রাকিবুল ইসলাম রাকিব, গৌরীপুর

  ০৬ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯

‘চেহারা দেখলেই কইতারি—কে চোর কে ভদ্রলোক’

ছোটবেলায় মা-বাপ মইর‌্যা গেছে। লেহাপড়া কিছ্ইু করি নাই। মাইনষ্যের বাড়িত কাইজ-কাম কইর‌্যা বড় অইছি। অহন বয়স অইছে। গায়ে গতরে আগের মতো খাটতে পারি না। কিন্তু ঘরে বইয়্যা থাকলে খাওয়াইবো কেডা?। হেরলেইগ্যা ৭ বৎস্যর আগে নাইটগার্ডের (নৈশপ্রহরী) চাকরি লইছি। তহন থেইক্যা আমার রাইতের ঘুম হারাম। একলা একলা সজাগ থাইক্যা শহর পাহাড়া দেই। তয় আল্লার রহমতে এই ৭ বৎস্যরে আমারে কিনু বালা-মুছিবতে পায় নাই।

প্রতিদিনের সংবাদের সঙ্গে কথাগুলো বলছিলেন গৌরীপুর পৌর শহরের নৈশপ্রহরী জহুর আলী (৬৬)। তার বাড়ি পৌর শহরের গাওগৌরীপুর মহল্লায়। বাবার নাম মৃত বাবর আলী।

৬ ফেব্রুযারি মঙ্গলবার রাত ১২টায় জহুর আলীর দেখা মিলে পৌর শহরের মধ্যবাজার এলাকায়। তার পড়নে খাকি প্যান্ট-শার্ট। গায়ে জড়ানো ময়লা ওয়েস্ট কোর্ট। মুখ মাফলারে বাধা। এক হাতে বর্শা ও আরেক হাতে টর্চ লাইট। সড়কের একমাথা থেকে আরেক মাথায় যাওয়া-আসা করছে। অপরিচিত কাউকে দেখলেই টর্চ মেরে গতিরোধ করে নাম-পরিচয় জানতে চাইছেন।

সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে জহুর আলীর সঙ্গে কথা হয় এ প্রতিবেদকের। প্রতিদিনের সংবাদকে তিনি বলেন, নাইটগার্ডের চাকরি অত সহজ না। মেলা মাইনষ্যের জান-মাল দেইখ্যা-হুইন্যা রাখতে হয়। লোকজন আমার ওপরে বিশ্বাস কইর‌্যা দোকান-ঘরে মালামাল রাইখ্যা ঘুমাইতে যায়। আমি জানবাজি রাইখ্যা পাহারা দেই। রাইতের বেলায় কত কিছিমের মানুষ রাস্তা-দিয়া আনাগোনা করে। তয় আমি চেহারা দেখলেই কইতারি, কে চোর আর কে ভদ্রলোক।

দাম্পত্য জীবনে জহুরের স্ত্রী ও তিন ছেলে রয়েছে। এরমধ্যে বড় দুই ছেলে ইজিবাইক চালায়। ছোট ছেলে মাদরাসাতে পড়ে।

প্রতিদিন রাত ১০টা থেকে ভোর ৬টা পর্যন্ত পৌর শহরের মধ্যবাজার, সিনেমাহল রোড, গোবিন্দবাড়ি সড়ক ও হারুন পার্ক এলাকায় নৈশপ্রহরীর দায়িত্ব পালন করেন জহুর। অন্ধকার রাতে তিনি একা একা সড়কের অলিগলি দিয়ে ঘুরলেও ভয়-ডর তাকে স্পর্শ করে না। তবে মাস শেষে তিনি যে ৪ হাজার টাকা বেতন পান সেটা দিয়ে সংসার ও ছোট ছেলের পড়াশোনার খরচ চালাতে কষ্ট হয়।

প্রতিদিনের সংবাদকে জহুর আলী বলেন, ৭ বৎস্যর চাকরি কইরাও বেতন বাড়লো না। আমরার কাছে অহন চইত-কার্তি বারো মাসই হমান। মেঘের মইধ্যে বৃষ্টিত ভিইজ্যা, শীতের মইধ্যে কুয়াশাত ভিইজ্যা পাহারা দেই। কয়দিন কমান্ডার সাবরে কইলাম রাইতে মেলা শীত পড়ে, আমরারে একটা কইরা কম্বল দেইন। কমান্ডার সাব কয়, কম্বল দিলে ঝামেলা আছে, পরে আর ঠিকঠাক পাহারা দিবার পারবা না। অহন শীত লাগলে কাগজ টুকাইয়্যা আগুন জ্বালাইয়্যা শইল গরম করি।

এরই মাঝে ঘড়ির কাটায় রাত সাড়ে ১২টা বেজেছে। জনশূন্য হয়ে গেছে শহরের সড়ক। এমন সময় মধ্যবাজার সড়কের মরিচমহলে লুঙ্গি পরিহিত এক যুবককে দেখে তার গতিরোধ করে জহুর। মুখে টর্চ মেরে ধমকের সুরে জিজ্ঞেস করেন—অই তোমার বাড়ি কই, রাইতের বেলা এনো ঘুরাঘুরি করতাছো কে? জহুরের কথায় থমকে গিয়ে ওই যুবক বলেন, আরে ভাই আমার বাড়ি কোনাপাড়া। গাড়িত কইর‌্যা মাল আনছি, নামানির জায়গা খুঁজতাছিলাম।

পিডিএসও/হেলাল

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
নৈশপ্রহরী,নাইটগার্ড,চেহারা,চোর,ভদ্রলোক
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close