প্রতিদিনের সংবাদ ডেস্ক

  ১৬ জুলাই, ২০১৯

আরো নতুন এলাকা প্লাবিত

২২ জেলায় বন্যা ছড়িয়ে পড়ার শঙ্কা

পাহাড়ি ঢল ও টানা বর্ষণ অব্যাহত থাকায় দেশের ১৫টি নদীর পানি বইছে বিপৎসীমার ওপর দিয়ে। পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) বলছে, আগামী তিন থেকে চার দিনের মধ্যে দেশের ২০ থেকে ২২টি জেলায় বন্যা ছড়িয়ে পড়তে পারে। বুধবারের মধ্যে এসব জেলার বন্যা পরিস্থিতি আশঙ্কাজনকভাবে অবনতি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

তবে বৃষ্টি বা উজানের ঢল বন্ধ হলে কিছুদিন স্থির থেকে পানি স্বাভাবিকভাবে কমতে থাকবে। কিন্তু এর উল্টোটা হলে এই শতকের সবচেয়ে বড় বন্যা হতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা। যদিও পাউবো মাঝারি মানের বন্যার সম্ভাবনা দেখছে।

অব্যাহত বৃষ্টি আর উজানের পানিতে নদী তীরবর্তী বেশির ভাগ জনপদ তলিয়ে গিয়ে বড় বন্যার সৃষ্টি হয়েছে। বন্যাকবলিত এসব এলাকায় জনবসতি তলিয়ে গিয়ে খাবার পানির সংকটসহ তীব্র মানবিক বিপর্যয় দেখা দিয়েছে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশে পাউবোর বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র।

বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র জানাচ্ছে, সুরমা নদী সিলেটের কানাইঘাটে বিপৎসীমার ১১০ সেন্টিমিটার, সিলেটে ৬১ সেন্টিমিটার এবং সুনামগঞ্জে ৭৯ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এই বিভাগের অন্য নদীর মধ্যে কুশিয়ারা নদী অমলশীটে ১৪৬ সেন্টিমিটার, শ্যাওলায় ৯৫, সিলেটের শেরপুরে ৫১, মনু নদী রেলওয়ে ব্রিজে ৪৮, মৌলভীবাজারে ৮৪, ধলাই নদী কমলগঞ্জে ১৯, খোয়াই নদী বাল্লায় ১০৩, হবিগঞ্জে ১০ এবং পুরাতন সুরমা দিরাইয়ে বিপৎসীমার ৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

সারা দেশে বিপৎসীমায় ছাড়িয়ে যাওয়া নদীগুলোর মধ্যে সোমেশ্বরী নদী কমলাকান্দায় ৬৫ সেন্টিমিটার, কংস নদী ৪৩, ধরলা নদী কুড়িগ্রামে ১০৮, তিস্তা নদী কাউনিয়ায় ১৬, ঘাঘট নদী গাইবান্দায় ৬৮, ব্রহ্মপুত্র নদী নুনখাওয়ায় ৭১, চিলমারীতে ১০২, যমুনা নদী ফুলছড়িতে ১০৬, বাহাদুরাবাদে ১১৯, সারিয়াকান্দিতে ৭৯, কাজীপুরে ৪৫, সিরাজগঞ্জে ১৬, সাঙ্গু নদী বান্দরবনে ৪০ এবং দোহাজারীতে ১০০ সেন্টিমিটার বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

এগুলো ছাড়া অন্য নদ-নদীর পানি বিপৎসীমার নিচ দিয়ে বইছে বলে গণমাধ্যমকে জানিয়েছে বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র। এর মধ্যে সুরমা ও কুশিয়ারা নদীর পানি স্থিতিশীল থাকলেও দেশের সব নদ-নদীর পানি বাড়ছে। আগামী ৭২ ঘণ্টায় ব্রহ্মপুত্র, যমুনা, গঙ্গা ও পদ্মা নদীর পানি বৃদ্ধি পেতে পারে। নদ-নদীগুলোর ৯৩টি পয়েন্টের মধ্যে ২৫টি পয়েন্টে পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করেছে। এসব নদীর পানি দিনে তিন থেকে চার ইঞ্চি করে বাড়ছে।

এখনো পর্যন্ত দেশের ১৬টি জেলায় বন্যার পানি ঢুকেছে বলে জানিয়েছে বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র। বন্যায় ডুবে যাওয়া জেলাগুলোর মধ্যে কুড়িগ্রাম, জামালপুর, গাইবান্ধা, বগুড়া, সিরাজগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও দিনাজপুর জেলার বন্যা পরিস্থিতি আরো অবনতি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানিয়েছে পাউবোর প্রধান প্রকৌশলী মঞ্জুর হাসান। অপরদিকে নেত্রকোনা, সুনামগঞ্জ ও সিলেট জেলার বন্যা পরিস্থিতি স্থিতিশীল থাকলেও লালমনিরহাট, চট্টগ্রাম, বান্দরবান জেলায় বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হবে।

এদিকে বন্যাকবলিত এলাকায় কয়েক লাখ মানুষ বিশুদ্ধ পানি, জ্বালানি ও খাদ্যসংকটে রয়েছে। বন্যাকবলিত এলাকার সড়কগুলো পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় মানুষকে কলাগাছের ভেলা ও ছোট নৌকায় চলাচল করতে হচ্ছে। ফলে এসব এলাকায় খাদ্যসংকট আরো তীব্র হচ্ছে। বন্যাকবলিত জেলাগুলোতে ঘরবাড়ি ও ফসলের মারাত্মক ক্ষতি হয়েছে। খামারিরা বিপাকে পড়েছেন তাদের পোষা গবাদিপশু ও হাঁস-মুরগি নিয়ে। পুকুর ও জলাশয়গুলো ডুবে যাওয়ায় মৎস্যচাষিরা বড় অংকের লোকসানের মুখে পড়েছেন।

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা জানান, দুর্যোগ মোকাবিলায় সরকার বড় রকমের প্রস্তুতি নিয়ে ফেলেছে। বন্যাকবলিত এলাকাগুলোতে শিগগিরই ব্যাপক আকারে ত্রাণ ও জরুরি ওষুধসেবা পৌঁছে দেওয়া হবে। তবে কয়েকটি এলাকায় এরই মধ্যে ত্রাণসেবা পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। পানিবাহিত রোগ মোকাবিলায় স্থানীয় চিকিৎসকদেরও যথাযথ নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

পিডিএসও/হেলাল

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
বন্যা,ভারী বর্ষণ,এলাকা প্লাবিত
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close