লালমনিরহাট প্রতিনিধি

  ১৫ জুলাই, ২০২০

লালমনিরহাট রেলওয়ের ট্রাফিক বিভাগে নিয়োগ বাণিজ্য

স্থায়ী ও রাজস্ব খাতে নিয়োগের সুযোগ পেয়ে লালমনিরহাট রেলওয়ের ট্রাফিক বিভাগ মোটা টাকার নিয়োগ বাণিজ্যে মেতে উঠেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এ বাণিজ্য করতে উচ্চ আদালতের নির্দেশ অমান্য ও করোনা দুর্যোগে দীর্ঘ ৯/১০ বছরের চাকুরীর অভিজ্ঞতা সম্পন্ন শ্রমিকদের ছাটাই করছে বলে অভিযোগ শ্রমিকদের। করোনা কালে বকেয়া পরিশোধ না করে ছাটাই করায় নিদারুন কষ্টে পড়েছেন শ্রমিকরা।

জানা গেছে, বাংলাদেশ রেলওয়ের ট্রাফিক বিভাগের অধিনে রেল ক্রসিংয়ে অস্থায়ী গেটম্যান নিয়োগ দেয়া হয়। যা স্থায়ী গেটম্যান নিয়োগ না হওয়া পর্যন্ত বার্ষিক নবায়নের মাধ্যমে চলমান থাকবে। লালমনিরহাট বেলওয়ে বিভাগে এমন শ্রমিক কর্মরত রয়েছেন ১০৮ জন। যারা দৈনিক ৪শত টাকা মজুরী হিসেবে উন্নয়ন খাত থেকে প্রতি মাসে ১২ হাজার টাকা বেতন পান। প্রতি বছর নবায়ন যোগ্য এসব শ্রমিক ৩ বছর সততার সাথে দায়িত্ব পালন করলে তাদেরকে রাজস্ব খাতে স্থান্তারিত করা যাবে মর্মে ২০০৩ সালে মন্ত্রী পরিষদ বিভাগেও নীতিগত ভাবে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। যার স্মারক নং-মপবি/কঃবিঃশাঃ কপগ-১১/২০০১-১১১।

এরপর ২০১৭ সালে অস্থায়ী ভিত্তিতে নিয়োগ পাওয়া এসব শ্রমিককে একই পদে রাজস্ব খাতে নিয়োগ প্রদানের ব্যবস্থা করতে হাইকোর্ট নির্দেশনা জারি করে। যার প্রেক্ষিতে একই সালের ৩ ডিসেম্বর এসব শ্রমিককে রাজস্ব খাতে আত্মীকরনের ব্যবস্থা করতে রেলওয়ের সকল বিভাগীয় কার্যালয়ে নির্দেশনা জারি করে পত্র পাঠান রেলভবনের সংস্থাপন শাখার উপ পরিচালক কামাল শেখ। যার স্মারক নং- ৫৪.০১.২৬০০.০০৬.১১.০২৫.১২।

উচ্চ আদালতের নির্দেশ অমান্য করে লালমনিরহাট রেল বিভাগে অর্ধশতাধিক শ্রমিক ছাটাইয়ের অভিযোগ শ্রমিকদের। করোনা কালে অফিস ও রেল সীমিত করন করার সুযোগে গত ২ জুলাই জি/এলসি/বিবরন/১২/পর্ব-২ নং স্মারকের পত্রের মাধ্যমে রেলওয়ে লালমনিরহাট বিভাগীয় এলাকার ৫৮ জন অস্থায়ী গেটম্যানকে (টিএলআর) ছাটাই করেন বিভাগীয় ট্রাফিক সুপারিনটেনডেন্ট(ডিটিএস) স্নেহাশীষ দাশ গুপ্ত।

করোনা দুর্যোগে দুই মাসের বকেয়া বেতন না পেয়ে আর্থিক সংকটে পড়া এসব শ্রমিক চাকুরী হারিয়ে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন। পরিবার পরিজন নিয়ে খেয়ে না খেয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছেন তারা। শ্রমিক ছাটাইয়ের চিঠি বাতিল করে তাদের চাকুরী বহালের দাবিতে চাকুরীহারা ৫৮ শ্রমিক রেলমন্ত্রীসহ রেলভবনের বিভিন্ন দফতরে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন। সাম্প্রতি এমন ঘটনায় শ্রমিকদের আন্দোলনের মুখে সেই ছাটাই চিঠি বাতিল করতে বাধ্য হন রেলওয়ে পাকশী বিভাগ। লালমনিরহাট বিভাগেও পেট বাঁচাতে এমন আন্দোলনের হুমকী দিয়েছেন শ্রমিকরা।

চাকুরী হারা কাউনিয়ার গেটম্যান আমিনুর রহমান সাজু বলেন, করোনা কালে দুই মাস ধরে বেতন পাচ্ছি না। বউ অন্তসত্ত্বা হয়ে হাসপাতালে ভর্তি রয়েছে। এ দিকে চাকুরীও চলে গেলো। চাকুরী ফিরে পেতে বিভিন্ন দফতরে ছুটছি কোন কাজ হচ্ছে না। এতদিনের চাকুরী হঠাৎ চলে গেলে সংসারে আগুন জ্বালানোর কোন সুযোগ নেই। না খেয়ে মরা ছাড়া কোন উপায় নেই। প্রধানমন্ত্রীর সরাসরি হস্তক্ষেপ কামনা করেন তিনি।

দীর্ঘ ৯ বছরের চাকুরী হঠাৎ চলে যাওয়ার চিঠি পেয়ে অসুস্থ হয়ে জেলার কালীগঞ্জ হাসপাতালে চিকিৎসা নেন ওই এলাকার ভোটমারী স্টেশনের গেটম্যান বিনয় বর্ম্মন। তিনি বলেন, উন্নয়ন খাত থেকে রাজস্ব খাতে যাচ্ছি শুনে ভাল লেগেছিল। অন্যকোন কাজ শিখি জানি না। এ কাজ দায়িত্বসহকারে পালন করে সংসারের চাকা সচল রেখেছি । হঠাৎ এভাবে চাকুরী যাবে ভাবতে পারছি না। এখন সংসার চলবে কি ভাবে? এ চিন্তায় ঘুম আসে না।

লালমনিরহাট রেলওয়ে বিভাগীয় ট্রাফিক সুপারিনটেনডেন্ট(ডিটিএস) স্নেহাশীষ দাশ গুপ্ত'র সরকারী নম্বর ০১৭১১৬৯১৬৫০ তে একাধিকবার ফোন দিলেও তিনি তার রিসিভ করেননি।

পিডিএসও/এসএম শামীম

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
লালমনিরহাট,রেলওয়ে,নিয়োগ বাণিজ্য
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close