দুলাল বিশ্বাস, গোপালগঞ্জ

  ১৯ আগস্ট, ২০১৭

পদ্ম ফুলের সৌন্দর্যে বিমোহিত গোপালগঞ্জ

সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের 'কেউ কথা রাখে নি' কবিতায় বলেছিলেন ১০৮টি নীল পদ্মের কথা! নীল নয়, তবে গোলাপী পদ্মে ঢাকা বিলের দেখা কিন্তু পাবেন! প্রিয়াকে দেওয়া কথামতো ১০৮টি কেন, পারবেন অগুণতি পদ্ম তুলে দিতে তার হাতে। অপূর্ব সুন্দর এই বিল দেখতে আসতে হবে বঙ্গবন্ধুর জন্মভূমি গর্বিত গোপালগঞ্জ। দূর থেকে মনে হবে যেন ফুলের বিছানা পাতা । প্রাকৃতিকভাবে জন্ম নেওয়া জলজ ফুলের রানী এই পদ্মফুল সৌন্দর্য বাড়িয়ে দিয়েছে গোপালগঞ্জের বিলের চিত্র। দূর থেকে মনে হবে যেন ফুলের বিছানা পেতে রেখেছে কেউ। প্রতিদিনই এ সৌন্দর্য উপভোগ করতে আসছে দর্শনার্থীরা!

গোপালগঞ্জ জেলা সদর থেকে মাত্র ১২ কিলোমিটার দূরে হাতছানি দিয়ে মানুষকে আকৃষ্ট করছে বলাকইড় বিল। কেবল এই বিল নয় পাশে রয়েছে শেওড়াবাড়ি ও পিঠাবাড়ির বিলও। যেখানে নৌকায় চড়ে উপভোগ করতে পারবেন পদ্মফুলের সৌন্দর্য এবং পাখিদের বিচরণ।

গ্রাম-বাংলার যেখানেই পুকুর, খাল-বিল রয়েছে সেখানেই দেখা মিলবে অপরূপ এই ফুলটির। তেমনি গোপালগঞ্জের বিভিন্ন বিলে ফুটে থাকা এই পদ্ম তৃষ্ণা মেটাচ্ছে প্রকৃতিপ্রেমীদের।

বিস্তৃর্ণ জলাভূমি। চারদিকে লতা-গুল্ম কোথাও কচুরিপানা। এরই মাঝে ভেসে রয়েছে অগণিত পদ্ম। স্নিগ্ধ তার রং আর আকাশে মেঘের ভেলা এই দুইয়ে মিলে যেন একাকার প্রকৃতি।

বর্ষার পর শরতেও জেলার বিলগুলোয় এখন পদ্মের সমাহার। কোথাও ফুটেছে কোথাও আবার ফোঁটার অপেক্ষা। পদ্ম ফুলের পাতায় জমে থাকা পানিটিও রঙিন করে মানুষের মনকে।

শুধু সৌন্দর্যই নয় বর্ষা মৌসুমে কোনো কাজ না থাকায় এ বিলে জন্ম নেওয়া পদ্ম ফুল বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করছেন শত শত পরিবার। সনাতন ধর্মাবলম্বীদের পূজায় পদ্ম ফুলের চাহিদা থাকায় ভোর থেকে দুপুর পর্যন্ত বিল থেকে পদ্মফুল তুলে বাজারে বিক্রি করছেন। বিল এলাকায় মূল্য কম থাকলেও শহরে এক একটি ফুল ৫ থেকে ১০ টাকায় বিক্রি করছেন। এছাড়া এ বিলের পদ্ম ফুল ঢাকা, খুলনা, মাদারীপুরসহ বিভিন্ন জেলায় বিক্রির জন্য নিয়ে যাচ্ছে পাইকাররা। কাজ না থাকা স্থানীয়দের আয়েরও একটা পথ হয়েছে। বর্ষা মৌসুমে এ বিলে প্রায় ১০ হাত পানি থাকে। সাধারণ শ্রমজীবী মানুষের এ সময় কোন কাজ থাকে না। অলস সময় কাটান তারা। তবে বর্তমানে পদ্মফুল ও ফুল বিক্রি করে অনেক দরিদ্র পরিবার জীবিকা নির্বাহ করছে। তারা বিল থেকে পদ্মফুল ও ফল তুলে বিক্রি করে দৈনিক ৫ থেকে ৬’শ টাকা উপার্জন করছেন। এ দিয়ে ভালোভাবে তাদের সংসার চলছে।

কেরামত আলী (৬৫) বলেন, হিন্দু ধর্মালম্বীরা বিভিন্ন পূজা পার্বণে পদ্মফুলের ব্যবহার করেন। তাই এলাকার শ্রমজীবী মানুষ ফুল ও ফল বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করছে।

গোপালগঞ্জ জেলার চার পাশে রয়েছে অসংখ্য বিল। তার মধ্যে অন্যতম সদর উপজেলার বলাকইড় বিল। গোপালগঞ্জ জেলা সদর থেকে মাত্র ১২ কিলোমিটার দূরে। ১৯৮৮ সালের পর থেকে বর্ষাকালে এ বিলের অধিকাংশ জমিতেই প্রাকৃতিকভাবে পদ্মফুল জন্মে। আর এ কারণে এখন এ বিলটি পদ্মবিল নামেই পরিচিত হয়ে উঠেছে।

বর্ষা মৌসুমে চারিদিকে শুধু পদ্ম আর পদ্ম। বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে গোলাপি রং এর পদ্ম দেখলে মন ও জুড়িয়ে যায়। চোখ যত দূর যায় শুধু পদ্ম আর পদ্ম। এমন অপরূপ দৃশ্য ভ্রমণপিপাসুদের হাতছানি দিচ্ছে। এ বিলের সৌন্দর্য ও পদ্ম দেখার জন্য দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে প্রতিদিনই আসছে শতশত মানুষ। শরতের ফুল হলেও গোপালগঞ্জে বর্ষাতেই তার সৌন্দর্য ও শুভ্রতার প্রতীক নিয়ে হাজির হয় 'পদ্ম'। প্রকৃতিতে নিজের রূপ বৈচিত্র অকাতরে বিলিয়ে দিচ্ছে জলাভূমি ও বিলেঝিলে ফুটে থাকা এ জলজ ফুলের রাণী। পদ্ম ফুলের উপস্থিতিতে যেন প্রাণ ফিরেছে গ্রামের শিশুদের উচ্ছল মাখা শৈশবে।

জলের উপর বিছানো সবুজ পাতা ভেদ করে হেসে ওঠে লাল-সাদা হাজারো পদ্ম। জলাভূমি ও বিলেঝিলে ফুটে থাকা পদ্মফুল যে কোন মানুষের মনে জাগিয়ে তোলে অন্যরকম এক অনুভূতি। ভাসমান একেকটি পদ্মের রূপশোভা অভিভূত করে যে কোন বয়সকে। ছবির মতো সাজানো, হৃদয়কাড়া দৃশ্য আটকে রাখতে পারে না দুরন্ত শৈশবকে।

বিলে-ঝিলে সবুজ প্রান্তর আর পদ্ম ফুলের সৌরভ বিমোহিত কওে মনকে। এখানে এলে বাতাসেও ছুঁয়ে যায় ফুলের ঘ্রাণ। নয়নাভিরাম এমন দৃশ্য গ্রামীণ জীবনে ডেকে আনে একটু প্রশান্তি আর কারো কারো জীবনে পদ্ম নিয়ে জড়িয়ে আছে কতই না স্মৃতি।

কেবল পবিত্রতার প্রতীক হিসেবে নয়, ভেষজ গুণ সমৃদ্ধ এই পদ্ম সংরক্ষণের প্রতি গুরুত্বারোপ করতে আমরা এর যে কান্ডটি আছে সেটাকে যদি এনে পুকুরে লাগাই তাহলে এখান থেকে প্রচুর উৎপাদন করা সম্ভব।'

লালপদ্ম বা রক্তপদ্ম, শ্বেতপদ্ম কিংবা নীল পদ্ম চোখে পড়ে প্রকৃতির রূপ তবে আগের মতে পানির প্রাচুর্যতা না থাকায় দিনের পর দিন জৌলুস হারিয়ে ফেলছে গোপালগঞ্জের বিলঝিল গুলো। তাইতো আগের মতো আর পদ্ম কিংবা শাপলার সৌন্দর্য চোখে পড়ে না। মাঝেমধ্যে পদ্ম কাটার সাথে যুদ্ধ করে পদ্মফুল সংগ্রহের এমন চিত্র সত্যিই মুগ্ধ করে।

সারা বছর পানি থাকে এমন জায়গায় পদ্ম ভাল জন্মে। গোপালগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক সমীর কুমার গোস্বামী জানান, বর্ষা মৌসুমে এ বিলে প্রাকৃতিক ভাবে জন্ম নেওয়া পদ্মফুল এদিকে যেমন বিলের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করছে তেমনি কাজ না থাকা লোকজন ফুল বিক্রি করে লাভবান হচ্ছেন ।

গোপালগঞ্জের পদ্ম ফুলের রাজত্বে যেভাবে যাবেন :-ঢাকা গুলিস্তান বাস টার্মিনাল থেকে মধুমতি অথবা টুঙ্গিপাড়া এক্সপ্রেসে গোপালগঞ্জ শহর!সেখান থেকে ব্যটারি চালিত অটো ভ্যানে করে করপাড়া বাজার!করপাড়া বাজার থেকে গ্রামের ছোট রাস্তা ধরে ৫ মিনিট হাঁটলেই পদ্ম বিল ।

পিডিএসও/রানা

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
গোপালগঞ্জ,পদ্ম ফুলের সৌন্দর্যে
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist