আবুজার বাবলা, শ্রীমঙ্গল

  ১৫ জুলাই, ২০২০

শ্রীমঙ্গলে কোটি টাকার অবৈধ বালু ব্যবসা

মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে কোটি টাকার অবৈধ বালুর ব্যবসা চলছে। একটি চিহ্নিত সিন্ডিকেট প্রাকৃতিক ছড়া, ছোট নদী ও ফসলি জমিতে শ্যালো মেশিন বসিয়ে বালু উত্তোলন করায় পাহাড়, রিজার্ভ ফরেস্ট, চা বাগান, রাস্তাঘাট, কৃষি জমি, ব্রিজ, কালভার্ট, ঘরবাড়িসহ পরিবেশের ওপর বিরূপ প্রভাব পড়ছে।

প্রশাসনের পক্ষ থেকে মাঝে মধ্যে অবৈধ বালু উত্তোলনকারীদের বিরুদ্ধে অভিযান চালিয়ে জেল জরিমানা করা হলেও কয়েকদিনের ব্যবধানে পরিস্থিতি আগের অবস্থায় ফিরে যায়। এভাবে গেল ৪ বছরে এসব অবৈধ বালু উত্তোলন থেকে একটি প্রভাবশালী সিন্ডিকেট কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে।

মঙ্গলবার সকালে উপজেলার সাতগাঁও, ভূনবীর শাসন ও মির্জাপুর এলাকা ঘুরে অর্ধশত স্পটে অবৈধ বালুর ক্ষেত্রের সন্ধান পাওয়া গেছে। দেখা গেছে, পাহাড়ি ছড়া, ছোট নদী ও কৃষি জমি খুঁড়ে সেখানে মেশিন বসিয়ে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। এর ফলে বিস্তৃর্ণ ফসলি জমি গভীর গর্তে পরিণত হয়েছে।

উত্তোলন করা এসব বালু পরিবহনে ভারী যানবাহন ব্যাবহার করায় গ্রামীন সড়ক ভেঙে পড়ছে। ঝুঁকিতে রয়েছে অনেক বাড়িঘরও। বছরের পর বছর ধরে সাতগাও ভুনবীর এলাকার ঢাকা-সিলেট আঞ্চলিক মহাসড়কের পাশে অন্তত ৬টি স্থানে বালুর ডিপো স্থাপন করে এক্সিভেটর জাতীয় ভারী যন্ত্রপাতি ব্যবহার করে বালু বেচাকেনা করছে প্রভাবশালীরা।

এই সব এলাকার স্থানীয়রা জানিয়েছেন, কৃষি জমি নষ্ট করে বালু তোলায় পরিবেশের উপর মারাত্মক প্রভাব পড়ছে। বালু পরিবহনে ভারী যানবাহন ব্যাবহার করায় গ্রামীণ সড়ক ভেঙে পড়ছে। মাটি গভীর গর্ত করে বালু তোলার কারণে আশে পাশের বাড়িঘরও ভাঙনের মুখে পড়েছে। ভুক্তভুগীরা জানান, আব্দুল জলিল, কবির মোল্লা, সিধাম, উজ্জল মিয়া, দিপঙ্কর মাষ্টারসহ প্রায় ২০-২২জন প্রভাবশালী এসব মূল্যবান সিলিকা বালু তুলে বিক্রি করে দিচ্ছেন। বালু উত্তোলনকারীদের মধ্যে আব্দুল জলিলের সাথে কথা বললে তিনি জানান, ‘আমি বালু তোলার সাথে জড়িত না, তবে বালু কিনে কেনা-বেচা করি’।

পরিবেশবাদী সংগঠন বেলার সিলেট বিভাগীয় সমন্বয়কারী এড. শাহ সাহেদা বলেন, ‘এসব এলাকাকার বালু খনিজ সম্পদ উন্নয়ন থেকে মূল্যবান সিলিকা বালু হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। এনিয়ে এই সম্পদ রক্ষা ও পরিবেশের ক্ষয়ক্ষতি বিবেচনায় ২০১৬ সালে হাইকোর্ট ডিভিশনে একটি রিট পিটিশন (২৯৪৮/১৬) এর প্রেক্ষিতে গত ১৮ সালে ২৭-২৮ মে হাইকোর্ট ছড়াগুলোর সব ধরনের লীজ প্রক্রিয়ায় নিষেধাজ্ঞা জারি করে। পাশাপাশি দুই দফা নির্দেশনা দেয় যে পরিবেশেগত প্রভাব নিরূপন করে যন্ত্র ব্যবহার ব্যতিরেখে লীজ বন্দোবস্ত দেয়ার’।

জানা যায়, এর ধারাবাহিকতায় খনিজ সম্পদ উন্নয়ন ব্যুরো থেকে গত ৮ সেপ্টেম্বর পরিবেশ অধিদপ্তরকে জেলার ৫২টি সিলিকা বালু কোয়ারির পরিবেশগত প্রভাব নিরূপনের জন্য চিঠি দেয়। দীর্ঘদিনেও সেই চিঠির জবাব পাওয়া যায়নি। পরিবেশ অধিদফতরের মৌলভীবাজার এর সহকারী পরিচালক বদরুল হুদা এ প্রতিবেদককে বলেন, হাইকোর্টের রায় অনুযায়ী খনিজ সম্পদ উন্নয়ন ব্যুরো কর্তৃক ইনভাইরনমেন্টাল ইমপ্যাক্ট এসেসমেন্ট (ইআইএ) দাখিল পূর্বক পরিবেশগত ছাড়পত্র প্রদানের রায় থাকলেও তারা কোন এসেসমেন্ট দাখিল করেনি। এনিয়ে দুই দফা পত্র দিয়েছি কিন্তু জবাব না পাওয়ায় আমরা কোন সিদ্ধান্তে আসতে পারছি না।

তবে খনিজ সম্পদ উন্নয়ন ব্যুরোর উপ-পরিচালক মামুনুর রশিদ বলেন, ‘পরিবেশগত প্রভাব নিরূপন করার কথা পরিবেশ অধিদপ্তরের। এটা তারা এখনও সম্পন্ন করতে পারেনি। যে কারনে প্রক্রিয়াটি সেখানেই পড়ে আছে।

ফলে উচ্চ আদালতের নির্দেশনার দীর্ঘ দেড় বছর পরও জেলার ৫২টি বালু ছড়ার লিজ বন্দোবস্ত হওয়া না হওয়া নিয়ে সরকারের দুই দফতরের তৎপরতা নিয়ে জনমনে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। একই সাথে এই সিন্ধান্তহীনতা ও সময়ক্ষেপনের ফলে সরকার ৪ বছওে কয়েক কোটি কোটি টাকার রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হয়েছে।

বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) মৌলভীবাজার জেলা সমস্বয়কারী আ স ম সালেহ সোহেল বলেন, ‘পরিবেশ নষ্ট করে অবৈধভাবে মূল্যবান সিলিকাবালু উত্তোলনের ফলে পরিবেশের বিপর্যয়ের বিষয়টি নিয়ে আমরা উদ্বিগ্ন। আমরা মনে করি যারা অপরাধ করছে তাদের আইনের আওতায় আনা উচিত’।

জানতে চাইলে মৌলভীবাজার জেলা প্রশাসক মীর নাহিদ আহসান বলেন, সিলিকা বালু আমাদেও মূল্যবান খনিজ সম্পদ। এটা উত্তোলন করা নিষেধ। তিনি বলেন শ্রীমঙ্গলে এভাবে বালু উত্তোলন বন্ধে স্থানীয় এসিল্যান্ড ও ইউএনওকে আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার জন্য প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেবেন বলে তিনি জানান।

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
শ্রীমঙ্গল,অবৈধ বালু
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close