মোহাম্মদ শহীদুল ইসলাম, চট্টগ্রাম

  ২২ জানুয়ারি, ২০২০

‘উপকূলীয় বাঁধ-আউটার রিং রোড’ চালু শিগগির

চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) নির্মাণাধীন ‘উপকূলীয় বাঁধ কাম আউটার রিং রোড’ প্রকল্পটি শেষ হওয়ার পথে। এজন্য ব্যয় হবে ২ হাজার ৪২৬ কোটি ১৪ লাখ ৯৫ হাজার টাকা। পতেঙ্গা থেকে ফৌজদারহাট পর্যন্ত চার লেনের সাড়ে ১৭ কিলোমিটার দীর্ঘ রিং রোডটির প্রায় ৯০ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। গত ১৫ জানুয়ারিতে রোডের দুই পাশে অবৈধ স্থাপনা ও দোকানপাট উচ্ছেদ করা হয়েছে। জনসাধারণের চলাচলের জন্য অতি শিগগিরই চালু করা সম্ভব হবে বলে আশা করছেন প্রকল্প সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলীরা।

সিডিএর প্রধান প্রকৌশলী ও প্রকল্পটির পরিচালক কাজী হাসান বিন শামস প্রতিদিনের সংবাদকে বলেন, এসব প্রকল্পের নির্মাণকাজ নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে শেষ করতে গিয়ে রীতিমতো সংগ্রাম করতে হয়েছে। শিগগিরই প্রকল্পের কাজ শেষ করার চেষ্টা অব্যাহত আছে। এরই অংশ হিসেবে গত কয়েক দিন আগে রোডের দুই পাশে প্রায় আধা কিলোমিটার জায়গায় অবৈধ স্থাপনা ও দোকানপাট উচ্ছেদ করা হয়েছে। রাস্তার এসব অংশ স্থাপনা তৈরি করে দীর্ঘদিন দখল করে রেখেছিল প্রভাবশালীরা।

তিনি বলেন, এই সিটি আউটার রিং রোড প্রকল্প সামুদ্রিক জোয়ারের পানি থেকে হালিশহর, পতেঙ্গা থেকে ফৌজারহাট পর্যন্ত উপকূলীয় এলাকাকে রক্ষা করবে। এটি ৩০ ফুট উচ্চতা আর ১০০ ফুট চওড়া বাঁধের ওপরে নির্মিত হচ্ছে। তিনি বলেন, এই রিং রোডে ১১টি স্লুইসগেট রয়েছে এবং শক্তিশালী ঢেউ মোকাবিলা করার জন্য থাকছে এতে সুরক্ষিত প্রাচীর। গত বছরের ১৩ জুলাই পতেঙ্গায় রিং রোডের ওয়াকওয়ের (মানুষ ও পর্যটকদের হাঁটার রাস্তা) ভারি বৃষ্টির কারণে ওয়াকওয়ের কিছু অংশের মাটি সরে যায়।

এজন্য প্রকল্পের কাজ শেষ হতে খানিকটা বিলম্ব হয়েছে। পরে সময় জুন পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। যথাসময়ে প্রকল্পের কাজ সমাপ্ত করার বিষয়টি মাথায় রেখে নানা বাধা উপেক্ষা করে শিগগিরই রিং রোড খুলে দেওয়া সম্ভব হবে বলে আশা করছি। এরই মধ্যে অনানুষ্ঠানিকভাবে যানবাহন চলাচল করতে শুরু করেছে। প্রধান প্রকৌশলী কাজী হাসান বিন শামস আরো বলেন, পানি উন্নয়ন বোর্ডের নকশা অনুযায়ী উপকূলীয় রিং রোড প্রকল্পের কাজগুলো হচ্ছে বিধায় আমরা এককভাবে চাইলেই নকশা পরিবর্তন করতে পারি না। প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হয় গত বছরের জুনে শেষ হলেও এখন আগামী জুন পর্যন্ত দ্বিতীয় দফা সময় বর্ধিত করা হয়েছে। তিনি বলেন, রিং রোডটি চালু হলে নগরীর গুরুত্বপূর্ণ সড়কগুলোয় যানজট নিরসন হবে। পাশাপাশি, চট্টগ্রাম বন্দর থেকে মালবাহী ভারী পরিবহনগুলো সহজভাবে গন্তব্যে পৌঁছতে পারবে।

সিডিএ সূত্র জানায়, সিডিএর স্পেশাল ম্যাজিস্ট্রেট সাইফুল আলম চৌধুরী পরিচালিত অভিযানে অবৈধভাবে গড়ে উঠা ৩ শতাধিক স্থাপনা ও দোকানপাট উচ্ছেদের ফলে রিং রোডে পুরোদমে যানবাহন চলাচলের ক্ষেত্রে এক বড় বাধা দূর হলো। জানা গেছে, সেখানে গড়ে উঠেছিল ছোট-বড় হাজার খানেক দোকানপাট। এসব অবৈধ স্থাপনাগুলোতে অবৈধ মাদক ব্যবসাসহ নানা অসামাজিক কার্যকলাপ চলত।

জানা গেছে, আউটার রিং রোডটি কর্ণফুলী টানেলের সঙ্গে যুক্ত থাকছে, তাই দক্ষিণ চট্টগ্রাম, টেকনাফ, বান্দরবানের লোকজন চট্টগ্রাম শহরের ভেতরে প্রবেশ না করেই ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে প্রবেশ করতে পারবে। ফলে বন্দরনগরী যানজটমুক্ত করতে ভূমিকা রাখবে এ সড়ক। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহসড়কের সীতাকুন্ড অংশ থেকে চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর এলাকা পর্যন্ত চলাচলরত কার্গো পরিবহনের জট বহুলাংশে কমবে।

সিডিএ সূত্র জানায়, ২০১৬ সালের জুলাইয়ে চার লেনের এ সড়কের নির্মাণ কাজ শুরু হয়। প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে সিডিএ। ‘উপকূলীয় বাঁধ কাম আউটার রিং রোড’ নামের এ প্রকল্প ব্যয় ২ হাজার ৪২৬ কোটি ১৪ লাখ ৯৫ হাজার টাকা। এর মধ্যে বাংলাদেশ সরকার ১ হাজার ৭২০ কোটি ১১ লাখ ৮০ হাজার টাকা ও জাপান আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সংস্থা জাপানের (জাইকার) সহায়তার অংশ ৭০৬ কোটি টাকা। প্রকল্পের আওতায় ১৭ দশমিক ৩৫ কিলোমিটার সড়ক নির্মাণ হবে। এর মধ্যে ১৫ দশমিক ২০ কিলোমিটার মূল ও ২ দশমিক ১৫ কিলোমিটার সংযোগ সড়ক। এছাড়া প্রায় সাড়ে ৫ কিলোমিটার ওয়াকওয়ে তৈরি করা হচ্ছে। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান হচ্ছে মেসার্স স্পেকট্রা ইঞ্জিনিয়ার্স লিমিটেড।

পিডিএসও/তাজ

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
সিডিএ,উপকূলীয় বাঁধ,রিং রোড প্রকল্প,চট্টগ্রাম
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close