বগুড়ার ধুনট উপজেলায় প্রতিমা বিসর্জন বেলায় ইছামতি নদীর তীরে অনুষ্ঠিত হয়েছে বউমেলা। প্রতিবছরের ন্যায় এবারো হাজার হাজার নারীর সমাগমে মুখরিত হয়ে ওঠে মেলা প্রাঙ্গন। ধুনট পৌর এলাকার সরকারপাড়ায় ৬৭ বছরের ধারাবাহিকতায় এবারের মেলা যেন বিজয়ার রঙে রাঙানো ছিল।

মেলা কমিটির তথ্যমতে জানা যায়, ধুনট পৌর এলাকায় সরকারপাড়া গ্রাম ইছামতি নদীর তীরে অবস্থিত। ছাঁয়া সুনিবিড় এ গ্রামে শারদীয় দূর্গা উৎসবের অন্তিম মুহূর্তে এ মেলা বসে। সরকারপাড়া প্রথমনাথ কমল কামিনী দত্ত স্মৃতি পূজা অঙ্গনে ৬৬ বছর যাবত শারদীয় দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হয়। পূজা মণ্ডপের পাশে ইছামতি নদীতে প্রতিমা বিসর্জনের মধ্যে দিয়ে দুর্গা উৎসবের সমাপ্তি ঘটে।

ধুনট সদরের কয়েকটি পূজা মণ্ডপের প্রতিমাগুলো বিসর্জনের দৃশ্য দেখতে ভিড় জমায় স্থানীয় জনসাধারণ। আর এ ভিড়কে কেন্দ্র করে ৬৭ বছর যাবত চলছে বউমেলার এ আয়োজন। হাজারো নারী-পুরুষের সমাগমের মধ্যে নারীদের কেনাকাটায় স্বাচ্ছন্দ তৈরী করতে মেলায় কমিটি শুরু থেকে একটি উদ্যোগ গ্রহণ করেন। বিসর্জনের দিন দুপুর ২টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত মেলার মূল অংশে পুরুষদের প্রবেশ নিষেধ। যার কারনে শুধুমাত্র নারীরা কেন্দ্রীক হওয়ায় মেলাটি বউমেলা হিসেবে পরিচিত পায়।

সরেজমিনে দেখা যায়, সনাতন ধর্মালম্বীদের উৎসব ঘিরে বউ মেলার আয়োজন হলেও অন্যান্য ধর্মালম্বীদের উপস্থিতি ছিল উল্লেখযোগ্য। নারীদের জন্য উন্মুক্ত মেলার মূল অংশ আয়োজক কমিটির স্বেচ্ছাসেবক, আনছার সদস্য ও পুলিশ সদস্যরা আইন-শৃঙ্খলার দায়িত্ব পালন করেন। এছাড়া পুরো মেলা ঘিরে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা নিয়োজিত ছিল। এক দিনের এ মেলায় বসে বারোয়ারি দোকান।

মেলায় বেচাকেনা হচ্ছে খই, মুড়ি, মুড়কি, বাতাসা, জিলাপি সহ নানা রকমের খাবার। ছিলো বাঁশি, বেলুন, ঝুনঝুনি সহ হরেক রকম শিশুতোষ খেলনা। তারা বাঁশিতে পোঁ পোঁ সুর তুলেছে গাল ফুলিয়ে। দর্শনার্থীদের আনন্দচারনায় মুখরিত মেলা প্রাঙ্গন। মেলা থেকে চুরি, দুল, ফিতা, টিপসহ রকমারি প্রসাধনি কিনছে। হাওয়ায় ভাসা রঙ্গিন বেলুন। নব সাজে বধু’র ঘোমটার ফাঁক দিয়ে উঁকি মারছে সিঁথির সিঁদুর। সনাতন ধর্মের দুর্গাপুজাকে ঘিরে সরকারপাড়ায় উৎসবমুখর পরিবেশ। মণ্ডপের আঙ্গিনায় মুহুর্মুহু উলুধ্বনি, শাঁখের আওয়াজ, ঢাক কাঁসরের তালে আরতির নাচ, ধুপের সুরভিত ধোঁয়া, বাতাসে নাড়ু -সন্দেশ-মিষ্টির গন্ধ, সাউন্ড বক্সের হাই ভলিউমে মেলায় উৎসবের আমেজ। ইছামতি নদীতে প্রতিমা বিসর্জন দিয়ে নারীরা বিষাদের জল মুছে নানা রঙ্গের শাড়ীর আঁচলে। প্রতিমা বিসর্জনের বিষাদের সুরের মূর্ছনার মধ্য দিয়ে শেষ হয় মেলা।

সরকারপাড়া সার্বজনীন দূর্গা উৎসব কমিটির সাধারণ সম্পাদক আনন্দ সরকার বলেন, প্রতিবছরই প্রতিমা বিসর্জন উপলক্ষে এ মেলার আয়োজন করা হয়। এখানে সবধর্মের মানুষের সমাগম ঘটে। ঐতিহ্য বজায় রেখে এবারও বউমেলা অসাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে।

পিডিএসও/তাজ