শাহজাহান চৌধুরী শাহীন, কক্সবাজার

  ০৭ আগস্ট, ২০১৯

কক্সবাজারে ৫২টি পশুর হাটে বেড়েছে বেচাকেনা

কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে কক্সবাজার জেলার ৫২টি পশুর হাট জমতে শুরু করেছে। দিনদিন বাড়ছে পশু কেনা বেচা। তবে বেচাকেনা বাড়লেও দাম কমেনি। খামারি ও কৃষকরা বিভিন্ন পশুরহাটে যাচ্ছেন কোরবানির গরু-ছাগল নিয়ে। ভারতীয় এবং মিয়ানমারের গরু নিয়েও হাটে যাচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। এবার কক্সবাজারের বিভিন্ন পশুরহাটে ভারতীয় গরুর আমদানি কম হলেও মহিষের আমদানি মোটামুটি। মিয়ানমার থেকেও প্রচুর গরু আমদানী করা হয়েছে। তবে দেশিয় পশুর বাজার ধরে রাখতে গত সোমবার থেকে সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী মিয়ানমার থেকে কোরবানির পশু আমদানি বন্ধ করে দেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মো: কামাল হোসেন । এতে করে কোরবানির পশু সংকটের আশংকা করা হচ্ছে।

জানা যায়, কক্সবাজারে কোরবানির পশুর হাটগুলোর মধ্যে উল্লে­খযোগ্য- কক্সবাজার খরুলিয়া বাজার, ঈদগাঁহ বাজার, মরিচ্যা বাজার, রামু বাজার, কলঘর বাজার, টেকনাফ, উখিয়া বাজার, গর্জনিয়া বাজার এবং চকরিয়ার গরু বাজারসহ ছোট বড় অন্তত ৫২টি পশুর হাট রয়েছে। এসব হাটের মধ্যে আয়তন ও বেচাকেনায় সদরের খরুলিয়া বাজার সব চেয়ে বড়।

বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা যায়, গরু, মহিষ ও ছাগল নিয়ে বসে আছেন ব্যবসায়ীরা। এবার কোরবানিতে প্রাধান্য পাবে স্থানীয় খামারে পালিত দেশি জাতের গরু-ছাগল। সেদিকে খেয়াল রেখেই হাটে পশু নিয়ে এসেছেন ব্যবসায়ীরা। হাটে পশু যেমন আসছে, তেমনি ভাবে ক্রেতারাও দলবেঁধে আসছেন। তবে অনেক ক্রেতা জানান, অন্যান্য বছরের তুলনায় এবছর পশুর দাম একটু বেশি।

সংশ্লিষ্ট হাটের ইজারাদার ও ব্যবসায়ীরা বলছেন, এবারও কোরবানিতে প্রাধান্য পাচ্ছে স্থানীয় খামারে পালিত দেশি জাতের গরু-ছাগল। কক্সবাজারে এবার চাহিদার চেয়ে প্রায় ৭০ হাজার বেশি কোরবানির পশু থাকায় দাম নাগালের বাইরে চলে গেছে।

প্রাণিসম্পদ বিভাগ ও খামারীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ঈদুল আযহাকে সামনে রেখে এবারও কক্সবাজারের খামারগুলোতে পর্যাপ্ত পরিমাণে গবাদিপশু লালন পালন করা হয়েছে। গো-খাদ্যের দাম বেশি থাকায় এবার খামারিদের খরচ একটু বেশি পড়ছে। ফলে গতবারের তুলনায় এবার গরু-ছাগলের দাম একটু বেশি পড়বে বলেও জানান তারা।

গতবছর কক্সবাজারে চাহিদার চেয়ে কোরবানির পশুর পরিমাণ বেশি ছিল। যে কারণে শেষের দিকে এসে অনেক খামারিকে লোকসান দিয়ে পশু বিক্রি করতে হয়েছে। এরকম বেশকিছু খামারি লোকসানের কারণে এ ব্যবসা ছেড়ে দিয়েছেন। যারা অধিক খরচ করে খামার টিকিয়ে রেখেছেন, তারা এবার লোকসান কাটিয়ে উঠতে পারবেন কিনা এ দুশ্চিন্তায় রয়েছেন। কক্সবাজারে কোরবানির বড় পশু হাটগুলোর মধ্যে রয়েছে খরুলিয়া বাজার, ঈদগাঁহ বাজার, মরিচ্যা বাজার, উখিয়া বাজার, রামুর বাজার ও চকরিয়া বাজার।

কক্সবাজারের সবচেয়ে বড় খরুলিয়া বাজারের গরু ব্যবসায়ীরা বলেন, মাংসের বাজার হিসাবে কোরবানির গরুর দাম এখনো কমই রয়েছে। তারা বলেন, ছোট আকৃতির গরু এখন ৫০ থেকে ৬০ হাজার টাকায় মিলছে, মাঝারি আকৃতির গরুর দাম ৭০ থেকে ১ লাখ টাকার মধ্যে এবং বড় গরু ১ লাখ ২০ হাজার টাকার মধ্যে পাওয়া যাচ্ছে।

খরুলিয়া বাজারের ইজারাদার শালেক বলেন, কয়েক মাস হলো ভারত থেকে গরু এসেছে কম। মিয়ানমার থেকেও গরু আমদানী হয়েছে। বর্তমানে ঈদ উপলক্ষে চট্টগ্রামসহ আশপাশের জেলা ও উপজেলার বিভিন্ন খামার থেকে কোরবানির গরু আসছে। তবে এখনও দাঁতালো (কোরবানির উপযোগী) গরুর সংখ্যা কম। যাদের বাসায় গরু রাখার জায়গা আছে, কেবল তারাই এখন দামে সুবিধা হলে গরু কিনে নিয়ে যাচ্ছেন।

কক্সবাজার প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা ডাঃ মোহাম্মদ ওয়াহিদুল আলম জানান, ইতোমধ্যে কোরবানির পশু নিয়ে বিভিন্ন ধরনের কর্ম পরিকল্পনা চলছে। কক্সবাজারের জেলার জন্য চলতি বছর কোরবানীর পশুর চাহিদা (গরু, ছাগল, ভেড়া, মহিষ) ১ লাখ ৫ হাজার। কক্সবাজারে স্থানীয় পর্যায়ে ১ লাখ ৮ হাজার পশু মজুদ আছে। হয়তো আরো বেশি হতে পারে। তবে একটা কথা আমরা দাবী নিয়ে বলতে পারি, কোরবানির জন্য পশুর সংকট হবে না।

তিনি আরো বলেন, কক্সবাজারে চলতি বছর ৫২ টি কোরবানির পশুর বাজার বসবে এবং পশুর রোগ বালাই দেখতে ১৬ টি মেডিকেল টিম মাঠ পর্যায়ে কাজ করছে।

কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মো: কামাল হোসেন জানান, দেশিয় পশুর বাজার ধরে রাখতে মিয়ানমার থেকে সকল প্রকার গবাদি পশু আমদানি মঙ্গলবার থেকে বন্ধ রাখা হয়েছে। এতে করে স্থানীয় খামারিরা ন্যায্যমূল্যে পশু বিক্রি করতে পারবে। উৎসাহিত হবে স্থানীয় গরু ব্যবসায়ীরা। জমে উঠবে স্থানীয় পশুর বাজার। মিয়ানমার থেকে পশু আসলে স্থানীয় খামারি ও ব্যবসায়ীরা ক্ষতির সম্মুখীন হবে। তাই দেশীয় পশুর বাজার ধরে রাখতে সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী মিয়ানমার থেকে পশু আমদানি বন্ধ রাখা হয়েছে। বৈরি আবহাওয়ার কারণে এবার ৩ আগস্ট মিয়ানমার থেকে টেকনাফ করিডোর দিয়ে কোন পশু বাংলাদেশে আসেনি।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, প্রতিবছর মিয়ানমার থেকে প্রচুর পরিমাণ কোরবানির পশু আমদানি করা হয়। মিয়ানমারের পশু এবং স্থানীয় খামারিদের পশু নিয়ে কোরবানি করতো কক্সবাজারের স্থানীয়রা। তখন রোহিঙ্গাদের চাপ ছিল না। ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট রোহিঙ্গাদের ঢল কক্সবাজার জেলায় আসা শুরু হলেও সেই বছর তেমন চাপ পড়েনি। তবে ২০১৮ সালে রোহিঙ্গাদের বিশাল জনগোষ্ঠী উখিয়া টেকনাফে কোরবানি দেয়। সেই বছর মিয়ানমার থেকে প্রায় ১৮ হাজারের বেশি গরু আমদানি করা হয়। এতে টেকনাফ উখিয়াসহ পুরো জেলায় কোন পশুর সংকট দেখা দেয়নি।

জানা গেছে, টেকনাফ ও উখিয়ার প্রায় ৫ লাখ স্থানীয়দের জন্য কোরবানির পশুর প্রয়োজন প্রায় ১৩ থেকে ১৫ হাজার। আর ১১ লাখ রোহিঙ্গাদের জন্য প্রয়োজন ১৭ থেকে ২২ হাজার পশু। স্থানীয় এবং রোহিঙ্গাদের জন্য ৩০ হাজার থেকে ৩৭ হাজার পশু লাগবে। কিন্তু উখিয়া টেকনাফে স্থানীয় খামারিদের কাছে পশু রয়েছে ১০ থেকে ১২ হাজার পশু। আরো প্রয়োজন হতে পারে ২০ থেকে ২৫ হাজার পশু। এর মধ্যে মিয়ানমার থেকে পশু আমদানি হয়েছে ১২ হাজার ৭১৭ টি। ফলে উখিয়া টেকনাফের সংকট মেটাতে পশুর প্রয়োজন আরো কমপক্ষে ১৩ হাজার। এই অবস্থায় মিয়ানমার থেকে আমদানি বন্ধ করে দেয়ায় কোরবানির পশুর সংকট দেখা দেবে। এই সুযোগকে পুঁজি করে স্থানীয় অসাধু খামারি ও ব্যবসায়ীরা বাড়িয়ে দিয়েছে পশুর দাম।

পিডিএসও/রি.মা

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
কক্সবাজার,পশুর হাট
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close