তাজুল ইসলাম পলাশ, চট্টগ্রাম ব্যুরো

  ২৪ আগস্ট, ২০১৯

এগিয়ে চলছে কর্ণফুলী টানেলের কাজ, পাল্টে যাবে চট্টগ্রামের চেহারা

চট্টগ্রামের পতেঙ্গা এলাকায় শুরু হয়েছে দেশের প্রথম টানেল নির্মাণের কাজ। পুরোদমে চলছে মাঠি খননসহ সড়ক নির্মাণের কাজও। এ প্রকল্পটির ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ৯ হাজার ৮৮০ কোটি টাকা। এই টানেলের ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান হিসেবে কাজ করছে চীনের চায়না কমিউনিকেশন এবং কনস্ট্রাকশন কোম্পানি লিমিটেড (সিসিসিসি)। যার প্রথম প্রান্ত থাকবে পতেঙ্গা নেভাল একাডেমিতে অন্য প্রান্ত থাকবে দক্ষিণ চট্টগ্রামের আনোয়ারায়। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে গড়ে উঠবে চট্টগ্রাম শহর থেকে নিরবিচ্ছিন্ন ও যুগপযোগী সড়ক যোগাযোগ। দেশ যুক্ত হবে এশিয়ান হাইওয়ের সঙ্গে।

গত বছরের ২৪ ফেরুয়ারি কর্ণফুলী টানেলের খনন কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ওইদিন তিনি টানেল প্রকল্পের কনস্ট্রাকশন ইয়ার্ড পরিদর্শন করেন। ৩ দশমিক ৪ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের এ টানেলটি পতেঙ্গার নেভাল একাডেমি পয়েন্ট থেকে শুরু হয়ে কাফকো ও সিইউএফএল পয়েন্টের মাঝখান দিয়ে কর্ণফুলী নদীর ওপারে গিয়ে উঠবে।

এ কাজের অগ্রগতি কতোদূর এগিয়েছে জানতে চাইলে প্রকল্প পরিচালক হারুনুর রশিদ চৌধুরী জানান, দ্রুত চলছে নির্মাণের কাজ। ইতোমধ্য ৪০ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। এর ৩৬৫ মিটার অংশে বসানো হয়েছে ৮০টির মতো রিং। ইতোমধ্য প্রকল্পের জন্য ৩৮০ একর জমি টিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে।

নকশা অনুয়ায়ী, টানেলের পূর্ব প্রান্তে পাঁচ কিলোমিটার ও এক কিলোমিটার সংযোগ সড়ক নির্মাণ করা হবে। নদীর তলদেশ থেকে ১৫০ ফুট গভীরে দুটি টিউবে থাকবে যান চলাচলের চার লেনের রাস্তা। দেশের ফাস্ট ট্র্যাক মেগা প্রকল্পের অন্যতম কর্ণফুলী টানেল ২০২২ সালের মধ্যে নির্মাণের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। মিয়ানমার হয়ে প্রস্তাবিত এশিয়ান হাইওয়ের সঙ্গে সংযুক্তিসহ ৭টি গুরুত্বপূর্ণ লক্ষ্যকে এগিয়ে নেয়ার জন্য টানেল নির্মাণের পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। এ ছাড়া টানেলের পশ্চিম ও পূর্ব পান্তে ৫ দশমিক ৩৫ কিলোমিটার এপ্রোচ রোড এবং ৭২৭ মিটার ওভার ব্রিজ সম্পন্ন টানেলটি চট্টগ্রাম শহরের সঙ্গে আনোয়ারা উপজেলাকে সংযুক্ত করবে।

চট্টগ্রাম চেম্বারের সভাপতি মাহবুবুল আলম প্রতিদিনের সংবাদকে বলেন, কর্ণফুলী টানেল যোগাযোগ ও অর্থনীতির ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করবে। পাশাপাশি চট্টগ্রাম বন্দরের সক্ষমতা আরো বেগবান হবে। এই টানেলে বদলে যেতে পারে চট্টগ্রামের চেহারা। অর্থনীতির ক্ষেত্রে ইতিবাচক সাড়া ফেলবে।

বাংলাদেশ ইনল্যান্ড কনটেইনার ডিপোটস অ্যাসোসিয়নের সভাপতি নুরুল কাইয়ুম খান বলেন, কর্ণফুলী টানেল শুধু চট্টগ্রামের জন্য নয় পুরো দেশের অর্থনৈতিতে ইতিবাচক ভুমিকা রাখবে। কিছু ক্ষেত্রে কিছু জটিলতার কারনে কাজগুলো শ্লো হচ্ছে। এগুলো যতো তাড়াতাড়ি সম্ভব নিরসন করে যাতে শেষ করা হয়। ফলে সঠিক সময়ে টানেলের কাজ শেষ হবে।

প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা জানান, চায়নার ‘ওয়ান সিটি এবং টু টাউন’ মডেলের উন্নয়ন পরিকল্পনাকে সামনে রেখে টানেলটি নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। প্রকল্পটির ব্যয় বেড়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় ৯ হাজার ৮৮০ কোটি টাকা। যার মধ্যে বাংলাদেশ সরকারের অর্থ সহয়তা ৩৫০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার এবং চীন সরকারের অর্থ সহয়তা ৭০৫.৮০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। জমি অধিগ্রহণ, সরকারি ট্যাক্স, ভ্যাটসহ কতিপয় অবকাঠামো উন্নয়ন ব্যয় বৃদ্ধি পাওয়ায় প্রকল্প ব্যয় বেড়েছে।

জানা যায়, মোট প্রকল্প ব্যয়ের মধ্যে প্রায় ৪৭৩ কোটি টাকা বাংলাদেশ সরকার বহন করবে। টানেল নির্মাণের মূল ব্যয় চীন সরকার বহন করছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়নের জন্য প্রয়োজনীয় মোট ভূমির পরিমাণ প্রায় ৩৮৩ একর। ইতোমধ্যে প্রায় ২৩২ একর ভূমি ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানকে হস্তান্তর করা হয়েছে। বাকি জমি অধিগ্রহণ প্রক্রিয়া অব্যাহত রয়েছে।

প্রকল্প সূত্রে জানা যায়, গত বছরের ৫ ডিসেম্বর সরকারের এক্সিম ব্যাংকের সঙ্গে বাংলাদেশ সরকারের প্রকল্প ঋণ চুক্তি হয়। সেই অনুযায়ী নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানকেও সরবরাহ করা হয়েছে।

প্রকল্পটি সম্পন্নের সময় ধরা হয়েছে পাঁচ বছর। সে অনুযায়ী আগামী ২০২২ সালে প্রকল্পটির কাজ শেষ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। নদীর তলদেশে খননের জন্য টানেল বোরিং মেশিন (টিবিএম) শিগগির পৌঁছাবে বলে জানা যায়। তা ছাড়া বোরিং এর পূর্ব প্রস্তুতির কাজ বর্তমানে চলছে। ইতোমধ্যে প্রকল্পের প্রায় শতকরা ২৮ শতাংশ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। টানেল প্রকল্পের শহর সংলগ্ন পতেঙ্গা এলাকায় খোলা অংশের দৈর্ঘ্য ২০০ মিটার। খোলা ও কাভার অংশের দৈর্ঘ্য ১৯৫ মিটার। এপ্রোচ রোডের দৈর্ঘ্য ৫৫০ মিটার।

অন্যদিকে নদীর অপর পাড়ে আনোয়ারা এলাকায় টানেলের খোলা অংশের দৈর্ঘ্য ১৯০ মিটার। খোলা ও কাভার অংশের দৈর্ঘ্য ২৩০ মিটার। উক্ত এলাকায় একটি ফ্লাইওভার থাকবে। যার দৈর্ঘ্য ৭২৭ মিটার। এ অংশে এপ্রোচ রোড থাকছে প্রায় ৫ কিলোমিটার। কর্ণফুলী নদীর তলদেশ দিয়ে দেশের প্রথম টানেল হিসেবে তার নানামুখী অর্থনৈতিক এবং সামাজিক গুরুত্ব রয়েছে। এটি শুধু দেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের যোগাযোগ নেটওয়ার্ক গড়ে তুলবে না। এর মাধ্যমে দক্ষিণ চট্টগ্রামের শিল্প কারখানাসহ অর্থনৈতিক বিপ্লব সাধিত হবে বলে বিশেষজ্ঞদের অভিমত।

দেশের প্রধান পর্যটন এলাকাসমূহের মধ্যে কক্সবাজার, সেন্টমার্টিন, বান্দরবানসহ পাহাড়, সমদ্র ও নদীর এ ত্রিমাত্রিক নয়নাভিরাম সৌন্দর্য উপভোগ করতে দেশি-বিদেশি পর্যটকদের সহজতর যোগাযোগ ব্যবস্থার ক্ষেত্রে টানেল মুখ্য ভূমিকা পালন করবে। শুধূ তাই নয়, টানেল বাস্তাবায়ন হলে কমে আসবে চট্টগ্রাম নগরীর যানজট, গড়ে উঠবে বহুমূখী যোগাযোগ ব্যবস্থা।

পিডিএসও/রি.মা

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
কর্ণফুলী টানেল,চট্টগ্রাম
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close