কায়সার হামিদ মানিক, উখিয়া

  ২৫ সেপ্টেম্বর, ২০১৭

বিদ্যালয়ে রোহিঙ্গা আশ্রয় : লেখাপড়া ব্যাহত

কক্সবাজার জেলার উখিয়া ও টেকনাফের বিভিন্ন স্কুলে সাময়িক আশ্রয় নিয়েছে মিয়ানমারের রাখাইন প্রদেশ থেকে ভিটেমাটি ছাড়া হয়ে আসা অনেক রোহিঙ্গা পরিবার। এদিকে নিরাপত্তার কাজে নিয়োজিত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরাও আছেন বেশ কিছু স্কুলে। এতে বিদ্যালয়গুলোতে পাঠদানে সমস্যা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন শিক্ষক ও অভিভাবকরা। তাছাড়া এলাকার যাতায়াত ও সামাজিক পরিবেশ হঠাৎ করেই পাল্টে যাওয়ায় শিক্ষার্থী-শিশুরা এখন হতবাক। বিরূপ এ অচেনা পরিবেশে তারা পড়ালেখায় মন বসাতে পাচ্ছে না। হয়ে পড়ছে অমনোযোগী।

সরেজমিনে দেখা গেছে, রোহিঙ্গাদের নিরাপত্তা দিতে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে স্থাপন করা হয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অস্থায়ী ব্যারাক। শ্রেণিকক্ষে মেডিক্যাল টিম, ত্রাণকেন্দ্র, লঙ্গরখানার খাদ্যসামগ্রী ও আসবাবপত্র মজুদ করা হয়েছে। এছাড়া উখিয়ার কুতুপালং, বালুখালী ও থাইংখালীসহ আশপাশের সরকারি, বেসরকারি স্কুল, মাদরাসাসহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের বারান্দায় রোহিঙ্গারা অবস্থান নিয়েছে। ফলে এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীদের লেখাপড়ায় সমস্যা হচ্ছে।

হাজার হাজার রোহিঙ্গার কারণে কক্সবাজার-টেকনাফ সড়কে যান চলাচলে সমস্যা হচ্ছে। এ সড়কে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের যাতায়াতেও সমস্যায় পড়তে হচ্ছে। এসব কারণে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি কমে অর্ধেকে দাঁড়িয়েছে। এ নিয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন অভিভাবকরাও।

উখিয়ার কুতুপালং সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হাবিবুর রহমান বলেন, সম্প্রতি অনেক রোহিঙ্গা অবস্থান নিয়েছে কুতুপালং এলাকায়। এই রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিতে বিদ্যালয়ের বেশির ভাগ শ্রেণিকক্ষ বিভিন্নভাবে দখল হয়ে গেছে। এ কারণে পাঠদান ব্যাহত হচ্ছে। বিদ্যালয়ের একটি শ্রেণিকক্ষে মেডিক্যাল টিম, অন্য দুটিতে আনসার ও পুলিশ ব্যারাক, বিদ্যালয়ের নিচে লঙ্গরখানার রসদপাতি ও মাঠে বানানো হয়েছে লঙ্গরখানার চুলা।

হাবিবুর রহমান বলেন, এই বিদ্যালয়ে ৫৭৩ জন শিক্ষার্থী রয়েছে। রোহিঙ্গা আসার আগে প্রতিদিন শতকরা ৮৫ থেকে ৯০ জন শিক্ষার্থীর উপস্থিতি ছিল। কিন্তু এখন শতকরা ৪০ থেকে ৪৫ জন শিক্ষার্থী উপস্থিত হয়। শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি কমে গেছে অর্ধেকেরও বেশি। দিন দিন এই হার আরো কমে যাচ্ছে।

একই বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক সামশুল আলম ও শিক্ষিকা স্নিগ্ধা বড়ুয়া বলেন, শুধু শিক্ষার্থী নয়, সড়কে যানজট, অতিরিক্ত ভাড়া আদায়সহ নানা কারণে শিক্ষকরাও ঠিকমতো বিদ্যালয়ে আসতে পারেন না। অথচ ২০ নভেম্বর পিএসসি পরীক্ষা।

ওই বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণির ছাত্রী অর্পা বড়ুয়া, রতন শর্মা, উম্মে হাবিবা ও সোহেল বড়ুয়া জানায়, বিদ্যালয়ের লেখাপড়ার পরিবেশ আগের মতো নেই। শ্রেণিকক্ষ দখল, যত্রতত্র ময়লা-আবর্জনা, রাস্তাঘাটে যাতায়াত সমস্যাসহ নানা সমস্যার মুখোমুখি হতে হচ্ছে। এ কারণে বিদ্যালয়ে পৌঁছাতে অনেক দেরি হয়ে যায়।

অভিভাবক হাজি জলিল আহমদ, আব্দুল আজিজ ও শফিউল্লাহ বলেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে সন্তানদের লেখাপড়া নিয়ে আমরা খুবই চিন্তায় আছি। বিদালয়ের চারপাশে গড়ে ওঠা রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোর কারণে লেখাপড়ায় অমনোযোগী হয়ে পড়ছে শিশুরা।

উখিয়া উপজেলা পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ছেনোয়ারা বেগম বলেন, রোহিঙ্গা সংকট মোকাবেলায় আমরা মানবিক দৃষ্টিতে তাদের পাশে দাঁড়িয়েছি। এই সংকট নিরসনে প্রধানমন্ত্রীর দেয়া নির্দেশনাও আমরা বাস্তবায়ন করছি। তবে এখন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের যে বেহাল অবস্থা হচ্ছে, তা নিয়ে আমরা চিন্তিত।

উখিয়া উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষাকর্মকর্তা সুব্রত কুমার ধর বলেন, রোহিঙ্গাদের কারণে সাময়িক অসুবিধা হচ্ছে এই এলাকার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে। বিষয়টি জেলা প্রাথমিক শিক্ষাকর্মকর্তাকে জানানো হয়েছে। তিনি আশ্বস্ত করেছেন শিগগিরই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে থাকা রোহিঙ্গাদের বিভিন্ন সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানে সরিয়ে নেয়া হবে।

পিডিএসও/হেলাল

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
উখিয়া,রোহিঙ্গা,লেখাপড়া
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist