লালমনিরহাট প্রতিনিধি

  ১০ জুলাই, ২০২০

তিস্তার পানি বিপৎসীমার ১৫ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত

তৃতীয় দফার পর আবারো‌ উজানের পাহাড়ি ঢল ও টানা বর্ষনে তিস্তার পানি বিপৎসীমার ১৫ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ফলে লালমনিরহাটের তিস্তা তীরবর্তি মানুষগুলো বড় বন্যার আশঙ্কা করছে। শুক্রবার বিকেল ৫টায় দেশের বৃহত্তম সেচপ্রকল্প লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা উপজেলার তিস্তা ব্যারাজ ডালিয়া পয়েন্টে তিস্তার পানি প্রবাহ রেকর্ড করা হয় ৫২ দশমিক ৭৫ সেন্টিমিটর। যা (স্বাভাবিক ৫২ দশমিক ৬০সেঃমি) বিপৎসীমার ১৫ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

শুক্রবার ভোর থেকে ক্রমেই পানি বৃদ্ধি পেয়ে বিপৎসীমার ১০ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হলেও সময় বাড়ার সাথে সাথে পানি বৃদ্ধি পেয়ে সন্ধ্যা ৬টায় ১৫ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। গেল কয়েক সপ্তাহে তৃতীয়বার তিস্তার পানি বৃদ্ধি হয়। যার ফলে নদী তীরবর্তী মানুষগুলো এবার বড় বন্যার আশঙ্কা করছে।

তিস্তা পাড়ের মানুষেরা জানা, গেল তিনসপ্তাহে উজানের পাহাড়ি ঢল ও কয়েক দিনের বৃষ্টিতে তিস্তার পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। এতে শুকিয়ে যাওয়া মৃত প্রায় তিস্তা তৃতীয় ধাপে আবারো ফুলে ফেঁপে উঠে ফিরে পেয়েছে চিরচেনা রুপ। হেঁটে পাড়ি দেয়া তিস্তায় চলতে শুরু করেছে নৌকা। হাকডাক বেড়েছে মাঝি মাল্লাদের। কর্মব্যস্থতা দেখা দিয়েছে তিস্তাপাড়ের জেলে পরিবারে।

অপরদিকে পানি বেড়ে যাওয়ায় তিস্তার তীরবর্তি জেলার ৫টি উপজেলার প্রায় ২৫ হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়ে। জেলার পাটগ্রাম উপজেলার দহগ্রাম, হাতীবান্ধার সানিয়াজান, গড্ডিমারী, সিন্দুর্না, পাটিকাপাড়া, সিংগিমারী, কালীগঞ্জ উপজেলার ভোটমারী, কাকিনা, আদিতমারী উপজেলার মহিষখোচা, পলাশী, সদর উপজেলার খুনিয়াগাছ, রাজপুর, গোকুন্ডা, ইউনিয়নের তিস্তা নদীর তীরবর্তি নিম্নাঞ্চলের প্রায় ৫ হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।

এদিকে হঠাৎ পানি বৃদ্ধি দেখে তিস্তাপাড়ের মানুষ বড় রকমের বন্যার শ্বঙ্কা করলেও বন্যা সতর্কীকরন কেন্দ্রের দাবি তিস্তায় বড় ধরনের বন্যার কোন আশঙ্কা নেই। বৃষ্টির কারনে উজানের ঢেউয়ের ফলে পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। উজানের পানি প্রবাহ কমে যাচ্ছে। তাই ডালিয়া পয়েন্টে তিস্তার পানি প্রবাহ কমে যাবে বলে দাবি করেছে পানি উন্নয়ন বোর্ড ডালিয়া শাখা। পলি ও বালু জমে তিস্তা ভরাট হওয়ায় সামান্যতেই তিস্তার পানি প্রবাহ লোকালয়ে প্রবাহিত হয়ে বন্যার সৃষ্টি করে। তবে আতংকিত না হতে পরামর্শ বন্যা সতর্কীকরন কেন্দ্রের।

তবে হঠাৎ তিস্তায় পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় সৃষ্ঠ বন্যায় চরাঞ্চলের সবজি, বাদাম ও ভুট্টাসহ ফসলের ব্যাপক ক্ষতির আশংকা করছে চাষিরা। অনেকের ফসলের ক্ষেত বন্যার পানিতে ডুবে গিয়ে ফসলহানীর শ্বঙ্কায় চিন্তিত কৃষকরা। তিস্তার তীরবর্তি নিম্নাঞ্চলের পানিবন্দি পরিবারগুলো শিশু-বৃদ্ধ ও গবাদি পশুপাখি নিয়ে পড়েছেন বিপাকে।

হাতীবান্ধা উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) ফেরদৌস আলী বলেন, এ উপজেলার ৬টি ইউনিয়ন তিস্তার বন্যায় ক্ষতিগ্রস্থ হয়। পানিবন্দি পরিবারগুলোর তালিকা করতে সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন পরিষদকে বলা হয়েছে। তালিকা পেলে বরাদ্ধ নিয়ে ত্রাণ বিতরন করা হবে।

তিস্তা ব্যারাজের ডালিয়ার নির্বাহী প্রকৌশলী রবিউল ইসলাম বলেন, উজানের পাহাড়ি ঢলে তিস্তার পানি শুক্রবার রাতে থেকে বাড়তে থাকে। বেলা ১২ টায় বিপৎসীমার ১০ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছিল। সময় বাড়ার সাথে সাথে পানি বৃদ্ধি পেয়ে সন্ধ্যা ৬টায় ১৫ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ব্যারাজ রক্ষার্থে ব্যারাজের ৪৪টি জলকপাট খুলে দেয়া হয়েছে।

পিডিএসও/এসএম শামীম

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
তিস্তার পানি,প্রবাহিত
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close