জাহাঙ্গীর হোসেন, পটুয়াখালী প্রতিনিধি
পটুয়াখালী হাসপাতালে বিদ্যুৎ বিভ্রাটে বিপর্যস্থ চিকিৎসা সেবা
জেনারেটর থাকলেও ৯ বছরেও তা চালু হয়নি!
পটুয়াখালী ২৫০ শয্যা হাসপাতালে ২৪ ঘন্টা বিদ্যুৎ সরবারহ নিশ্চিত করতে ২০০৮ সালে একটি উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন ডিজেল চালিত জেনারেটর সরবরাহ করলেও দীর্ঘ ৯ বছরেও তা চালু করা সম্ভব হয়নি। ফলে এখন পর্যন্ত বাক্সবন্দি অবস্থায় পড়ে আছে সেটি। আর লোডশেডিং কিংবা বিদ্যুৎ বিপর্যয় দেখা দিলে একদিকে যেমন রোগীদের দূর্ভোগ বাড়ে কয়েকগুন তেমনি বন্ধ থাকে হাসপাতালের বিভিন্ন বিভাগের গুরুত্বপূর্ন অপারেশন। অপরদিকে ডুয়েল সোর্সের মাধ্যমে বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করতে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ উদ্যোগ নিলেও বাস্তবে তার কোন অগ্রগতি নেই।
জানা গেছে, পটুয়াখালী ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের বিকল্প বিদ্যুৎ ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে জন্য ২০০৮ সালের ৭ জুলাই কেন্দীদয় ঔষাধাগার থেকে এ হাসপাতালে তিন লাখ ৫২ হাজার ৮০০ টাকা ব্যয়ে চায়নার তৈরী ৪০কে ডব্লিউ/৫০ কেভিএ ক্ষমতা সম্পন্ন জেনারেটর সরবরাহ করা হয়। জেরারেটরটি বরাদ্ধ পাওয়ার পর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ছোট পরিসরে জেনারেটরের জন্য আলাদা একটি কক্ষ তৈরীর জন্য জেলা গণপূর্ত বিভাগকে অনুরোধ করে। আর এ জন্য হাসপাতালের সার্বিক উন্নয়ন কর্মকান্ড পরিচালনার দায়িত্বে থাকা গণপূর্ত বিভাগ একাধিকবার উদ্যোগ নিলেও দীর্ঘ নয় বছরেও তা নির্মান সম্ভব হয়নি। ফলে ওই পাওয়ার যন্ত্রটি বন্দি অবস্থায়ই পড়ে আছে। এছাড়াও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এটির জ্বালানি খরচ মিটানোর সাধ্য নাই এ কারণে তারাও এটি চালুর ব্যাপারে আর বেশী দৌড়ঝাপ করেনি।
এদিকে ২০১৫ সালের ১৪ মার্চ স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যান মন্ত্রনালয়ের দায়িত্বে থাকা মন্ত্রী মো. নাসিম পটুয়াখালী সফরে আসেন। তখন তাঁর উপস্থিতিতে স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা কমিটির সভায় হাসপাতালে বিকল্প ব্যবস্থা হিসাবে সার্বক্ষনিক বিদ্যুৎ সরবরাহ চালুর ব্যাপারে সিদ্ধান্ত হয়। তাই ডুয়েল লাইন চালুর ব্যপারে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের অনুরোধে চলতি বছরের ৩ জানুয়ারী গণপূর্ত বিভাগ সার্বিক প্রস্তুতি নেন। একই সাথে ওয়েস্ট জোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি (ওজোপাডিকো)কে লাইন সরবারহের জন্য অনুরোধ করলে তারা তাতে সারা দেয়নি। পরে এ বিষয়ে পটুয়াখালী জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত মাসিক সমন্বয় সভায় একাধিকবার আলোচনা করেও কোন সমাধান হয়নি। সর্বশেষ ৩০ এপ্রিল হাসপাতালের তত্বাবধায়ক আবারও ওজোপাডিকোর নির্বাহী প্রকৌশলী বরাবর ডুয়েল সোর্সের বিদ্যুৎ সংযোগ স্থাপনের চিঠি দিলেও এর কোন উত্তর দেয়নি ওই প্রতিষ্ঠানের কর্তাব্যক্তিরা।
অপরদিকে হাসপাতালের সার্বক্ষনিক বিদ্যুৎ সরবরাহ না থাকায় অনেক সয়েই গুরুত্বপূর্ন অপারেশন কার্যক্রম পরিচালনায় ব্যঘাত ঘটে। সব থেকে বেশি সমস্যায় পরতে হয় গাইনি বিভাগের অপারেশন থিয়েটারে দায়িত্বে থাকা চিকিৎসকদের। গাইনী বিভাগের সিনিয়র কনসালটেন্ট মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘অপারেশন চলাকালীন সময় বিদ্যুৎ বিভ্রাট দেখা দিলে বিকল্প বিদ্যুৎ ব্যবস্থার না থাকায় হুমকিতে পরে মা ও শিশুর জীবন।’
পটুয়াখালী জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক মো. আব্দুর রহিম বলেন, ‘আমরা বিকল্প বিদ্যুৎ এর জন্য চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি কিন্তু বন্দি দশা থেকে বের হতে পারছি না। জেনারেটর চালু করতে না পারলেও ওজোপাডিকো শুধু সংযোগ দিলেই ডুয়েল সোর্সের বিদ্যুৎ লাইনটি চালু করা সম্ভব। এতে করে গ্রীড ফল না করতে হাসপাতালে সার্বক্ষনিক বিদ্যুৎ সরবরাহ থাকবে।’
এ বিষয়ে ওজোপাডিকোর নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আব্দুস সালেক খান বলেন, ‘হাসপাতালে নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহের বিষয়টি আমাদের বিবেচনায় রয়েছে। এ নিয়ে হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক, মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ ও নির্বাহী প্রকৌশলী গণপূর্ত বিভাগ এর সাথে আলোচনা চলছে।’
পিডিএসও/রানা