রাজশাহী ব্যুরো

  ২৮ এপ্রিল, ২০২০

রাজশাহীতে প্রথম মৃত্যুতেই প্রকাশ পেল করোনা প্রস্তুতির গলদ

রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় করোনায় আক্রান্ত প্রথম ব্যক্তির মৃত্যুর পর বেরিয়ে আসছে অসঙ্গতির তথ্য। করোনা মোকাবেলায় প্রস্তুতির অংশ হিসেবে রামেক হাসপাতালে অন্তত ২১টি ভেন্টিলেটরসহ দুটি নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র (আইসিইউ) প্রস্তুত রাখার কথা বলা হলেও, আক্রান্ত ওই বৃদ্ধ রোগীর জন্য একটিও ব্যবহার করা হয়নি।

করোনা আক্রান্ত শুনেই চিকিৎসকরা দূরে সরে গেছেন। শুধু তাই নয়, তার শরীরে কোভিড-১৯ শনাক্ত হওয়ার পর তাকে স্থানান্তরের জন্যও কোনো ব্যবস্থা ছিল না বলে জানিয়েছেন মৃতের স্বজনসহ হাসপাতালের একাধিক সূত্র।

সূত্র মতে, গত ১৭ এপ্রিল মূত্রথলিতে জ্বালা-পোড়ার সমস্যা নিয়ে রাজশাহীর বাঘা উপজেলা থেকে আসা ৮০ বছর বয়সী কুলা বিক্রেতা আবদুস সোবহানকে হাসপাতালের পঞ্চম মেডিসিন ইউনিটে ভর্তি নেওয়া হয়। পরে তার জ্বর ও শ্বাসকষ্টের সমস্যা থাকায় বুকের এক্স-রে করে। এরপর কোভিড-১৯ আক্রান্ত সন্দেহে নমুনাও পরীক্ষা করা হয়। যে পরীক্ষার রিপোর্টে ২০ এপ্রিল রাতে কোভিড-১৯ পজেটিভ আসে। আর করোনায় আক্রান্ত জানার পরপরই পঞ্চম মেডিসিন ইউনিট থেকে চিকিৎসক-কর্মচারীরা চলে যান। পরদিন চিকিৎসাধীন রোগীদের ছেড়ে দিয়ে ওই ইউনিট তালা বন্ধ করে দেওয়া হয় বলে জানিয়েছেন সেখানে থাকা অন্যান্য রোগী।

জানা গেছে, করোনায় আক্রান্ত ওই বৃদ্ধ তীব্র শ্বাসকষ্টে ভুগছিলেন। জরুরি ভিত্তিতে তার আইসিইউ ও ভেন্টিলেটর সাপোর্ট দরকার ছিল। কিন্তু সে সিদ্ধান্ত দেওয়ার মতো দায়িত্বশীল কোনো চিকিৎসক সেখানে ছিলেন না। অথচ হাসপাতালের ১৫ শয্যার আইসিইউ করোনা চিকিৎসায় ব্যবহৃত হবে, সে সিদ্ধান্ত আগে থেকেই নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু ওই বৃদ্ধকে সেখানে না নিয়ে রামেক হাসপাতালের অধীনে সংক্রামক ব্যাধি হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে আইসোলেশনে রাখার ব্যবস্থা ছাড়া করোনা চিকিৎসায় অন্য কোনো ধরনের সুবিধা ছিল না বলেও জানিয়েছেন মৃতের স্বজনরা।

কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগীকে স্থানান্তরে হাসপাতালের কর্মচারীদের আলাদা একটি দল তৈরি করা হলেও, ওই বৃদ্ধকে স্থানান্তরের সময় কাউকে পাওয়া যায়নি। শুধু মাস্ক পরে রোগীর স্ত্রী ও ছেলে সব ব্যবস্থা করেছেন।

‘কনটাক্ট ট্রেসিং’ করে দেখা যায়, চিকিৎসক, নার্স ও কর্মচারী মিলেয়ে ৪২ জন ওই রোগীর সংস্পর্শে এসেছিলেন। তাদের শহরের বিভিন্ন জায়গায় কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়। হাসপাতালের অন্য চিকিৎসক, নার্স ও কর্মচারীরা বলেন, তারা ওই ৪২ জনের সংস্পর্শে এসেছেন। তাই তাদেরও করোনা পরীক্ষার প্রয়োজন। করোনা পরিস্থিতি মোকাবেলায় কী কী ঘাটতি আছে, সে বিষয়ে তারা দফায় দফায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সভাও করেন।

পরে ২১ ও ২২ এপ্রিল ওই ৪২ জনের নমুনা পরীক্ষার রিপোর্টে দেখা যায়, তারা কেউই আক্রান্ত নন। এরপরই তাদের মধ্যে থাকা অসন্তোষের বিষয়টি সুরাহা হয়।

কোভিড-১৯ আক্রান্ত বৃদ্ধকে আইসিইউতে না নেওয়ার বিষয়ে হাসপাতালের উপপরিচালক সাইফুল ফেরদৌস বলেন, আইসিইউ ব্যবহারে রোগীর স্বজনরা অনাগ্রহ প্রকাশ করেছিলেন।

তবে চিকিৎসকের এমন বক্তব্য সত্য নয় বলে দাবি করে রোগীর ছেলে বলেন, আব্বাকে আইসিইউতে নিয়ে যাওয়ার কোনো ব্যবস্থা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের ছিল না। আইসোলেশনে থাকাকালে তারা আমাকে বলেছিলেন আব্বাকে আইসিইউতে নিতে। এক সপ্তাহ ধরে আমার আব্বা শ্বাস নিতে পারছিলেন না। আমি আর আমার মা কীভাবে আব্বাকে আইসিইউতে নিতে পারতাম?

তিনি আরও বলেন, আমরা কোনো ডাক্তারও পাইনি। হাসপাতালে দায়িত্বরতদের ব্যবহারও খারাপ ছিল। একজন ডাক্তার ২৪ ঘণ্টায় একবার মাত্র জানালা দিয়ে আব্বাকে দেখে চলে যেতেন। আব্বাকে বাঁচানোর কোনো চেষ্টাই কেউ করেননি। আমি আর আমার মা এই রোগকে ভয় না পেয়ে একই ঘরে থাকতাম। শুধু তার মৃত্যুর তিন দিন আগে আমাদের আলাদা থাকার ব্যবস্থা করা হয়েছিল।

তবে বৃদ্ধের কোভিড-১৯ ধরা পড়ার পর তার স্ত্রী-ছেলেরও করোনা পরীক্ষা করা হয়। কিন্তু রিপোর্টে দেখা যায়, তারা আক্রান্ত হননি।

পিডিএসও/হেলাল

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
করোনা,রাজশাহী,অনিয়ম
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close