শাহজাহান চৌধুরী শাহীন, কক্সবাজার

  ২৩ অক্টোবর, ২০১৯

মাতারবাড়ি কয়লা বিদুৎ প্রকল্প নিয়ে দুর্নীতি!

কক্সবাজারের ডিসিসহ ১৬ জনের বিরুদ্ধে মামলা

কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক (ডিসি) মো. কামাল হোসেনসহ ১৬ জনের বিরুদ্ধে ঘুষ গ্রহণসহ দুর্নীতি মামলা দায়ের করা হয়েছে। মহেশখালীর মাতারবাড়ি কয়লাবিদ্যুৎ প্রকল্পের জন্য অধিগ্রহণকৃত জমির ক্ষতিপূরণের টাকা প্রদানে ঘুষ আদায় ও ঘুষ নিয়ে একজনের জমির ক্ষতিপূরণের টাকা অন্যজনকে দেয়ার অভিযোগে বুধবার সিনিয়র স্পেশাল জজ আদালতে মামলাটি দায়ের করা হয়। মামলার বাদী মহেশখালী উপজেলার মাতারবাড়ি ইউনিয়নের সিকদার পাড়ার মরহুম ডা. আমান উল্লাহর ছেলে কেফায়েতুল ইসলাম।

দায়েরকৃত মামলায় জেলা প্রশাসক মো. কামাল হোসেনকে প্রধান আসামি করার পাশাপাশি অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) আশরাফুল আফসার, ভূমি অধিগ্রহণ কর্মকর্তা দেওয়ান মওদুদ আহমদ, অতিরিক্ত ভূমি অধিগ্রহণ কর্মকর্তা মোমিনুল হক ও দেবতোষ চক্রবর্তী, ভূমি অধিগ্রহণ শাখার কানুনগো মিলন কান্তি চাকমা, সার্ভেয়ার কেশব লাল দাস, ইব্রাহিম, সিরাজুল হায়দার ও আবুল খায়ের, ৬ জন স্থানীয় অধিবাসীসহ ১৬ জনকে আসামি করা হয়েছে।

সিনিয়র স্পেশাল জজ আদালতের বিচারক এবং কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ খন্দকার হাসান মো. ফিরোজ মামলাটি আমলে নিয়েছেন। একই সাথে তিনি মামলার বাদী কেফায়েতুল ইসলামের ২০০ ধারায় জবানবন্দিও নিয়েছেন।

মামলার অন্য ৬ আসামি হলেন- মাতারবাড়ীর লাইল্যা ঘোনা এলাকার মো. সেলিম ওরফে সেলিম উদ্দিনের স্ত্রী মনোয়ারা বেগম, ইসলাম মিয়ার ৩ ছেলে-মেয়ে অলি আহমদ, জামাল উদ্দিন ও তাহেরা বেগম, আলী আসকরের ছেলে রোমেনা আফরোজ এবং মাতারবাড়ির মগডেইল এলাকার আবু ছালেক।

বাদীর পক্ষে মামলাটি উত্থাপন করেন কক্সবাজারের দুর্নীতিবিরোধী সিনিয়র আইনজীবী ও কক্সবাজার জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সিনিয়র সহ-সভাপতি মোহাম্মদ জাকারিয়া।

মামলার এজাহারে অভিযোগ তোলা হয়, চলতি ২০১৯ সালের ১৬ এপ্রিল থেকে ২০ এপ্রিল পর্যন্ত সময়ে বাদী জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে মাতারবাড়ি বিদ্যুৎ প্রকল্পের অধিগ্রহণকৃত জমির ক্ষতিপূরণের জন্য গেলে ভূমি অধিগ্রহণ কর্মকর্তা দেওয়ান মওদুদ আহমদের কার্যালয়ে জেলা প্রশাসক মো. কামাল হোসেন, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) আশরাফুল আফসার ও ভূমি অধিগ্রহণ কর্মকর্তা অন্য আসামিদের যোগসাজসে ক্ষতিপূরণের চেক দেয়ার জন্য ৫ লাখ টাকা ঘুষ দাবি করেন।

বাদীর অভিযোগ, তাকে অফিসে বসিয়ে রেখে তাৎক্ষনিক ৫০ হাজার টাকা ঘুষ আদায় করেন এবং ঘুষের অবশিষ্ট টাকা ৭ দিনের মধ্যে দিলে ক্ষতিপূরণের চেক দেয়ার আশ্বাস দেন।

মামলায় উল্লেখ করা হয়, ঘুষ নেয়ার পর বাদীর অধিগ্রহণ হওয়া ৯৪, ৫০৭৯, ৫০৮২ ও ৫০৮৬ দাগের ক্ষতিপূরণের চেকে মনোয়ারা বেগমসহ অন্য ৬ জনের ‘কেনা সম্পত্তি’ দেখিয়ে প্রাপ্য ১৮ লাখ ৩ হাজার ৩১৯ টাকাকে কর্তন করে বাদীকে ৮ লাখ ৭২ হাজার ২৬৯ টাকার চেক প্রদান করা হয়। অবশিষ্ট টাকা মনোয়ারা বেগমসহ অন্য আসামিদের দেয়া হয়।

বাদী কেফায়েতুল ইসলামের দাবি, মনোয়ারাসহ অন্য আসামিদের ক্রয় করা ও দখলীয় জমির দাগ নাম্বার ৫০৪১, যা অধিগ্রহণের আওতায় পড়েনি। অথচ জেলা প্রশাসকসহ অন্য আসামিরা দুর্নীতির আশ্রয় নিয়ে এলাইনম্যান্টের বাইরের জায়গা অধিগ্রহণ দেখিয়ে মনোয়ারা বেগমসহ ৬ আসামিদের কাছ থেকে ৩৫ শতাংশ ঘুষ নিয়ে প্রায় ১৮ লাখ টাকার চেক প্রদান করা হয়েছে।

মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়, বাদী কেফায়েতুল ইসলাম এই অপরাধের বিচার চেয়ে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) ঢাকার সেগুন বাগিচাস্থ সদর দপ্তরে যান। ওখান থেকে তাদের পরামর্শ দেয়া হয় কক্সবাজারস্থ সিনিয়র স্পেশাল জজ আদালতে মামলা করতে।

বাদীর আইনজীবী মোহাম্মদ জাকারিয়া জানান, বাদীর এজাহারটি বিজ্ঞ আদালত গ্রহণ করেছেন। একই সাথে বাদীর জবানবন্দিও গ্রহণ করেছেন। তবে অন্য কোন আদেশ দেয়া হয়নি।

প্রসংগত, মাতারবাড়ি কয়লা বিদুৎ প্রকল্পের অধিগ্রহণকৃত জমির মালিকদের ক্ষতি পুরণে টাকা নিয়ে দুর্নীতি করায় কক্সবাজারের সাবেক জেলা প্রশাসক রুহুল আমিন, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক জাফর আলমসহ অন্যান্যারা দুর্নীতি মামলায় গ্রেফতার হয়ে জেলও খেটেছেন।

পিডিএসও/রি.মা

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
ডিসি কামাল হোসেন,মাতারবাড়ি কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্র,মামলা
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close