গাজীপুর প্রতিনিধি
ডাস্টবিনে বিড়ালের মুখ থেকে নবজাতক উদ্ধার
ডাস্টবিনের একটি প্লাস্টিকের ব্যাগে এক নবজাতকের কান্না, তাকে নিয়ে বিড়ালের টানাহেঁচড়া, আর তার নরম শরীরে ছিল বিড়ালের নখের আঁচর-কাছে গিয়ে দেখলেন এমন দৃশ্য। পরে ওই নবজাতককে উদ্ধার করে প্রথমে হাসপাতালে, পরে সেখান থেকে নিজ বাসায় নিয়ে গেলেন এক পোশাকশ্রমিক। তার নাম রেখা আক্তার। নিজের নামের সঙ্গে মিলিয়ে ওই নবজাতকের নাম রেখেছেন রাবেয়া আক্তার।
গতকাল রোববার দুপুরে গাজীপুর সিটি করপোরেশনের তিনসড়ক এলাকার ঢাকা-গাজীপুর সড়কের পাশের ডাস্টবিন থেকে ওই নবজাতকটি উদ্ধার করেন রেখা আক্তার। উদ্ধার করার পর প্রথমে তাকে গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সন্ধ্যায় হাসপাতাল থেকে নবজাতকটিকে নিজ বাসায় নিয়ে যান রেখা আক্তার।
শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক প্রণয় ভূষণ দাস জানান, দুপুর সোয়া ২টার দিকে স্থানীয় তিনসড়ক এলাকার স্প্যারো কারখানার পোশাকশ্রমিক রেখা আক্তার কয়েক ঘণ্টা বয়সী শিশুটি হাসপাতালে নিয়ে আসেন। এ সময় তার সঙ্গে ছিলেন রিকশাচালক মো. এরশাদ। নবজাতকটির মুখমন্ডলসহ শরীরের কয়েক জায়গায় বিড়ালের দাঁত ও নখের আঁচর ও ক্ষত চিহ্ন রয়েছে।হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডে তাকে ভর্তি করে চিকিৎসা দেওয়া হয়। শিশুটি এখন শঙ্কামুক্ত। তবে তাকে দুধ পানের ব্যবস্থা করা জরুরি। এ নবজাতকের বিষয়টি জয়দেবপুর থানা পুলিশ ও জেলা প্রশাসনকে জানানো হয়েছে।
উদ্ধারকারীরা চিকিৎকদের জানিয়েছেন, দুপুরের খাবারের জন্য রেখা আক্তার কারখানা থেকে বাসায় ফিরছিলেন। পথে একটি ডাস্টবিনে প্লাস্টিকের ব্যাগ নিয়ে বিড়ালের টানাটানি এবং নবজাতকের কান্নার শব্দ পেয়ে এগিয়ে যান। পরে বিড়াল তাড়িয়ে দিয়ে শিশুটিকে উদ্ধার করে শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে দিয়ে যান।
আবাসিক চিকিৎসক প্রণয় আরো জানান, শিশুটির শারীরিক অবস্থার অবনতি হতে থাকলে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়। কিন্তু শিশু আনয়নকারী রেখা আক্তার শিশুটিকে ঢাকায় না নিয়ে নিজেদের বাসায় নিয়ে গেছেন বলে জানতে পেরেছি।
রেখা আক্তার বলেন, ‘তার বাড়ি সিরাজগঞ্জের সাদাতপুর থানা এলাকায়। তার স্বামী ২০০৮ সালে মারা গেছেন। এখন ছেলেকে নিয়ে লক্ষ্মীপুরা এলাকার কাজীমদ্দিনের বাড়িতে ভাড়া থাকেন। কন্যাশিশুটি পেয়ে তার খুব মায়া সৃষ্টি হয়েছে। বাসায় এনে তাকে সেবা শুশ্রুষা করে, গুঁড়া দুধ গুলিয়ে পান করানোর পর এখন ভালো আছে। আমার ও আমার ছেলের নামের সঙ্গে মিল রেখে নবজাতকটির নাম রেখেছি রাবেয়া।’ জানান রেখা আক্তার। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, লোকজনের সমস্যার কারণে তাকে হাসপাতাল থেকে ঢাকায় না নিয়ে বাসায় নিয়ে এসেছি।
এদিকে জয়দেবপুর থানার ওসি মো. আমিনুল ইসলাম বলেন, এ ব্যাপারে জয়দেবপুর থানায় একটি জিডি করা হয়েছে এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
"পিডিএসও/তাজ