মো. ইব্রাহীম, রাজৈর (মাদারীপুর)

  ১১ জুলাই, ২০২০

রাজৈরে কালের সাক্ষী খালিয়া রাজারাম মন্দির

দেশের বিভিন্ন স্থানে রয়েছে ঐতিহাসিক নিদর্শন। এর একটি খালিয়া রাজারাম মন্দির। ঐতিহ্যবাহী প্রত্নতাত্ত্বিক সাংস্কৃতিক নিদর্শন রাজারাম মন্দিরটি ধ্বংসের দ্বার প্রান্তে।

আকর্ষণীয় পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে ওঠার সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও প্রয়োজনীয় সংস্কার ও সংরক্ষণের অভাবে হারিয়ে যাচ্ছে রাজারাম মন্দিরের ঐতিহ্যর গৌরব। প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর এসব মন্দিরের সংস্কার কাজ পরিচালনা করছে। ১৯৯৫ সালে মন্দিরের দেয়ালের ভগ্নাংশ মেরামত, আস্তর সংযোজন ও আঙিনার চারপাশে লোহার গ্রীল সংযোজনের কাজ সম্পন্ন করেছে।

মাদারীপুরের রাজৈর উপজেলার খালিয়া ইউনিয়নে প্রাচীন ভাস্কর্য শিল্পের অনুপম নিদর্শন খালিয়া রাজারাম এ মন্দির। রাজারাম রায় চৌধরী জমিদারির গোড়াপত্তন কবে হয়—সে সস্পর্কে কোনো সুনির্দিষ্ট ধারণা নেই। তবে রাজারাম রায়ের নামে সপ্তদশ শতাব্দীতে মন্দিরটি নির্মিত করা হয়েছে। এ থেকে ধারণা করা হয়, সপ্তদশ শতাব্দীতেই এই জমিদারির গোড়া পত্তন হয়। পুরোনো মন্দিরটি এখনো মন কাড়ে মানুষের। তবে রাজামার রায় চৌধরী বসতবাড়ির কোনো অস্তিত্ব নেই।

এ মন্দিরটি কালের সাক্ষী হয়ে আজও টিকে রয়েছে ঐতিহাসিক নিদর্শন হিসেবে। মাদারীপুর জেলার একমাত্র প্রাচীন মন্দির। তৎকালীন জমিদার কালীসাধক এ মন্দির বিপুল অর্থব্যয়ে নির্মাণ করেছিলেন। নির্মাণের সঠিক তারিখ জানা যায়নি। নির্মাতার নামেই এটি পরিচিত হয়ে উঠেছে। এটি বিশেষ পৌরাণীক রীতিতে তৈরি। দেখতে চৌচালা ঘরের মতো। ২৩ শতাংশ জমির উপর নির্মিত মন্দিরের দৈর্ঘ্য ২০ ফুট, প্রস্থ ১৬ ফুট এবং উচ্চতা ৪৭ ফুট। দ্বিতল মন্দিরের এসব টেরাকোটায় রামায়ন ও মহাভারতের বিভিন্ন দৃশ্য ফুটিয়ে তোলা হয়েছে নিপুণ দক্ষতায়।

এছাড়া মন্দিরের গায়ে রয়েছে বিভিন্ন দেব দেবী, পশুপাখি ও লতাপাতার চিত্র। দক্ষ শিল্পীদের নিপুণ হাতের কারুকাজ ৪শ বছর পরও মানুষের মন কাড়ে এ মন্দির। রাজারাম মন্দিরের অলংকরণের জন্য ব্যবহৃত টেরাকোটায় রয়েছে কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধ, রামায়ণ ও মহাভারতের নানা কাহিনি। তবে মন্দিরের বিভিন্ন স্থানে ফাটল সৃষ্টি হযেছে। দেয়ালে বটগাছ, শেওলা ও পরগাছা জন্মেছে। জমিদার রাজারাম রায় চৌধুরী নিজেই এ মন্দিরে পূজা করতেন। মন্দিরের নিচ তলায় ৩টি কক্ষ ও উপরের তলায় ৬টি কক্ষ রয়েছে। উপরের তলায় ভেতরের দিকে ফাটল ধরেছে। যেকোনো সময় ঘটতে পারে দুর্ঘটনা। কোথাও চুনসুরকি খসে পড়ছে। গাছের ছায়াতে অন্ধকার হয়ে পড়েছে মুন্দিরটি। তৎকালীন রাজাদের ৩৫০টি পূজা হতো। তবে প্রধান পূজামণ্ডপ ছিল রাজারাম মন্দির। মন্দিরের দক্ষিণ পাশে রয়েছে আরও একটি ভবন। শান্তি কেন্দ্রের সাথে ছিল অন্ন পূর্ণ নামে আরও একটি মন্দির।

অপরদিকে প্রায় ২৫০ একর জমির ওপর অবস্থিত রাজারামের খালিয়া জমিদার বাড়ি। জমিদার আমলে এখানে গড়ে তোলা হয় আকর্ষণীয় দোতলা-তিন তলাবিশিষ্ট দালান-কোঠা ও বাগানবাড়ি। এখানকার সারিবদ্ধ দালান-কোঠা, বাগানবাড়ি, পূজা মণ্ডপ ও শানবাঁধানো পুকুর ঘাট আজও কালের সাক্ষী হয়ে টিকে আছে। কালুর মঠ, জমিদার শিশির গাঙ্গলীর বাড়ি, মজুমদার বাড়ি, মুখাজী বাড়ি ও জমিদাররা ছিলেন প্রচুর প্রতাপশালী। ওই সময়ে জমিদারদের বাড়ির কাছ ঘেঁষে জনসাধারণ চলা চল করতে ভয় পেতেন।

জমিদার রাজা রাম চৌধুরীর বসতভিটার চিহ্নটুকু মুছে গেছে বহু আগেই। আজও শুধু স্মৃতি হয়ে দাঁড়িয়ে আছে রাজারাম মন্দির ও খালিয়া রাজারাম ইনস্টিটিউশন। বর্তমানে রাজারাম মন্দিরটি দেখা শোনার জন্য জাতীয় জাদুঘর ও প্রত্নতত্ব বিভাগ সম্প্রতি একজন সাইড পরিচারক নিয়োগ করেছে। তিনি শুধু মাঝে মাঝে এসে কিছু পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার কাজ করেন। কিন্তু নেই যথাযথ উদ্যোগ। সবই যেন আনুষ্ঠানিকতা। আর প্রতিষ্ঠানিক নিয়ম রক্ষার জন্য পদক্ষেপ। প্রতি বছর দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে দেখতে আসেন ঐতিহ্যবাহী রাজারাম মন্দির। এরই পাশে রয়েছে শান্তিকেন্দ্র নামে ছোট পার্ক। প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করলে এই রাজারাম মন্দির এলাকায় অনায়াসে গড়ে উঠতে পারে নয়নাভিরাম পর্যটন কেন্দ্র।

পিডিএসও/হেলাল

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
খালিয়া রাজারাম মন্দির,রাজৈর,কালের সাক্ষী
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close