কক্সবাজার প্রতিনিধি

  ২৩ অক্টোবর, ২০১৯

৩৫০ পরিবার প্রধান স্বেচ্ছায় তালিকাভুক্ত

সুযোগের আশায় ভাসানচর যেতে রাজি রোহিঙ্গারা

উন্নত আবাসন সুবিধা, চাষাবাদ, মাছ চাষসহ নানা সুযোগ-সুবিধার কথা বিবেচনা করে রোহিঙ্গারা নোয়াখালীর ভাসানচরে যাওয়ার আগ্রহ দেখাচ্ছেন। মনে করছেন, উখিয়া-টেকনাফের ঘিঞ্জি শরণার্থী শিবিরের চেয়ে ওই দ্বীপটিতে আরো স্বাচ্ছন্দ্যে বসবাস করতে পারবেন। পাশাপাশি রয়েছে কাজের সুবিধাও।

পরিকল্পনা অনুযায়ী কক্সবাজারের উখিয়া-টেকনাফে বসবাসরত ১ লাখ রোহিঙ্গাকে ধারাবাহিকভাবে নোয়াখালীর ভাসানচরে স্থানান্তরের প্রক্রিয়া শুরু করেছে সরকার। এরই মধ্যে গত এক সপ্তাহ ধরে উখিয়া-টেকনাফের ৩৪টি রোহিঙ্গা শিবিরে ভাসানচরে যেতে আগ্রহী রোহিঙ্গাদের প্রাথমিক তালিকা তৈরির কাজ শুরু করেছে কক্সবাজার শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনারের কার্যালয়।

সূত্র বলছে, গত সোমবার পর্যন্ত অন্তত ৩৫০ রোহিঙ্গা পরিবার প্রধান স্বেচ্ছায় প্রাথমিকভাবে তালিকাভুক্ত হয়েছেন। আর এই ৩৫০ পরিবারে প্রায় ১ হাজার ৮০০ জন রোহিঙ্গা আছেন বলে জানা গেছে। এদিকে, দুর্যোগ ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী এনামুর রহমান গণমাধ্যমকে বলেছেন, নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহের মধ্যেই টেকনাফ থেকে ৩৫০ রোহিঙ্গা পরিবারের সদস্যদের ভাসানচরে নিয়ে যাওয়া হতে পারে।

কক্সবাজার শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মাহাবুব আলম তালুকদার বলেন, রাখাইনে ফিরে যাওয়ার বিষয়ে রোহিঙ্গাদের অনীহা থাকলেও ভাসানচরে যাওয়ার ব্যাপারে বেশ ভালো সাড়া পাওয়া যাচ্ছে। বিষয়টি খুবই ইতিবাচক। তিনি বলেন, গত ১৬ অক্টোবর থেকে ৩২টি অনিবন্ধিত এবং দুটি নিবন্ধিতসহ ৩৪টি শরণার্থী শিবিরে আগ্রহীদের তালিকা তৈরির কাজ শুরু হয়েছে।

তবে এখন পর্যন্ত কতজন রোহিঙ্গা তালিকাভুক্ত হয়েছেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, তালিকা তৈরির কাজ চলমান রয়েছে। সব ক্যাম্পে এ কাজ চলছে। তাই এ মুহূর্তে সঠিক সংখ্যা বলা যাচ্ছে না। তিনি বলেন, দ্বীপটি সম্পর্কে সবকিছু জেনে রোহিঙ্গারা স্বেচ্ছায় এখানে যেতে আগ্রহ দেখাচ্ছেন। বিষয়টি সরকারের জন্য ইতিবাচক। তিনি এও বলেন, আমাদের লক্ষ্য আপাতত ১ লাখ রোহিঙ্গাকে ভাসানচরে পাঠানো। সে লক্ষ্য ধরেই কাজ চলছে ধারাবাহিকভাবে।

টেকনাফ জাদীমুরা শালবন শরণার্থী শিবিরের ক্যাম্প ইনচার্জ খালেদ হোসেন বলেন, এ ধরনের কাজ অনেক দিন ধরেই চলমান। গত ১৬ অক্টোবর থেকে আবার নতুন করে এ বিষয়ে কাজ শুরু হয়েছে। তবে এবার রোহিঙ্গাদের বেশ ভালো সাড়া পাওয়া যাচ্ছে। এ ছাড়া শুধু জাদীমুরা শিবিরের ৫০ পরিবারের প্রায় ২৫০ জন রোহিঙ্গা তালিকাভুক্ত হয়েছেন জানিয়েছেন তিনি।

তিনি বলেন, ভাসানচরে পাঠানোর সময় খুঁজে নিতে যাতে সমস্যা না হয় সেজন্য একটি ফরমে রোহিঙ্গাদের নাম-ঠিকানা লিপিবদ্ধ করে রাখা হচ্ছে। প্রাথমিকভাবে আমরা রোহিঙ্গাদের কাছে ভাসানচরে কী কী সুবিধা আছে, তা জানাচ্ছি। এর আগে বৈঠক করে মাঝিদের আমরা এ বিষয়ে বিস্তারিত জানিয়েছি। এখন মাঝিরাও সাধারণ রোহিঙ্গাদের বোঝাচ্ছেন। সবকিছু শুনে অনেকেই ভাসানচরে যেতে আগ্রহ দেখাচ্ছেন।

এ কাজ বাস্তবায়নে তথ্য লিপিবদ্ধ করার জন্য একটি ফরম দেওয়া হচ্ছে। ফরমের ওপরে লেখা আছে ‘ভাসানচরে স্থানান্তরে আগ্রহী বাস্তুচ্যুত মিয়ানমার নাগরিকদের তালিকা’। আর এই ফরমটিতে ক্রমিক নম্বর, পরিবার কর্তার নাম ঠিকানা, পরিচিতি নম্বর, পরিবারের সদস্য সংখ্যা, সংশ্লিষ্ঠ মাঝির নাম, মন্তব্যসহ ছয়টি কলাম রয়েছে।

৩, ৪ ও ৪ এক্সটেনশনের ক্যাম্প ইনচার্জ মাহফুজুর রহমান (উপ-সচিব) বলেন, এখান থেকে ভাসানচরে নিয়ে যাওয়ার জন্য আমরা বিভিন্ন কার্যক্রম গ্রহণ করছি। মূলত আমরা তাদের উদ্বুদ্ধ করছি। প্রথমত এখানে মাঝি, মসজিদের ইমাম, কমিউনিটি লিডার এদের নিয়ে মতবিনিময় সভা করছি। এ ছাড়া তাদের আমরা ভাসানচরের ভিডিওটি দেখাচ্ছি এবং সেখানে তারা কী কী সুযোগ-সুবিধা পেতে পারেন সেটা বোঝাচ্ছি-জানাচ্ছি। আর মূলত এখান থেকে তারা সেখানে ভালো থাকবেন সেটা আমরা বলছি। এখানে কাউকে জোর করে কিছু করা হচ্ছে না।

এদিকে, ভাসানচরের ভিডিও দেখে, সবকিছু জেনে, বাড়তি সুযোগ-সুবিধার কথা বিবেচনায় এনে রোহিঙ্গারা নিজেরাই স্বেচ্ছায় সেখানে যেতে রাজি হচ্ছেন। তালিকাভুক্ত হওয়া উখিয়ার কুতুপালং ক্যাম্প ৩-এর ফাতেমা বেগম বলেন, এখানকার ঘরগুলো ছোট ছোট। আমরা মানুষ আছি চারজন। এখানে থাকতে সমস্যা হচ্ছে। ভাসানচর জায়গাটি আমার পছন্দ হয়েছে। তাই আমরা স্বেচ্ছায় সেখানে চলে যাচ্ছি।

পিডিএসও/হেলাল

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
রোহিঙ্গা,ভাসানচর,কক্সবাজার,সুযোগ
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close