শাহজাহান চৌধুরী শাহীন, কক্সবাজার

  ০৯ ফেব্রুয়ারি, ২০২০

কক্সবাজারে অপহরণকারী চক্র : নেপথ্যে বহিষ্কৃত ছাত্রলীগ নেতা

কক্সবাজার শহর ও আশপাশের এলাকায় দিনদিন ভয়ঙ্কর হয়ে উঠেছে অপহরণকারী চক্র। অপহরণের পর মুক্তিপণ আদায়ের ঘটনায় উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছে সাধারণ মানুষ। কক্সবাজার সদরের পিএমখালীতে জাহেদ হোসেন (১৫) নামের এক কিশোরকে অপহরণ ও জিম্মি করে ৬০ হাজার টাকা মুক্তিপণ আদায়ের ঘটনার পর বেরিয়ে আসতে শুরু করেছে অপহরণকারী চক্রের পিলে চমকানো তথ্য।

চক্রটি অপহরণ করে মুক্তিপণ আদায়, ইয়াবা ব্যবসা, মোটরসাইকেল ছিনতাইসহ বিভিন্ন অপরাধে জড়িত থাকায় এসব বিষয়ে চক্রটির বিরুদ্ধে অসংখ্য মামলাও রয়েছে। বিভিন্ন সময় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে আটক হয়ে জেলও খেটেছে। জামিনে বেরিয়ে এসে ফের জড়িয়ে পড়ে এসব অপরাধীরা। রাজনৈতিক পদবীকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে তারা বীরদর্পে চালাচ্ছে অপরাধকর্ম।

পিএমখালী ইউনিয়নের বহিস্কৃত ছাত্রলীগ নেতারা এসব অপরাধের নেপথ্যে রয়েছে বলে অভিযোগ। তবে ৮ ফেব্রুয়ারি প্রেস বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে এসব ছাত্রলীগ নেতাদের বহিস্কার করা হয়েছে।

কক্সবাজার সদরের ঝিলংজা ইউনিয়নের পূর্ব খরুলিয়া ডেইঙ্গাপাড়া এলাকার মনির আহাম্মদের ছেলে ও অপহৃত কিশোর জাহেদ জানায়, গত ৬ ফেব্রুয়ারি বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় লিংকরোড হতে টমটম (ইজিবাইক) যোগে খরুলিয়া নিজ বাড়িতে যাওয়ার উদ্দেশে রওয়ানা দেয়। বাংলাবাজারে পৌঁছার আগেই ছমুদা ব্রিজ সংলগ্ন এলাকায় পিএমখালী ইউনিয়নের বহিষ্কৃত নেতা নুরুল আবছারের ভাই খালেদ মোশারফ ছোটন তাকে কৌশলে তার বাড়ির দিকে নিয়ে যায়।

তিনি আরো জানান, পিএমখালী ইউনিয়নের বহিষ্কৃত ছাত্রলীগ নেতা নুরুল আবছার ও তার কয়েকজন সহযোগী নানা কৌশলে ইজিবাইকযোগে ডিকপাড়া গ্রামের কোনো এক পরিত্যক্ত স্থানে নিয়ে যায়। এসময় ডিকপাড়া এলাকার সোহেল বাবু ও শফিকসহ ৮ জন একটি দল তাকে মারধর করে। পরে তার পায়ে রড দিয়ে পেটায়। এতে জাহেদের বাম পায়ের গোড়ালির হাড় ভেঙে যায়। পরে তারা জাহেদের কাছ থেকে মোবাইল ফোন ও মানিব্যাগ ছিনিয়ে নেয়।

পরবর্তীতে জাহেদের হাত-পা এবং চোখ-মুখ বেঁধে ডিকপাড়াস্থ একটি পরিত্যক্ত টিনশেড ঘরে নিয়ে যায়। ওখানে নিয়ে গিয়ে তাকে প্রাণে মারার হুমকি দিয়ে তার বাড়িতে ফোন দিতে বলে এবং জাহেদকে কিছু অনৈতিক কথাবার্তা শিখিয়ে ও বলিয়ে সেগুলো ভিডিও রেকর্ড করে নুরুল আবছার, খালেদ মোশারফ ছোটন ও তাদের সহযোগীরা।

জাহেদের ভাই সাদ্দাম জানান, বৃহস্পতিবার রাতে ০১৮২৯৬৩২৮৩৬ নাম্বার থেকে তার মোবাইলে ফোন করে জানায়, তার ভাইকে জীবিত পেতে হলে এক ঘণ্টার মধ্যে ০১৯২৩৩০১৩৯৩ নাম্বারে ১০ হাজার টাকা বিকাশে পাঠাতে বলে।

সাদ্দাম জানান, অপহরণকারীদের কথামতো ভাইকে জীবিত ফেরত পেতে ১০ হাজার টাকা ওই নাম্বারে বিকাশে পাঠান। কিছুক্ষণ পর আবার ওই নাম্বার থেকে ফোন দিয়ে খরুলিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের সামনে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের পাশে আরও ৫০ হাজার টাকা পলিথিনে ঢুকিয়ে লাল কাপড় বেঁধে ফেলে দিতে বলে। তাদের কথামতো টাকা জোগাড় করে ফেলে দিলে তার ভাইকে একটি সিএনজিতে উঠিয়ে দেয়। পরে আহত জাহেদ কোনোমতে নিজের বাসায় আসে এবং পরবর্তীতে তাকে হাসপাতালে চিকিৎসা করানো হয়। এই ঘটনায় উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন তারা।

সদরের ঝিলংজা ইউপি চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ নেতা টিপু সোলতান বলেন, অপহৃত কিশোর তার ইউনিয়নের বাসিন্দা। অপহরণকারীরা পূর্বেও বিভিন্ন সময় বিভিন্ন জনকে অপহরণ করে মুক্তিপণ আদায় করার সময় হাতেনাতে ধরা পড়ে কারাভোগ করেছেন। তারা বিভিন্ন সময় একাধিক ব্যক্তিকে চাঁদার জন্য হুমকি-ধমকি দিয়েছে বলে জানান। চেয়ারম্যান টিপু সোলতান আরো বলেন, সংঘবদ্ধ অপরাধী চক্রের বিরুদ্ধে কক্সবাজার সদর মডেল থানাসহ বিভিন্ন থানায় ইয়াবা, চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই ও চাঁদাবাজির একাধিক মামলাও রয়েছে।

জানা গেছে, পিএমখালী ইউনিয়ন ছাত্র লীগ কমিটির সদস্যরা বিভিন্ন অপরাধে জড়িয়ে পড়ায় কমিটি বিলুপ্ত করা হয়েছে। তারা ছাত্রলীগের পদবী ব্যবহার করে অপহরণ, ছিনতাই ও মুক্তিপণ আদায় ও মাদক ব্যবসার মতো ভয়ঙ্কর অপরাধে জড়িত ছিল।

এদিকে, গতকাল শনিবার কক্সবাজার সদর উপজেলা ছাত্রলীগ সভাপতি তানজিম পাশা ও সাধারণ সম্পাদক কাইছারু উল আলম মুন্না চৌধুরী কতৃক সংবাদ মাধ্যমে প্রেরিত প্রেসবিজ্ঞপ্তি সূত্রে জানা গেছে, পিএমখালী ইউনিয়ন ছাত্রলীগ কমিটি মেয়াদোত্তীর্ণ হওয়ায় বিলুপ্ত করা হয়েছে।

কক্সবাজার সদর মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) সৈয়দ আবু মো. শাহাজাহান কবির বলেন, অপহরণ ও মুক্তিপণ আদায়ের ঘটনা থানায় জমা দিয়েছে। ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে পুলিশ। এ বিষয়ে তদন্ত চলছে এবং অভিযুক্তদের আটক করতে পুলিশের প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।

পিডিএসও/তাজ

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
কক্সবাজার,অপহরণকারী চক্র,অপহরণ,ছাত্রলীগ নেতা
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close