জিন্নাতুল ইসলাম জিন্না, লালমনিরহাট
তিস্তার পানি বিপদসীমার উপর : ৩ লাখ মানুষ পানিবন্দি
কয়েক দিনের ভারী বর্ষণ ও উজানের পাহাড়ী ঢলে লালমনিরহাটে ভয়াবহ বন্যা পরিস্থিতি দেখা দিয়েছে। সকাল থেকে দোয়ানী পয়েন্টে তিস্তা নদীর পানি বিপদসীমার ২৫ সে.মি ও কুলাঘাট পয়েন্টে ধরলা নদীর পানি বিপদসীমার ৩২ সে.মি উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। পানি বন্দি হয়ে পড়েছেন অন্তত ৩ লাখ মানুষ। শনিবার সকাল ৯টায় দেশের বৃহত্তম সেচ প্রকল্প তিস্তা ব্যারাজের ডালিয়া পয়েন্টে ৫২ দশমিক ৬৫ সেঃমিঃ তিস্তার পানি প্রবাহ রেকর্ড করা হয়েছে। যা স্বাভাবিকের (৫২দশমিক ৪০) চেয়ে ২৫ সেন্টিমিটার উপরে। ব্যারাজের সবগুলো জলকপাট খুলে পানি প্রবাহ নিয়ন্ত্রন করা হচ্ছে।
সেচ প্রকল্পের বন্যা পুর্ভাবাস কেন্দ্র জানান, কয়েক দিনের ভারি বর্ষন ও উজানের ঢলে তিস্তার পানি প্রবাহ বৃদ্ধি পেয়েছে। শুক্রবার দুপুরে পানি প্রবাহ বিপদ সীমা ছুই ছুই করলে রাতে আরো বৃদ্ধি পেয়ে বিপদ সীমা অতিক্রম করে। শনিবার সকাল ৬টায় এ পয়েন্টে তিস্তার পানি প্রবাহ রেকর্ড করা হয় ৫২ দশমিক ৬৫ সেন্টিমিটার। ৩ ঘন্টা পর সকাল ৯ টায়ও একই পরিমান রেকর্ড করা হয়।
ভারী বর্ষণ ও উজানের পাহাড়ী ঢলে জেলার পাটগ্রাম, হাতীবান্ধা, আদিতমারী ও সদর উপজেলার ২০টি ইউনিয়নের ৩৮টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। পানি বন্দি হয়ে পড়েছেন অন্তত তিন লাখ মানুষ। তলিয়ে গেছে ঘরবাড়ী, রাস্তাঘাট, স্কুল, কলেজ, মসজিদ মাদরাসাসহ অসংখ্য স্থাপনা। যোগাযোগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন হয়ে শুকনো খাবার ও বিশুদ্ধ পানির তীব্র সংকট দেখা দেয়ায় চরম দুর্ভোগে পড়েছেন দুর্গোত এলাকার মানুষজন।
এদিকে তিস্তা নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় আদিতমারী উপজেলার মহিষখোঁচা বালুর বাধটি বিলীন হয়ে গেছে। হুমকীর মুখে পড়েছে ২নং স্পার বাধ। অপরদিকে ধরলার পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় পাটগ্রাম উপজেলার সড়ক, মহাসড়কের উপর পানি উঠছে। বুড়িমারী স্থল বন্দরের উপর দিয়েও পানি প্রবাহিত হতে দেখা গেছে। এছাড়াও সদর উপজেলার কুলাঘাট, ইটাপোতা, শীবেরকুটি, খুনিয়াগাছ, রাজপুরসহ বেশ কিছু এলাকায় বন্যা পরিস্থিতি চরম আকার ধারন করেছে।
এসব এলাকার পরিবারের জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। গরু, ছাগল, হাঁস-মুরগি নিয়ে বিপাকে পড়েছেন লোকজন। পানির নিচে ডুবে গেছে সদ্য রোপন করা কয়েক হাজার হেক্টর জমির আমন ধান ক্ষেত, বিনষ্ট হয়েছে সবজি ও মরিচ ক্ষেত।
পানি উন্নয়ন বোর্ড জানিয়েছে পানির মাত্রা ক্রমান্বয়ে বেড়েই চলছে। আগামী বুধবার পর্যন্ত পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন তারা। এদিকে পানি নিয়ন্ত্রনে ডালিয়া ব্যারাজের সবক’টি গেট খুলে দেয়া হয়েছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড তিস্তা ব্যারাজ ডালিয়া শাখার নির্বাহী প্রকৌশলী মোস্তাফিজার রহমান জানান, বৃষ্টি অব্যহত থাকলে বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হবে। তবে বৃষ্টি থেমে গেলে বন্যা পরিস্থিতর উন্নতি ঘটতে পারে।
তবে প্রশাসনের পক্ষ থেকে এখন পর্যন্ত দুর্গোত এলাকায় কোন ধরনের সহায়তা প্রদান করা হয়নি বলে পানি বন্দি মানুষগুলো সাংবাদিকদের অভিযোগ করেছে।
হাতীবান্ধা উপজেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন অফিসার ফেরদৌস আলম জানান, বন্যার্তদের জন্য মজুদ রাখা ১৫ মেঃ টন জিআর চাল পানিবন্দিদের মাঝে বিতরন শুরু করা হচ্ছে।
আদিতমারী উপজেলা ত্রাণ ও পুনবাসন অফিসার মফিজুল হক জানান, বন্যার্তদের জন্য ২০মেঃ টন চাল মজুদ রয়েছে। সেখান থেকে তাদের মাঝে খুব শীঘ্রই বিতরন করা হবে।
লালমনিরহাট জেলা ত্রাণ ও পুনবাসন কার্যালয়ের দায়িত্বে থাকা সহকারী কমিশনার সুজা উদ দৌলা জানান, বন্যা কবলিত উপজেলা গুলোতে আগাম ত্রাণ মজুদ রয়েছে। সেখান থেকে বিতরন করা হবে। এরপরও জেলায় মজুদ রয়েছে ২০২ মেঃ টন জিআর চাল ও সাড়ে ৪ লাখ টাকা। প্রয়োজন হলে আরও বরাদ্ধ নেয়া হবে। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সার্বক্ষনিক বন্যার্তদের খোজ খবর নেয়া হচ্ছে।
পিডিএসও/রানা