reporterঅনলাইন ডেস্ক
  ১৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২০

শিশুর শরীরে পচন, ফেলে গেলেন অভিভাবক!

এসএসসি পরীক্ষা কেন্দ্রের বাইরে নিরাপত্তার দায়িত্বপালন করছিলেন চট্টগ্রামের খুলশী থানার সহকারী উপ-পরিদর্শক হিরণ মিয়া। বেলা একটার কিছুটা আগে। পলিটেকনিক্যাল মোড়ে দাঁড়িয়ে ছিলেন তিনি। হঠাৎ লক্ষ্য করলেন একটি অটোরিকশা থেকে কিছু একটা ফেলে দেওয়া হয়েছে। আর দ্রুত চলে গেছে অটোরিকশাটি।

কৌতুলহল বশত, সেইদিকে এগিয়ে গেলেন পুলিশ সদস্য হিরণ মিয়া। দেখলেন, প্রায় নিথর একটি শিশুর দেহ পড়ে আছে মাটিতে। পাশেই কবরস্থান। কিছুটা নির্জন এই জায়গায় কেন শিশুটিকে ফেলে গেল অটোরিকশা! কিছু বুঝে উঠার আগেই পালিয়েছে অটোরিকশাটি। এই কারণে নম্বরটি ভালোভাবে দেখা হয়নি।

তাৎক্ষণিক পালিয়ে যাওয়া অটোরিকশার পিছু না দৌঁড়ে হিরণ মিয়া কোলে তুলে নিলেন প্রায় নিথর শিশুকে। তারপর দ্রুত উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানালেন শিশু সন্তান ফেলে যাওয়ার কথা। এরপর অন্য একটি অটোরিকশা নিয়ে দ্রুত ছুটে গেলেন চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। সেখানে ভর্তি করা হয়। পথিমধ্যে ফেলে যাওয়া এই শিশুর বয়স আনুমানিক ৮-৯ মাস।

সোমবার বেলা ১টায় এই ঘটনা ঘটে। কন্যা শিশুকে ফেলে যাওয়ার এমন লোমহর্ষক ঘটনার পর পুলিশ সদস্য হিরণ মিয়া দেখালেন মানবিকতার অন্যন্য দৃষ্টান্ত। তিনি দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে গেলেন শিশুটিকে। চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ৮ নং ওয়ার্ডে শিশুটিকে ভর্তি করে চিকিৎসা দিচ্ছেন চিকিৎসকরা। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, শিশুর পায়ুপথে কিছুটা পচন ধরেছে। এছাড়া পানিশূন্যতায় ভুগছে শিশুটি। তাকে স্যালাইন দেওয়া হয়েছে। আর পচন ধরা স্থানে চিকিৎসা শুরু করা হয়েছে।

একটি মেয়ে শিশু। বয়স আনুমানিক সাত কি আট মাস! পৃথিবীতে আসার পর বাস্তবতা বুঝে ওঠার আগেই তাকে শিকার হতে হল এক নির্মম বাস্তবতার। চলন্ত সিএনজি অটোরিকশা থেকে শিশুটিকে ছুড়ে ফেলে দেওয়া হয় একটি কবরস্থানের পাশের সড়কে। দেখতে পেয়ে পুলিশ গিয়ে শিশুটিকে উদ্ধার করে। মুমূর্ষু অবস্থায় শিশুটিকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

ঘটনার বিষয়ে সহকারী উপ-পরিদর্শক হিরণ মিয়া বলেন, ‘আমি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে এসএসসি পরীক্ষা কেন্দ্রের দায়িত্বপালন করছিলাম। এই সময় অদূরে কবরস্থানে অটোরিকশা থেকে কিছু একটা ফেলে যেতে দেখি। দ্রুত ছুটে যাওয়ায় অটোরিকশার নম্বর খেলায় করতে পারিনি। কাছে গিয়ে দেখি একটি মেয়ে শিশু জীবন্ত পড়ে আছে। এরপর আমি শিশুটিকে নিয়ে দ্রুত হাসপাতালে ছুটে যাই। এখন শিশুটি ভালো আছে। তাকে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।’

তিনি বলেন, ‘আমি শুধু দায়িত্বপালন করেছি। কতোটা মানবিক হয়েছে সেই বিবেচনার ভার মানুষের। আমি ভবিষ্যতেও এমন ভালো কাজ করতে চাই।’

ঘটনার বিষয়ে খুলশী থানার অফিসার ইনচার্জ প্রণব চৌধুরী বলেন, ‘শিশুটিকে অটোরিকশা থেকে ফেলে যাওয়া হয়েছে। এমন নির্মম ঘটনা আমি কল্পনাও করতে পারছি না। ভাবতেই গা শিউরে উঠছে। কিভাবে সম্ভব? একটি শিশুকে ফেলে যাওয়া?’

তিনি বলেন, ‘চিকিৎসক জানিয়েছেন শিশুটি পানিশূন্যতাসহ কিছু রোগে ভুগছে। এই কারণে অভিভাবকরা শিশুটিকে ফেলে গেছে বলে ধারণা করছি।’

অপহরণ করা হতে পারে কি না? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘এখনো পর্যন্ত যে অবস্থা, তাতে আমাদের মনে হচ্ছে শিশুটিকে ফেলে যাওয়া হয়েছে। তারপরও আমরা পুরো বিষয়ে অনুসন্ধান শুরু করেছি। আশপাশের সব সিসি ক্যামেরার ভিডিও ফুটেজ সংগ্রহ করা হচ্ছে। অটোরিকশাটি শনাক্ত করা গেলে বিস্তারিত তথ্য বেরিয়ে আসবে।’

অন্য এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘শিশুটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছে। আশঙ্কামুক্ত বলে জানিয়েছেন চিকিৎসক। শিশুর চিকিৎসায় সার্বিকভাবে পুলিশ তদারকি করবে। চিকিৎসা ব্যয়ও বহন করা হবে। পাশাপাশি শিশুটিকে যারা ফেলে গেছে তারা অভিভাবক হোক আর সন্দেহভাজন অপহরণকারী হোক-তাদের খুঁজে বের করার চেষ্টা অব্যাহত আছে।’

সূত্র : কালের কণ্ঠ

পিডিএসও/রি.মা

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
শিশু,শরীর,পচন,অভিভাবক,চট্টগ্রাম
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close