মাহাবাবু চান্দু , মেহেরপুর প্রতিনিধি

  ১৯ জানুয়ারি, ২০১৭

চিকিৎসার দায়ভার নিন, না হয় হত্যার অনুমতি দিন!

বসবাসযোগ্য নয় এমন একটি বাড়ির ছোট দুটি ঘরে বুদ্ধি প্রতিবন্দ্বি স্ত্রী, দুরারোগ্য রোগে আক্রান্ত দুই ছেলে ও এক নাতিকে নিয়ে বসবাস মেহেরপুরের তোফাজ্জেল হোনের। স্ত্রী-সন্তানের চিকিৎসার ব্যয়ভার মেটাতে হিমশীম খাওয়া এক অসহায় পিতা তিনি। অবশেষে সন্তানের মৃত্যুর অনুমতিপত্র অথবা চিকিৎসার দায়ভার নেয়ার আবেদন জানিয়েছেন মেহেরপুরের জেলা প্রশাসকের কাছে আবেদন করেছেন।

জানা যায়, মেহেরপুরে তোফাজ্জেল হোসেন একজন প্রান্তিক ফল ব্যবসায়ী। সে জেলা শহরের বেড়পাড়ার আক্কাস আলীর বড় ছেলে। বুদ্ধি প্রতিবন্দ্বি স্ত্রী শিরিনা বেগম (৪৫), মেয়ে সান্তনা (২৬) দুরারোগ্য রোগে আক্রান্ত বড় ছেলে আবদুস সবুর (২৪) ছোট ছেলে তুষার (১৩) এবং নাতিছেলে সৌরভকে (৮) নিয়ে তাদের বসবাস। জন্মের কয়েক বছর পর থেকে দুই ছেলে ও নাতি দুরারোগ্য ব্যাধি ডুফিনি মাসকুলার ডিসট্রোফিতে (বংশগত মাংসপেশির দুর্বলতা) আক্রান্ত। এক এক করে তাদের চিকিৎসা করতে গিয়ে ব্যবসায়ের পুঁজি, শ্বশুর বাড়ির সাহায্য, নিকটাত্বীয়ের সহযোগিতা, শেষ পর্যন্ত শহরের বড়বাজারে মুন্সি সাখাওয়াত হোসেন পৌর মার্কেটে থাকা দোকানটি বিক্রি হয়ে গেছে। বর্তমানে ফুটপথে ফল বিক্রি করে ৬ সদস্যর জীবীকা নির্বাহ করতে হিমশীম খাচ্ছে তোফাজ্জেল।

তোফাজ্জেলের বড় ছেলে সবুরের বয়স যখন ৯ বছর তখন রোগটি দেখা দেয়। একইভাবে ছোট ছেলেটিও ৯ বছর বয়সে আসার পর তার শরীরেও রোগটি বাসা বাঁধে। নাতিছেলে সৌরভের শরীরেও ওই রোগের লক্ষণ দেখা দিয়েছে। স্ত্রী মানষিক প্রতিবন্ধি। মেয়ে সান্তনার বিয়ে হয়েছিল। সেখানে যৌতুক নিয়ে বিরোধে মেয়ে সংসার করতে পারেনি। পরিবারের তিনটি রোগির ওষুধ জোগাড় করতে কুড়ি বছর ধরে তোফাজ্জেল জীবন যুদ্ধ করছে। জীবনযুদ্ধে পরাজিত হয়ে শেষ পর্যন্ত জেলা প্রশাসকের কাছে ওষুধের মাধ্যমে তাদের মৃত্যু না হয় চিকিৎসার দায়িত্ব নেবার জন্য আবেদন করেছে তোফাজ্জেল।

সরেজমিনে তোফাজ্জেলের বাড়ি গিয়ে দেখা যায় দুই সন্তান বিছানাগত। বুদ্ধি প্রতিবন্ধি সবুরের মা শিরিনা বেগন সবুরের সেবা শুশ্রুষা করছে। তোফাজ্জেল জানায় চোখের সামনে ছেলের এমন কষ্ট বাবা হয়ে সহ্যও করতে পারিনা। সারাক্ষণ ওরা বিছানাতেই থাকে। হাঁটাচলা অনেক আগে বন্ধ হয়ে গেছে। কোলে করে বাথরুমে নিতে হয়। গোসল করাতে হয়। কাপড় পরিবর্তন করতে হয়। বছরের পর বছর এটাকী সম্ভব। তাও যদি সুস্থ হবার লক্ষণ থাকতো। চিকিৎসকরা বলেছে এই রোগে শরীরের মাংসপেশি ধীরে ধীরে জমাট বেঁধে যাবে। চলার ক্ষমতা হারাবে আক্রান্তরা। এমনকী পরিবারের সকলেই এই রোগে আক্রান্ত হবে। এমতাবস্থায় কোন পথ না পেয়ে জেলা প্রশাসনের কাছে আবেদন করতে হয়েছে বলে তোফাজ্জেল জানায়। আবেদনে কোন ওষুধের মাধ্যমে মেরে ফেলার অনুমতি অথবা চিকিৎসার দায়িত্ব নেয়ারও অনুরোধ করেছে তোফোজ্জেল। তোফাজ্জেল জানায় মেহেরপুরের এমপি ফরহাদ হোসেন দোদুল তাকে আর্থিক সাহায্য হিসেবে ৩০ হাজার টাকা অর্থ সহযোগিতা করেন।

এই রোগটিকে প্রথমে সনাক্ত করেন মেহেরপুর জেনারেল হাসপাতালের শিশু বিশেষজ্ঞ ডা. মাহাবুবুল আলম।চিকিৎসার জন্য ভারতের পিয়ারলেস, কেয়ার, কোটারি মেডিকেল সেন্টার, ন্যাশনাল ইন্সটিটিউট অব হোম্যিওপ্যাথ। বাংলাদেশের ঢাকাস্থ ফ্রান্স দুতাবাসের ফ্রান্সের একজন ডাক্তারকেউ দেখিয়েছেন। কোন সুফল মেলেনি। তবে আশার বাণী শুনিয়েছেন ভারতের ন্যাশনাল ইন্সটিটিউট অব হোমিওপ্যাথ। তারা জানিয়েছেন রোগটি চিকিৎসায় ভাল করা সম্ভব তবে তাদের সেখানে দির্ঘদিন ভর্তি থেকে দির্ঘমেয়াদে চিকিৎসা দেয়া যায়।

দুরারোগ্য রোগে আক্রান্ত আবদুস সবুর সুস্থ হবার জন্য আর সবুর করতে না পারার কথা জানিয়ে বলে- কবে আমার মরণ হবে। একথা বলতে গিয়ে সবুর হাউ মাউ করে কেঁেদ ফেলে।

জেলা প্রশাসক পরিমল সিংহর মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি জেলার বাইরে থাকার কথা জানান জেলা প্রশাসনের ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসক ডি ডিএলজি খায়রুল হাসান। তিনি জানান বিষয়টি খুব মানবিক। আমরা বিষয়টি নিয়ে উদ্বিঘ্ন। তাকে কীভাবে সাহায্য সহযোগিতা করা যায় তা নিয়ে আলোচনা করছি।

পিডিএসও/রানা

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist