খাগড়াছড়ি প্রতিনিধি

  ০৭ জুলাই, ২০২০

সন্তু লারমার নির্দেশেই বান্দরবানে ৬ খুন, খাগড়াছড়িতে বিক্ষোভ

বান্দরবানে দুই পক্ষের গোলাগুলিতে ৬জন নিহতের ঘটনায় খাগড়াছড়িতে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছে এমএন লারমা সমর্থীত পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি (জেএসএস)। মঙ্গলবার বিকেলে জেলা শহরের মহাজনপাড়া এলাকা থেকে বিক্ষোভ মিছিল বের হয়ে শাপ্লা চত্ত্বরে এসে প্রতিবাদ সমাবেশ করে।

জেএসএস (এমএন লারমা) জেলার সহ-সভাপতি সুভাস কুমার চাকমার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত প্রতিবাদ সমাবেশে, ইউপিডিএফ (গণতান্ত্রীক) সমর্থীত পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের (পিসিপি) কেন্দ্রীয় আহবায়ক দীপন চাকমা, পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি জেএসএস (এমএন লারমা) জেলা যুব বিষয়ক সম্পাদক প্রত্যয় চাকমা বক্তব্য রাখেন।

এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি (জেএসএস) সভাপতি ও পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদের চেয়ারম্যান জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় সন্তু লারমাকে দায় করেছে বক্তারা।

বক্তারা বলেন, সন্তু লারমার নির্দেশেই পরিকল্পিতভাবে বান্দরবানে জেএসএস (এমএন লারমা) সমর্থীত ছয় নেতাকর্মীকে হত্যা করা হয়েছে। দিনেদুপুরে তাদের বাড়িতে গিয়ে পরিবারের সামনে ব্রাশ ফায়ার করে নির্মমভাবে তাদের হত্যা করেছে খুনিরা। সন্তু লারমাকে স্ব জাতী হত্যার নির্দেশ দাতা এবং খুনি আক্ষায়ীত করে অবিলম্ভে তার ফাঁসির দাবি জানান বক্তারা। এই হত্যাকাণ্ডের সাথে জরিত খুনি সন্তু লারমা এবং তার দোসরদের দ্রুত গ্রেফতার করে শাস্তি প্রদানের জন্য প্রশাসনের প্রতি জোর দাবি জানানো হয়। অন্যতায় জেএসএস (এমএন লারমা), ইউপিডিএফ (গণতান্ত্রীক), পাহাড়ি ছাত্র পরিষদসহ (পিসিপি) জনগণকে সাথে নিয়ে পার্বত্য চট্টগ্রামে বিহত্তর আন্দোলনের হুশিয়ারী দেয়া হয় সমাবেশ থেকে।

বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সমাবেশে বিভিন্ন এলাকা থেকে আগত জেএসএস (এমএন লারমা), ইউপিডিএফ (গণতান্ত্রীক), পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ (পিসিপি) নেতাকর্মীরাসহ সাধারণ নারী পুরুষও অংস নেয়।

উল্লেখ্য, পার্বত্যাঞ্চলে আঞ্চলিক দল গুলোর আধিপত্যের লড়াই বেশ কিছুদিন যাবত অনেকটাই স্তিমিত ছিল। ছোটখাটো কয়েকটি ঘটনা ঘটলেও বড় ধরনের কোন সংঘর্ষ ঘটেনি। তবে, শেষ পর্যন্ত দেশে মহামারী করোনা পরিস্থিতিতেও থামেনি পাহাড়ের ভ্রাতৃঘাতী সংঘাত। আঞ্চলিক দলগুলোর আধিপত্যের লড়াইয়ে সবশেষ বান্দরবানে মারা গেছেন ৬ জন। আহত হয়েছেন আরো ৩ জন।

মঙ্গলবার সকালে বান্দরবানের রাজভিলা ইউনিয়নের বাঘবাড়া এলাকায় অজ্ঞাত অস্ত্রধারীদের গুলিতে এ হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়। নিহতরা সবাই পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি জেএসএস (এমএন লারমা) সমর্থীত নেতাকর্মী। নিহতদের মধ্যে সংগঠনটির শীর্ষ কয়েকজন নেতাও রয়েছেন। তাদের পরিচয় নিশ্চিত করেছে সংগঠনটি।

নিহতরা হলেন- পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি বিমল কান্তি চাকমা (৬৮), উপদেষ্টা কমিটির সদস্য চিংথোয়াইয়াং মারমা ওরফে ডেভিড (৫৬), বান্দরবান জেলা সভাপতি রতন তঞ্চঙ্গা (৫০), পার্বত্য চট্টগ্রাম যুব সমিতির সদস্য রবীন্দ্র চাকমা (৫০), রিপন ত্রিপুরা ওরফে জয় (৩৫) ও জ্ঞান ত্রিপুরা ওরফে দিপন (৩২)। রতন তঞ্চঙ্গা ছাড়া বাকি সবার বাড়ি খাগড়াছড়ির বিভিন্ন উপজেলায় বলে জানা গেছে।

এ ঘটনায় আহতরা হলেন- নিরু চাকমা (৫০), বিদ্যুৎ ত্রিপুরা (৩৮) এবং প্রু বা চিং মারমা (২৬)। এ ঘটনার জন্য পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি (জেএসএস) সভাপতি ও পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদের চেয়ারম্যান জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় সন্তু লারমাকে দায় করেছে, জেএসএস (এমএন লারমা) সমর্থীতরা। তারা বলছে, পরিকল্পিতভাবে এই হত্যাকান্ড ঘটানো হয়েছে।

জানা যায়, পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির সাংগঠনিক কার্যক্রম বৃদ্ধি করার জন্য গত একমাস ধরে সংগঠনটির কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের সমন্বয়ে একটি দল বান্দরবানে কাজ করছিল। ঘটনার দিন হতাহতরা সবাই বান্দরবান জেলা সভাপতি রতন তঞ্চঙ্গার বাসায় অবস্থান করছিলেন।

সকাল আনুমানিক ৭টার দিকে কয়েকজন নাস্তা সেরে বাইরে বসেছিলেন। অন্যরা মূল ঘর থেকে বেরিয়ে রান্না ঘরে নাস্তা করতে যাচ্ছিলেন। এ সময় দুটি দলে ভাগ হয়ে ১০/১২ জন স্বশস্ত্র সন্ত্রাসী এলোপাথারি গুলি করে পালিয়ে যায়।

পিডিএসও/এসএম শামীম

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
সন্তু লারমা,বান্দরবান,খাগড়াছড়ি
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close