জিন্নাতুল ইসলাম জিন্না, লালমনিরহাট
নকল কীটনাশকের চলছে রমরমা ব্যবসা
তদারকি নেই কৃষি বিভাগের-মাসোহারা নেওয়ার অভিযোগ
লালমনিরহাট সদর উপজেলার ৯টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভাকে ঘিরে শতাধিক কীটনাশকের দোকানগুলোতে ব্যাপক হারে ভেজাল ও নিম্নমানের কীটনাশকের অবাধে রমরমা ব্যবসা চলছে। সেই সাথে অতিরিক্ত দামে বিক্রি করা হচ্ছে ইউরিয়া সার। এক শ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী এসব ব্যবসা করে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন। ফলে চাষাবাদ নষ্ট হওয়ায় অনেক কৃষক ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছেন।
কৃষি মন্ত্রনালয়ের সার ব্যবস্থাপনা ও মনিটরিং অধিশাখা বাংলাদেশ সচিবালয় এর এক আদেশে বলা হয়, নকল সার কীটনাশক বিনষ্ট ও ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য সকল জেলা ও উপজেলায় কৃষি কর্মকর্তাদের চিঠি দেওয়া হলেও তারা কিছুই করতে পারেনি। অপরদিকে উক্ত আদেশকে পূজিঁ করে নকল সার কীটনাশক বিনষ্ট ও ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিয়ে জেলা ও উপজেলায় কৃষি কর্মকর্তারা মাসোহারা নেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে।
সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, জেলা সদরের বিভিন্ন হাট-বাজার গুলোতে প্যাকেটের গায়ে লেবেল গুলো একদম অস্পষ্ট। নেই কোনে উৎপাদানের তারিখ ও মেয়াদ উত্তীর্ণ তারিখ। রেজিঃ নং এর জায়গায় গুলোতে একদম ফাঁকা দেখা গেছে। এমন ধরনের ঔষধ যেমন গনাসর দস্তা, ম্যাগনোসিয়াম, বোরাক্স, বোরন, জিপসাম, সালফার, এস ও পি সহ ম্যাকোজেব, ম্যাটালিক্স, দানাদার কীটনাশক কার্বোফুরান, ডায়াজিনন সহ বিভিন্ন ধরনের কোম্পানীগুলোর কোন অস্তিত্ব নেই। প্রতি মৌসুম এলে প্রতি বছর এ কোম্পানী নামে-বেনামে উক্ত ঔষধ সমূহ এ জেলার সহজ সরল কৃষকদের কাছে বিক্রি করে হাতিয়ে নিচ্ছে লাখ লাখ টাকা। এতে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত রয়েছে স্থানীয় নামিদামি দোকানদাররা। এমনি করে ভেজাল সারের ক্ষেত্রেও চটকদার মোরগ লাগিয়ে কৃষদেরকে ফাঁকি দেওয়া হচ্চে। বোঝার উপায় নাই কোন ঔষধ বা সার আসল কি নকল। ঔষধের প্যাকেটের গায়ে কোম্পানী পুর্নাঙ্গ ঠিকানা লেখা নেই। আছে শুধু মেইড বাই ঢাকা, চীন, ইন্ডিয়া। কিন্তু ঢাকা, চীন ইন্ডিয়ার কোন জায়গার কোম্পানী তার বিবরণ নেই। প্যাকেটের গায়ে লেবেলে ব্যাচ নং, এপি, রেজি নং, উৎপাদন তারিখ, মেয়াদ উত্তীর্ণ তারিখ, এমনকি কোম্পানীর সুনির্দিষ্ট ঠিকানাও নেই।
বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, কতিপয় টাউটবাজ অসাধু ব্যবসায়ী অধিক মুনাফা লাভে আশায় বগুড়া ও সৈয়দপুর সহ দেশের অনেকস্থানে এ সমস্ত সার তৈরি করে দেশের বিভিন্নস্থানে বিক্রি করে সর্বশান্ত করেছে সহজ সরল কৃষককে। এ বিষয়ে নেই কারো মাথা ব্যর্থা। নেই কৃষি বিভাগের লাইসেন্স তদারকি।
কৃষি মন্ত্রনালয়ের সার ব্যবস্থাপনা ও মনিটরিং অধিশাখা বাংলাদেশ সচিবালয়, ঢাকা থেকে শেখ বদিউর আলম উপ-প্রধান (কৃষি অর্থনীতিবিদ) এর স্বাক্ষরিত ১২/১০/২০১৪ইং স্মারক নং ১২,০৩১,০৪০,০২,০১,৮২,২০১৪-২৮৩ এর আদেশে বলা হয় নকল সার কীটনাশক বিনষ্ট ও ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য সকল জেলা ও উপজেলায় কৃষি কর্মকর্তাদের চিঠি দেওয়া হলে তারা কিছুই করতে পারেনি। আর এসুযোগ কাজে লাগিয়ে ফেমাস এগ্রো, এসএম এগ্রো, এসবি এগ্রো ঢাকা, পেজ এগ্রো, সুরভী এগ্রো, এগ্রো লাইফ, সান এগ্রো মাকেটিং, ফাইন্যান্স দ্যা এগ্রো প্রোডাকট, আর.এম.এইচ. এগ্রো বাংলাদেশ, হাই ফেয়ার এগ্রোভেট, ওয়েলকাম গ্রুপ, শুভ ফার্টিলাইজার, নাকাশা ইন্টারন্যাশনাল ও এ্যাকটিভ গ্রুপ কেয়ার লিঃ এর লোকজন অসাধু ব্যবসায়ীদের সাথে হাত মিলিয়ে সহজ-সবল কৃষকদের লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে প্রতিমাসে।
মহেন্দ্রনগর ইউনিয়নের কৃষক আঃ মজিদ বলেন, নকল সার ও কীটনাশক ব্যবসায়ীদের প্রলোভনে পড়ে ওইসব নকল কৃষি সামগ্রী ব্যবহারের ফলে অনেক কৃষকের চাষাবাদ নষ্টও হচ্ছে। তবে কৃষক সমাজকে বাঁচাতে এখনেই অসাধু ব্যবসায়ী ও ভুয়া কোম্পানীগুলোর বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহনের দাবী সচেত মহলের।
এ ব্যাপারে লালমনিরহাট কৃষি অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক বিদু ভুষন রায় এর সাথে যোগাযোগের চেষ্ঠা করা হলে তাকে পাওয়া যায়নি।
পিডিএসও/রানা