয়েছিল। তিনি জানান তার একটি ১৭ বছর বয়সের প্রতিবন্ধী ছেলে আছে ২০০৯ সালে তার স্বামী মারা যায়। তার কোন মেয়ে সন্তান না থাকায় নিজের সন্তান মনে করেই শিশুটিকে লালন পালন করার জন্য সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। সে জন্য নবজাতকটির ‘রবেয়া’ নামকরণও করেছিলেন। তিনি ২০০৪ সাল থেকে গাজীপুরে বসবাস করছেন।
রেখা জানান, রাত ৮টার দিকে শহীদ তাজউদ্দীন মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে তাকে মোবাইল করে বলা হয় সকালে নবজাতকটিকে নিয়ে আসার জন্য। চিকিৎসার জন্য তার কোন টাকা পয়সা লাগবে না। হাসপাতাল থেকেই সব ব্যবস্থা করা হবে।
এদিকে স্থানীয়রা জানায় বেওয়ারিশ একটি নবজাতককে উপযুক্ত চিকিৎসা দিলে হয়তো শিশুটি বেচে যেত। কিন্তু হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের অবহেলায় শিশুটিকে বাচাঁনো গেল না।
এ ব্যাপারে হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক ডা. প্রণয় ভূষন দাস জানান, শিশুটিকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়েছিল। কিন্তু তাকে ঢাকায় না নিয়ে ওই মহিলা তার বাড়িতে নিয়ে যান।
হাসপাতালের পরিচালক ডা. সৈয়দ মোঃ হাবিবুল্লাহ জানান, এ ঘটনায় কারো কোন অবহেলা থাকলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
উল্লেখ্য, রোববার দুপুরে গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের তিনসড়ক এলাকার ঢাকা-গাজীপুর সড়কের পার্শ্ব দিয়ে ঁেহটে বাসায় দুপুরের খাবারের জন্য যাচ্ছিলেন স্থানীয় স্পেরো পোশাক কারখানার শ্রমিক রেখা আক্তার। পথে তিনসড়ক এলাকায় তিনি দেখতে পান একটি ডাস্টবিনে প্লাস্টিকের বাজারের ব্যাগ ধরে টানাটানি করছিল একটি বিড়াল এবং সেখান থেকে একটি বাচ্চার কান্নার শব্দ পেয়ে এগিয়ে যান তিনি। পরে বিড়ালটি তাড়িয়ে দিয়ে ব্যাগ খুলে সদ্যপ্রসূত একটি মেয়ে শিশুটিকে দেখতে পান। তিনি শিশুটিকে উদ্ধার করে দ্রুত গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান। হাসপাতালে চিকিৎসা শেষে রাতেই তিনি শিশুটিকে তার বাসায় নিয়ে যান। পরে রাত দেড়টার দিকে নবজাতকটি মারা যায়।পিডিএসও/রানা