জিন্নাতুল ইসলাম জিন্না, লালমনিরহাট
তিস্তা থেকে উদ্ধারকৃত বিজিবি সদস্যের লাশ হস্তান্তর
চোরকারবারীদের ধরতে গিয়ে তিস্তা নদীতে পড়ে নিখোঁজের প্রায় ৩২ ঘণ্টা পর মৃত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়েছে লালমনিরহাটের পাটগ্রাম উপজেলার দহগ্রাম বিজিবি ক্যাম্পের ল্যান্স নায়েক সুমন মিয়াকে (৩০)। বুধবার সকাল ১০টার দিকে তিস্তা নদীর ভারতীয় অংশে তার লাশ উদ্ধার করে ভারতীয় সীমন্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ)। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন লালমনিরহাট ১৫ বিজিবি ব্যাটালিয়নের পরিচালক লে. কর্নেল গোলাম মোরশেদ।
এর আগে সোমবার রাত ২ টার দিকে দহগ্রামের আবুলের চর এলাকায় গরু পারাপারকারীদের ধরতে গিয়ে তিস্তা নদীতে পড়ে নিখোঁজ হন সুমন। ল্যান্স নায়েক সুমন মিয়া রংপুর ৬১ বিজিবি ব্যাটালিয়নের সদস্য ছিলেন। তবে তিনি লালমনিরহাট ১৫ বিজিবি ব্যাটালিয়নের দহগ্রাম ক্যাম্পে সংযুক্ত ছিলেন। তার বাড়ি হবিগঞ্জের সদর উপজেলায় বলে জানা গেছে।
বিজিবি জানায়, বুধবার সকাল ১০ টার দিকে নীলফামাড়ি জেলার ডিমলা উপজেলার চর খড়িবাড়ি এলাকার অদূরে তিস্তা নদীর ভারতীয় অংশে একটি লাশ ভাসতে দেখা যায়। পরে ভারতের অরুন ক্যাম্পের ১৩ বিএসএফের সদস্যরা বিজিবি সদস্য সুমনের মরদেহ উদ্ধারের বিষয়টি বিজিবিকে নিশ্চিত করে। পরে সেখানে বিজিবির উর্দ্ধতন কর্মকর্তরা উপস্থিতি হলে বেলা ২ টার দিকে লাশ হস্তান্তর করা হয়। এসময় ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর পক্ষে সংশ্লিস্ট বিএসএফ কোম্পানি কমান্ডার বিনোদ রাজা উপস্থিত ছিলেন।
এদিকে বিজিবি সদস্য সুমন মিয়ার লাশ স্পীড বোডে করে বিকেল ৪ টার দিকে লালমনিরহাটের তিস্তা ব্যারাজ এলাকা নিয়ে আসা হয়। এসময় বিজিবি রংপুর রিজিওয়ানাল কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল একেএম সাইফুল ইসলাম সাইফ ও রংপুর সেক্টর কমান্ডার কর্নেল আবুল কালাম আযাদ, লালমনিরহাট ১৫ বিজিবি ব্যাটালিয়নের পরিচালক লে. কর্নেল গোলাম মোরশেদ, পাটগ্রাম থানার ওসি অবনী শংকর করসহ বিজিবি, পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিস সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। পরে নদীর ধারেই লাশের সুরতাহাল রিপোর্ট প্রস্তুত করেন পাটগ্রাম থানা পুলিশ।
বিকেল সোয়া ৪ টার দিকে বিজিবির একটি অ্যাম্বুলেন্স লাশ নিয়ে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের দিকে রওনা দেয়। সেখানে ময়নতন্তের পর পরিবারের কাছে লাশ হস্তান্তর করা হবে বলে বিজিবি সুত্রে জানা গেছে।
উল্লেখ্য, গত সোমবার রাত ২টার দিকে লালমনিরহাটের পাটগ্রাম উপজেলার আর্ন্তজাতি সমীনা পিলারের ৬ এর ৩ নম্বর সাব-পিলারের তিস্তাতীরবর্তী দহগ্রাম ইউনিয়নের আবুলের চর এলাকায় গরু পাচারকারী ধরতে যান সুমন মিয়াসহ বিজিবি’র চার সদস্য। এসময় তিস্তা নদীতে পড়ে যান বিজিবির ল্যান্স নায়েক সুমন মিয়া। ওই ঘটনার পর মঙ্গলবার ভোর থেকে তাকে উদ্ধারে বিজিবি, বিএসএফ ও ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা প্রায় ২৫ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে নদীতে উদ্ধার অভিযান চালায়। সর্বশেষ মঙ্গলবার রাতে দেশের বৃহত্তম সেচ প্রকল্প তিস্তা ব্যারাজের সাতটি জলকপাট (গেইট) বরাবর জেলেদের দিয়ে মাছ ধরার জাল পেতেও রাখা হয়। অবশেষে বুধবার সকাল সোয়া ১০ টার দিকে নিখোঁজের প্রায় ৩২ ঘন্টা পর দহগ্রামের (আবুলের চর) প্রায় ৪ কিলোমিটার ভাটিতে তিস্তা নদীর ভারতীয় অংশে ল্যান্স নায়েক সুমন মিয়ার লাশ উদ্ধার করে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ)। লালমনিরহাট ১৫ বিজিবি ব্যাটালিয়নের পরিচালক লে. কর্নেল গোলাম মোরশেদ বলেন, বুধবার দুপুরে দহগ্রামের অদূরে ভাতীয় অরুন ক্যাম্পের বিএসএফ ল্যান্স নায়েক সুমনের লাশ হস্তান্তর করে। এরপর লাশ সেখান থেকে তার মরদেহ তিস্তা ব্যারাজ এলাকায় নিয়ে আসা হয়। সেখানে থানা পুলিশের সুরতহাল রিপোর্ট প্রস্তুতের পর রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে নেয়া হয়।
পিডিএসও/রানা