আরফাতুল মজিদ, কক্সবাজার

  ১৯ সেপ্টেম্বর, ২০১৭

সীমান্তে গুলির শব্দ, রাখাইন জ্বলছেই

মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য পুড়ছে ২৫ দিন ধরে। রোহিঙ্গাদের গ্রামগুলো শূন্য হয়ে গেছে। গতকাল সোমবার বেলা ১১টায় সীমান্তে গুলির শব্দ শোনা গেছে। নাক্ষ্যংছড়ির তুমব্রু জালপাইতলী সীমান্তের গ্রামগুলো থেকে আগের চেয়েও বেশি কালো ধোঁয়া দেখা গেছে। এতে সীমান্তে বাড়ছে নির্যাতিত রোহিঙ্গাদের সংখ্যা। তাদের কান্না ও চিৎকারে ভারী হচ্ছে আকাশ-বাতাস।

জাতিসংঘ বলছে, রাখাইনে সেনাবাহিনীর অভিযান জাতিগত নিধনের শামিল। তিন সপ্তাহ ধরে চলমান সেনা অভিযানের মুখে বাংলাদেশে পালিয়েছে চার লাখ ১০ হাজার রোহিঙ্গা। আগামী কয়েক দিনে রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশমুখী এই স্রোত আরো ভয়াবহ আকার ধারণ করতে পারে। স্থানীয়রা জানান, মিয়ানমারে সহিংসতার পর থেকে সবচেয়ে বেশি গত রোববার অধিক জনশূন্য গ্রাম জ্বালিয়ে দিয়েছে। এমনকি তুমব্রু সীমান্তে মসজিদেও আগুন জ্বালিয়ে দিয়েছে। সরেজমিনে গিয়ে গতকাল সোমবার সীমান্তের নাইক্ষ্যংছড়ি পয়েন্ট থেকে টেকনাফের শাহপরীরদ্বীপ পর্যন্ত মিয়ানমারের অধিকাংশ গ্রামে আগুনের লেলিহান ও কালো ধোঁয়া দেখা গেছে, যা বাংলাদেশ সীমান্ত থেকে সহজেই ছবি তোলা যায়।

সীমান্তের লোকজনে মতে, অতিতের সব রেকর্ড ভেঙে গত রোব ও সোমবার সবচেয়ে ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দিয়েছে। ওপারে জনশূন্য গ্রামে আগুন জ্বলছে। কিন্তু রোহিঙ্গা শরণার্থী অনুপ্রবেশ করেছে কম। তাদের ধারণা, শূন্য গ্রামে আগুন ধরিয়ে দিচ্ছে সে দেশের বাহিনীরা। টেকনাফ রংগীখালী খদিজাতুল কোবরা (রা.) মহিলা দাখিল মাদরাসার সুপার ফখরুল ইসলাম বলেন, গতকাল সোমবার রাখাইন এলাকার বাড়িঘর খুব বেশি আগুনে পুড়ছে। আকাশে ভারী অন্ধকার কালো ধোঁয়া দেখা গেছে। আগুনের লেলিহান শিখা। বাড়িঘর, বাজার সবকিছু জ্বলছে আর জ্বলছে। তার মাদরাসা থেকে এসব দৃশ্য দেখা যাচ্ছে। রোববার বিকেল থেকে সোমবার দুপুর পর্যন্ত ওই গ্রামগুলো থেকে কালো ধোঁয়া উড়ছে আর উড়ছে। নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুমধুম ইউপি চেয়ারম্যান এ কে জাহাঙ্গীর আজিজ জানান, আগুন আর গুলির শব্দ প্রতিদিনই লক্ষ করা যাচ্ছে। গত রোববার দুপুরে ও সোমবার সকালের দিকে গুলির শব্দ শোনা গেছে। গুলির শব্দের কিছুক্ষণ পর পরেই রোহিঙ্গারা সীমান্তে জড়ো হচ্ছে।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, উখিয়া-টেকনাফের সীমান্তের ওপারে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে এখনো থেমে থেমে শোনা যাচ্ছে গুলির শব্দ ও মানুষের চিৎকার। সীমান্তের ওপারের আকাশে দেখা যাচ্ছে কালো ধোঁয়া। মিয়ানমার সেনাবাহিনীর গণহত্যা থেকে বাঁচতে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের পরিস্থিতি ইতোমধ্যে পর্যবেক্ষণ করেছেন বাংলাদেশে নিযুক্ত ৪৩টি দেশের কূটনীতিক প্রতিনিধিদল। বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তের ঘুমধুম ও তুমব্রুর জিরো পয়েন্টে গিয়েও রোহিঙ্গা পরিস্থিতি সরেজমিনে গিয়ে পরিদর্শন করেন।

কূটনীতিকদের সীমান্ত পরিদর্শনের সময়ও মিয়ানমারের অভ্যন্তরে বসতবাড়িতে আগুন দেওয়া হয়। এ সময় বিশালাকার ধোঁয়া উঠতে দেখে বিস্মিত হন তারা। এদিকে মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী আগুন দিচ্ছে রোহিঙ্গাদের বাড়িতে উল্লেখ করে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত তাদের এক প্রতিবেদনে এমন কথা বলা হয়েছে। গত ২৫ আগস্ট রাখাইনে সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ার পর থেকে এখন পর্যন্ত চার লাখ ১০ হাজার রোহিঙ্গা বাংলাদেশে ঢুকে পড়েছে বলে জানিয়েছে জাতিসংঘ। ওইদিন রাখাইনে পুলিশের ৩০টি ও সেনাবাহিনীর একটি ক্যাম্পে হামলা চালায় রোহিঙ্গা বিদ্রোহীরা। এতে অন্তত ১২ পুলিশ নিহত হয়।

পিডিএসও/হেলাল

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
রোহিঙ্গা
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist