প্রতিদিনের সংবাদ ডেস্ক

  ১৩ আগস্ট, ২০১৭

ফের ভাসছে উত্তরাঞ্চল

টানা বৃষ্টিপাত ও নদ-নদীর পানি বেড়ে যাওয়ায় দেশের উত্তরাঞ্চলে জনদুর্ভোগ দেখা দিয়েছে। এতে অনেক গ্রাম, রাস্তাঘাট ও ফসলের মাঠ তলিয়ে গেছে। অনেক এলাকায় দেখা দিয়েছে নদী ভাঙন। নদী ভাঙন ও বন্যাকবলিত এলাকার মানুষ অসহায় হয়ে পড়েছেন। অনেকে বাড়ি-ঘর ফেলে আশ্রয় শিবিরে থাকছেন। বেড়েই চলছে বন্যা দুর্গতদের কষ্ট ও দুর্ভোগ। এদিকে, রেললাইনে পানি ওঠায় পঞ্চগড় ও ঠাকুরগাঁও লাইনে ট্রেন চলাচল বন্ধ রয়েছে। প্রতিনিধিদের পাঠানো খবরে বিস্তারিত—

পঞ্চগড় : ভারী বর্ষণ ও উজানের পানিতে রেললাইন ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে পঞ্চগড় থেকে ঠাকুরগাঁও রেল যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে। ওই রুটের প্রায় দুই কিলোমিটার রেললাইন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এদিকে, অবিরাম বর্ষণে পঞ্চগড় সদরসহ তেঁতুলিয়া ও দেবীগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় আকস্মিক বন্যা দেখা দিয়েছে। গতকাল শনিবার সকাল সাড়ে ৬টা পর্যন্ত ১৬০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। প্রাথমিকভাবে জেলায় ১২০ হেক্টর জমি তলিয়ে গেছে।

পঞ্চগড় পৌর সভার মেয়র মো. তৌহিদুল ইসলাম জানান, পৌর সভার বেশ কয়েকটি এলাকা করতোয়া নদীর পানিতে প্লাবিত হয়েছে। এসব এলাকার লোকজন বিভিন্ন স্কুল-কলেজে আশ্রয় নিয়েছে। আশ্রয় কেন্দ্রে শুকনো খাবার ও খিচুরি সরবরাহের ব্যবস্থা করা হচ্ছে বলে জানান তিনি।

নীলফামারী : গত দুই দিনের বৃষ্টিতেই সৈয়দপুরের পাড়া-মহল্লা ও বাজার তলিয়ে গেছে তিন ফুট পানির নিচে। গত শুক্রবার ও শনিবার রাতের বৃষ্টিতে শহরের বিভিন্ন এলাকা তলিয়ে গেছে তিন ফুট পানির নিচে। পৌর কর্তৃপক্ষের অবহেলা ও আন্তরিকতার অভাবে জলাবদ্ধতার দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। সৈয়দপুর পৌরসভার প্যানেল মেয়র-১ জিয়াউল হক জিয়া এ প্রতিবেদককে জানান, জলাবদ্ধতা নিরসনে পৌর কর্তৃপক্ষ আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছে। অনেকে ড্রেনে ময়লা ফেলায় মাঝে মধ্যে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হচ্ছে।

লালমনিরহাট : কয়েক দিনের ভারী বর্ষণ ও উজানের পাহাড়ি ঢলে লালমনিরহাটে ভয়াবহ বন্যা দেখা দিয়েছে। দোয়ানী পয়েন্টে তিস্তা নদীর পানি বিপৎসীমার ২৫ সে.মি. ও কুলাঘাট পয়েন্টে ধরলা নদীর পানি বিপদসীমার ৩২ সে.মি. ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন অন্তত তিন লাখ মানুষ।

গতকাল শনিবার সকাল ৬টায় এ পয়েন্টে তিস্তার পানি প্রবাহ রেকর্ড করা হয় ৫২ দশমিক ৬৫ সেন্টিমিটার। ৩ ঘণ্টা পর সকাল ৯ টায়ও একই পরিমাণ রেকর্ড করা হয়। জেলার পাটগ্রাম, হাতীবান্ধা, আদিতমারী ও সদর উপজেলার ২০টি ইউনিয়নের ৩৮টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। তলিয়ে গেছে ঘরবাড়ি, রাস্তাঘাট, স্কুল-কলেজ, মসজিদ-মাদরাসাসহ অসংখ্য স্থাপনা। যোগাযোগব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন হয়ে শুকনো খাবার ও বিশুদ্ধ পানির তীব্র সংকট দেখা দেওয়ায় চরম দুর্ভোগে পড়েছেন দুর্গত এলাকার মানুষজন। এদিকে, তিস্তা নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় আদিতমারী উপজেলার মহিষখোঁচা বালুর বাঁধটি বিলীন হয়ে গেছে। ডুবে গেছে সদ্য রোপণ করা কয়েক হাজার হেক্টর জমির আমন ধান খেত, বিনষ্ট হয়েছে সবজি ও মরিচ খেত। এদিকে, পানি নিয়ন্ত্রণে ডালিয়া ব্যারাজের সবকটি গেট খুলে দেওয়া হয়েছে।

বন্যাকবলিত উপজেলাগুলোতে আগাম ত্রাণ মজুদ রয়েছে। সেখান থেকে বিতরণ করা হবে বলে জানা গেছে।

কুড়িগ্রাম : জেলার সবগুলো নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় কুড়িগ্রামে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়ে লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।

শনিবার সন্ধ্যা ছয়টা পর্যন্ত গত ১২ ঘণ্টায় ধরলা নদীর পানি ৪১ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে কুড়িগ্রাম ফেরিঘাট পয়েন্টে বিপৎসীমার ৬৩ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ব্রহ্মপুত্রের পানি বৃদ্ধি পেয়ে চিলমারী পয়েন্টে বিপৎসীমার ৭ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে তিস্তা ও দুধকুমার নদের।

স্থানীয় পানি উন্নয়ন বোর্ড জানিয়েছে, জেলার সবকটি নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ব্রহ্মপুত্র নদের পানি চিলমারী পয়েন্টে বিপৎসীমা অতিক্রম করতে পারে।

সিরাজগঞ্জ : টানা বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে সিরাজগঞ্জে যমুনা নদীতে আবার পানি বাড়ছে । গত ১৮ ঘণ্টায় পানি ৫২ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে বিপৎসীমার ১৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। দ্রুত পানি বৃদ্ধির ফলে নদী তীরবর্তী এলাকায় বসবাসকারীদের মাঝে আতঙ্ক বিরাজ করছে । ইতোমধ্যেই নদী তীরবর্তী অনেক নিচু এলাকা পানিতে তলীয়ে গেছে । সিরাজগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী সৈয়দ হাসান ইমাম জানান আগামী ২-৩ দিনে পানি ব্যাপক বৃদ্ধির সম্ভাবনা রয়েছে ।

পিডিএসও/হেলাল

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
উত্তরাঞ্চল
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist