​পাবনা প্রতিনিধি

  ০৩ জুলাই, ২০২০

হিসাব সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর নিয়োগ

পাবনায় ইউনিয়ন পরিষদের ২২ পদে অনিয়মের অভিযোগ

উচ্চ আদালতের নির্দেশ অমান্য করে পাবনার বিভিন্ন ইউনিয়ন পরিষদের ২২টি পদে হিসাব সহকারী কাম কম্পিউটার পদে নিয়োগ ও ইউডিসি উদ্যোক্তাদের অব্যাহতির অভিযোগ উঠেছে জেলা প্রশাসনের বিরুদ্ধে। এতে করে পরিবার নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন ১০ বছর ধরে কাজ করে আসা উদ্যোক্তারা।

এ নিয়ে গত ২৮ জুন রোববার দুপুরে পাবনা প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করেন ভুক্তভোগীদের পক্ষে পাবনা-৩ এলাকার উদ্যোক্তা ফোরামের সাধারণ সম্পাদক শাহীন কাওছার।

অভিযোগে তিনি বলেন, পাবনার চাটমোহর, ভাঙ্গুড়া ও ফরিদপুর উপজেলার সকল ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টারে উদ্যোক্তা হিসেবে তারা ১০ বছর ধরে কাজ করে আসছিলেন। তারা ইউনিয়ন পরিষদের সকল সরকারি দাপ্তরিক কাজসহ নামমাত্র মূল্যে সাধারণ মানুষের সেবা করে প্রদান করছিলেন। তাদের কোনো সরকারি বেতন ভাতা দেওয়া হয়নি। আর এই দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে তাদের সরকারি চাকরির বয়সসীমাও পার হয়ে যায়।

এর মধ্যে ২০১৬ সালে সারাদেশের ইউনিয়ন পরিষদে নতুন পদ সৃষ্টি করে হিসাব সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর নিয়োগ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়। এই প্রজ্ঞাপন জারির পর ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টার জাতীয় ফোরামের কেন্দ্রীয় নেতারা সরকারের সাথে যোগাযোগ করে উক্ত পদে সরাসরি উদ্যোক্তাদের নিয়োগ ও ডিজিটাল সেন্টার জাতীয়করণের দাবি জানান। কিন্তু সেই আবেদন ও দাবি উপেক্ষা করে উদ্যোক্তাদের বাইরে নতুনদের নিয়োগের সিদ্ধান্ত নেয় মন্ত্রণালয়। তার প্রেক্ষিতে ২০১৭ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারি পাবনার ৭৪টি ইউনিয়নের মধ্যে ৪১টি ইউনিয়ন পরিষদে হিসাব সহকারী কাম কম্পিউটার পদে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে জেলা প্রশাসন। এমন অবস্থায় পাবনার উল্লেখিত তিন উপজেলার ২২ জন উদ্যোক্তা উচ্চ আদালতে রিট পিটিশন দায়ের করেন। যার নং ১৫৪৭৫/২০১৭। আদালত রিট পিটিশন নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত নিয়োগ প্রক্রিয়ার উপর স্থগিতাদেশ জারি করেন। কিন্তু উচ্চ আদালতের নির্দেশ অমান্য করে সম্প্রতি নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু করে।

সেইসাথে বাকি ৩৩টি ইউনিয়ন পরিষদের হিসাব সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর নিয়োগের জন্য ২০১৯ সালের ২০ অক্টোবর সংশোধিত নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে। উপায় না দেখে রিটকারীরা তাদের আইজীবীদের মাধ্যমে উচ্চ আদালতে আপিল করে পুরো বিষয়টি তুলে ধরেন। তার প্রেক্ষিতে একই বছরের ২০ নভেম্বর আদালতের বিচারক এফ আর এম নাজমুল আহসান ও কে এম কামরুল কাদের আদেশ দেন—আবেদনকৃত রিটকারীর ২২টি ইউনিয়ন পরিষদের হিসাব সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর পদ সংরক্ষণ করে নিয়োগ কার্যক্রম সম্পন্ন করা হোক। সেইসাথে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে পিটিশনকারীদের চাকরি রাজস্ব খাতে স্থানান্তর ও তাদের নিয়োগ নিজ নিজ ইউনিয়ন পরিষদের হিসাব সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর পদে বহাল রাখা হোক। কিন্তু পাবনার জেলা প্রশাসন আদালতের নির্দেশ অমান্য করে গত ২৫ জুন রিটের ৬টি সংরক্ষিত ইউনিয়ন পরিষদে ৬ জন হিসাব সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর পদায়ন সম্পন্ন করেছেন।

তিনি বলেন, এতে করে পরিবার নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন ১০ বছর ধরে কাজ করে আসা উদ্যোক্তারা। এজন্য নতুনদের নিয়োগকে অনিয়ম উল্লেখ করে সেটি বাতিল করে সেখানে রিটকারীদের নিয়োগের দাবি জানান ভুক্তভোগীরা।

এ বিষয়ে পাবনার জেলা প্রশাসক কবীর মাহমুদ জানান, জেলার ৭৪টি ইউনিয়ন পরিষদের মধ্যে আমরা ৪১টি ইউনিয়নের নিয়োগ সম্পন্ন করেছি। আদালত আমাদের ২৬টি ইউনিয়ন রিজার্ভ রাখতে বলেছেন, আমরা সেটি রেখেছি। আদালতের নির্দেশ মেনে কাজ করেছি। বরং আদালত ২৬টি রিজার্ভ রাখতে বললেও আমাদের আরও বেশি রিজার্ভ রয়েছে। ৩৩টি এখনও ফাঁকা রয়েছে। আদালত যা বলবে আমরা সেটাই মানবো। এখানে অনিয়মের কিছু নেই। খুবই স্বচ্ছতার সাথে যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে এবং সেটি প্রশংসিত হয়েছে।

পিডিএসও/হেলাল

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
অনিয়ম,পাবনা,ইউনিয়ন পরিষদ
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close