হামিদুর রহমান, মাধবপুর(হবিগঞ্জ)
মাধবপুরে সচেতনতা ও কঠোরতা নিয়ে মাঠে ২ নারী সম্মুখযোদ্ধা
মাধবপুরের আলাকপুরে বসবাসকারী পঞ্চাশোর্ধ্ব স্বামী পরিত্যক্তা মালা বেগম। জীবনের শেষ প্রান্তে আশ্রয় নিয়েছেন ছোটবোন স্বামীহারা সাধনার ঘরে। গত ২বছর যাবৎ অন্ধত্ব বরণকারী বেদে মহিলা মালা বেগমের দেখভাল করতে ভাইজি মহিমা আক্তারকে ঘরে রেখে সাধনা(৪০) জীবিকার তাগিদে বের হতেন গ্রামগঞ্জে।
মহামারি করোনার কারনে সাপখেলা, তাবিজ বিক্রি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় পুরুষহীন ৩জনের সংসারে বেঁচে থাকা যখন কঠিন, সেই সময়ে মানবতার টানে ত্রাণ সহায়তা নিয়ে বেঁদে পল্লীতে হাজির হয়েছিলেন হবিগঞ্জের মাধবপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তাসনূভা নাশতারান। দুর্যোগকালে বেঁদে পল্লীর ৮৪ ঘরে ত্রাণ পৌঁছে দেওয়ায় কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন মন্টু ও তার স্ত্রী নাজমাসহ বেদে পল্লীর বাসিন্দারা। শুধু বেঁদে পল্লীই নয়, করোনায় উপার্জন হারানো কৃষ্ণনগর গ্রামের ইদ্রিস হিজড়ার মত উপজেলার তৃতীয় লিঙ্গরাও বঞ্চিত হয়নি ত্রাণ সহায়তা থেকে। মানবিক সহায়তার পাশাপাশি জনসচেতনতা সৃষ্টি করতে কঠোরতাও দেখিয়েছেন। গত মার্চ থেকে জুন মাসে ১৫০জনের বিরুদ্ধে ভ্রাম্যমাণ আদলাত পরিচালনা করে ৩লাখ ৫৩হাজার ৮শ অর্থদণ্ড, ২৫ জনকে কারাদণ্ড দিয়েছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা।
উপজেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলের কর্ম ও উপার্জনহীন বেসরকারি শিক্ষক, মধ্যবিত্ত পরিবার খুঁজে বের করে ত্রাণ সহায়তা দিচ্ছেন সহকারী কমিশনার(ভূমি) আয়েশা আক্তার। সরকারি ত্রাণের পাশাপাশি ব্যক্তিগত অর্থে চাল, ডাল, তেল, সাবান ও সবজি কিনে দিয়েছেন বেশ কয়েকটি পরিবারকে। বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তাদের নিয়ে দক্ষতার সাথে মহামারি মোকাবেলায় জনসচেতনতা ও দারিদ্রহীনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে অর্পিত দায়িত্বের পাশাপাশি নিজবাসায় রান্না করে ডরমেটরির কর্মকর্তাদের খাবার দিতেও ভুলেননি তিনি। গত ৩ মাসে স্বাস্থ্য বিধি অমান্য, মাদক, ভোক্তা, জুয়া, সরকারি সম্পদ চুরির দায়ে ১৪ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে বিনাশ্রম কারাদণ্ড, ২৫১ জনের কাছ থেকে ৯ লাখ ৪৫ হাজার ৩শ টাকা অর্থদণ্ড আদায় করেন।
রেড জোনে চিহ্নিত সিলেট বিভাগের প্রবেশদ্বার মাধবপুরের বর্তমান অবস্থা রুখতে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে রাতদিন কাজ করে যাচ্ছেন তারা। জনসেবার অঙ্গীকার নিয়ে নির্বাচিত কতিপয় জনপ্রতিনিধি মাঠে না থাকলেও প্রায় ৩ লক্ষ ৬০ হাজার জনগণের পাশে থাকায় সর্বমহলের প্রশংসা কুড়িয়েছেন। দক্ষতার সহিত সুষম বণ্ঠন নিশ্চিত করায় ত্রাণ কেলেঙ্কারির ঘটনা ঘটেনি মাধবপুরে। সরকারি অনুদানের সদ্ব্যবহার ও মানুষকে ঘরে রাখা নিশ্চিত করতে নিজের গাড়িতে বহন করে প্রকৃত অসহায়দের হাতে তুলে দিচ্ছেন ত্রাণ। সচেতন করছেন করোনাভাইরাস ও জনসমাগম এড়িয়ে মাস্ক ব্যবহারে। খোঁজ নিচ্ছেন আইসোলেশন ও কোয়ারেন্টাইনে থাকা রোগীদের।
উপজেলা সূত্র জানায় এ পর্যন্ত ৮৪ করোনা আক্রান্তের মধ্যে ১২ জন সুস্থ হয়ে উঠলেও উপসর্গ নিয়ে মারা গেছেন ১জন। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তাসনূভা নাশতারন বলেন, অর্ধশত শিল্পকারখানার মাধবপুর অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। বিদেশি শ্রমিকসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের শ্রমিকরা কর্মরত। সংক্রমণের সংখ্যা রোধ করতে আমরা মাঠে কাজ করছি।